Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Stress Relieving Food

করোনা আবহে বাড়ছে উদ্বেগ, মন ভাল রাখতে এ সব খাবার খেতেই হবে

উদ্বেগ বাড়ছে? প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। বদল আনুন ডায়েটে।

ডায়েটে থাক এ সব খাবার। কমবে উদ্বেগ। ছবি: শাটারস্টক থেকে নেওয়া।

ডায়েটে থাক এ সব খাবার। কমবে উদ্বেগ। ছবি: শাটারস্টক থেকে নেওয়া।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ১০:৫২
Share: Save:

কোভিড হবে কিনা, হলে কী হবে, চাকরি থাকবে কিনা, ব্যবসা চলবে কিনা, প্রিয়জন সুরক্ষিত কিনা, করোনা আবহে ইত্যাদি চিন্তায় উড়ে গেছে রাতের ঘুম। চিন্তা করে সমাধান মিলবে না জানার পরও উদ্বেগের কমতি নেই। বিশেষজ্ঞরা যোগা, মেডিটেশন করতে বলছেন। ভয় দেখাচ্ছেন এই বলে যে বাড়াবাড়ি উদ্বেগ নিয়ে বসে থাকলে মাস ছয়েকের মধ্যে জিএডি বা জেনারেলাইজড অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার হতে পারে, তখন তাকে সারাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, কিন্তু উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে যেমনকার তেমন। বরং ভয় বাড়ছে, আবার জিএডি হবে না তো!

“উদ্বেগের বিপদ এটাই, মানুষ দিনে দিনে এত নেগেটিভ হয়ে যান যে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তাঁর যা হবে, সব খারাপই হবে। “ভাল”-র মধ্যেও “খারাপ” খুঁজে বার করেন। গতের বাইরে কিছু এলে সামলাতে পারেন না। রিল্যাক্স করতে পারেন না। ভুল সিদ্ধান্ত নেন। খিটখিট করেন, খুঁতখুঁত করেন। পরের পর্যায়ে গ্রাস করে চরম অস্থিরতা, অমনোযোগ, দুঃখ, আতঙ্ক, অনিদ্রা। ফলে এক সময় আর মাথা কাজ করে না।

এ সময় কিছু শারীরিক উপসর্গও হয়। যেমন, গা-বমি, মাথাব্যথা, হাত-পা কাঁপা, বুক ধড়ফড়, বুকে চাপ। জীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে পরিবারের অন্যদেরও। কাজেই নিজের বা অন্য কারও মধ্যে বাড়াবাড়ি উদ্বেগ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন।” জানালেন মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: করোনা ভাইরাস কি শক্তি হারাচ্ছে? জল্পনায় জল ঢাললেন চিকিৎসকরা

উদ্বেগে ভূমিকা রয়েছে খাবারেরও

ডিজঅর্ডারের পর্যায়ে পৌঁছে গেলে অনেক কিছু লাগে। সাইকো থেরাপি, বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, ওষুধ। জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হয়। শিখতে হয় রিল্যাক্স করা ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার নিয়ম।

গোড়াতে সতর্ক হলে যদিও সহজেই সমস্যা সমাধান সম্ভব । সচেতন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলে ও যোগা-মেডিটেশন-ব্যায়াম ইত্যাদি করতে পারলে মন হালকা হয়। উদ্বেগ কমাতে কিছু খাবারেরও ভূমিকা আছে।

ডায়েটে কোন কোন দিকে নজর রাখতে হবে

ভিটামিন ই-র অভাব হলে উদ্বেগ ও মন খারাপ বাড়তে পারে। সে অভাব মেটাতে নিয়মিত বাদাম খান। বিশেষ করে ব্রাজিল নাট ও কাঠবাদাম বা আমন্ড। ব্রাজিল নাটে আছে সেলেনিয়াম নামের খনিজ। লাগাতার উদ্বেগে শরীরে যে প্রদাহ বাড়ে তা কমাতে পারে। তবে দিনে ৩-৪টের বেশি নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কম খান, তাঁদের মুড ডিজঅর্ডার বেশি হয়। কাজেই সপ্তাহে অন্তত দু-বার তৈলাক্ত মাছ খান। খান সয়াবিন, আখরোট, তিষির বীজ, শিয়া বীজ। কড লিভার অয়েলও খেতে পারেন।

জার্নাল অফ আফেকটিভ ডিসঅর্ডারে প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে অবসাদের আশঙ্কা বাড়ে। কাজেই দিনে ২০-৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগানো জরুরি। তার পাশাপাশি খান তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কড লিভার অয়েল। প্রয়োজনে সাপলিমেন্ট খেতে হতে পারে।

আরও পড়ুন: থাকতে হচ্ছে হোম কোয়রান্টিনে? জেনে নিন কী ভাবে থাকবেন, কী করবেন​

ট্রিপ্টোফানের উপস্থিতিতে শরীরে সেরেটোনিন নামে মন ভাল করার হরমোন বেশি বেরোয়। ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে উদ্বেগ, অনিদ্রা কমাতে সে সিদ্ধহস্ত। কাজেই ডিম, চিকেন, চিজ, মাছ, চিনেবাদাম, কুমড়ো বীজ, তিল, দুধ, কলা ইত্যাদি খান মাত্রা রেখে। কুমড়োর বীজে পটাসিয়াম ও জিঙ্ক আছে। দুই-ই মুড ডিজঅর্ডারের মহৌষধ। কলার পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রিল্যাক্স করতে সহায়তা করে।

দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে ফ্ল্যাভেনয়েড, ট্রিপ্টোফান, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির প্রভাবে মন ভাল থাকে। তবে তাতে কোকোয়ার পরিমাণ যেন ৭০ শতাংশের বেশি থাকে।

হলুদের কারকিউমিন প্রদাহের প্রবণতা কমায়। ফলে মনও শান্ত হয়। উপরি পাওনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়া, যা এই মুহূর্তে খুবই দরকার।

চ্যামোলিন চা মন হালকা করে। এর জীবাণুনাশক গুণ আছে। আছে প্রদাহ কম রাখার ক্ষমতা। কাজেই করোনা ঠেকাতেও এর ভূমিকা আছে। এর স্বাদ-গন্ধ ভাল না লাগলে গ্রিন টি-ও খেতে পারেন। কাজ একই হবে।

আরও পড়ুন: কোভিড হানা কমেনি, বর্ষায় ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে এ সব বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে​

ঘরোয়া টক দই বা দোকানের ইয়োগার্টে আছে উপকারি জীবাণু, ল্যাক্টোব্যাসিলাস ও বাইফিডোব্যাকটেরিয়া। এরা পেট যেমন ভাল রাখে, ব্রেনের সুস্থতার মূলেও এদের হাত আছে। প্রদাহ কমায় বলে মনও ভাল থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE