Advertisement
০২ মে ২০২৪
Blue Zone Diet

বাঁচার মতো বাঁচুন

ব্লু জ়োন ডায়েট অনুসরণে গড় আয়ু বাড়ে মানুষের। হেসে খেলে মানুষ সুস্থ থাকতে পারে দীর্ঘ দিন।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ ০৯:১১
Share: Save:

শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে, তা-ই সয়... এ কথা যেমন ঠিক, তেমনই সুস্থ থাকতে নিয়ম মানাও জরুরি। মানুষের নানাবিধ শারীরিক সমস্যার পিছনে দায় যেমন পরিবেশের, তেমনই খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন রুটিনও অনেকাংশে দায়ী। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কী খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন, কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন... স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সে বিষয়গুলোও জরুরি। আসলে নিয়ম মেনে চললেও, খামতি থেকেই যায়। তার ফলেই শরীরে বাসা বাঁধে কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, গ্যাস, অম্বলের মতো সমস্যা।

অথচ এই বিশ্বেই এমন পাঁচটি জায়গা রয়েছে যেখানে মানুষের গড় আয়ু অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের তুলনায় অনেকটাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লু জ়োন বলে পরিচিত সেই অঞ্চলের মানুষদের খাদ্যাভ্যাসেই লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ সময় জুড়ে সুস্থ ও কার্যক্ষম থাকার রহস্য।

ব্লু জ়োন

গত বছর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘লিভ টু হান্ড্রেড – সিক্রেট অব দ্য ব্লু জ়োনস’। তার পর থেকেই চর্চার শীর্ষে এই অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস। অবশ্য তার আগেও এই এলাকার মানুষদের নিয়ে লিখেছেন বিখ্যাত লেখক ডান বুয়েটনার। কিন্তু আদতে এই ব্লু জ়োন কোনটি? কী এমন থাকে সেই সব অঞ্চলের মানুষের খাদ্যতালিকায়? জাপানের ওকিনাওয়া, ইটালির সার্ডিনিয়া, কোস্টারিকার নিকোইয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং ক্যালিফর্নিয়ার লোমা লিন্ডা—এই পাঁচ জায়গা হল বিশ্বের ব্লু জ়োন। সিঙ্গাপুর এই তালিকায় নবতম সংযোজন। জীবনধারণ সম্পর্কে ভীষণ সচেতন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। খাদ্যতালিকায় তারা রাখে তাজা শাকসবজি, ফল। নিয়মিত শারীরচর্চার পাশাপাশি সকলের সঙ্গে বজায় রাখে সুসম্পর্ক। ফলে ক্যানসার, ডায়াবিটিস, ওবেসিটি, হৃদ্‌রোগের মতো সমস্যা এখানে খুবই কম।

  • এখানে মানুষরা উদ্ভিদজাত খাবার বেশি খায়। তাদের রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকে নানা ধরনের শস্য, শাকসবজি, মরসুমি ফল, বাদাম, সিডস ইত্যাদি। মাছ, মাংস তুলনামূলক ভাবে কম খায় তারা। চিনি, প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত যে কোনও খাবার, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলে তারা।
  • পেট ভরে খাওয়া বা খেয়ে হাঁসফাঁস করা নয়, সবসময়ই অল্প পরিমাণে খাওয়া। কুড়ি শতাংশ খাবার জায়গা পেটে সবসময়ই খালি থাকবে।
  • সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, নিজেদের কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত শারীরচর্চা জরুরি।
  • সুস্থ থাকতে পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুব জরুরি। এর ফলে মনে আনন্দ থাকে, শরীরও সুস্থ থাকে।

কিন্তু ব্লু জ়োনের মানুষ যে ধরনের খাবার খায়, যে পরিবেশে থাকেন, তা তো এ দেশে পাওয়া সম্ভব নয়। তা হলে উপায়? ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অনন্যা ভৌমিক বলছেন, তাদের নিয়মকানুন, তালিকায় থাকা খাবারের পুষ্টিগুণ অনুযায়ী আমাদের দেশে যে সকল খাবার সহজলভ্য, তা খাওয়া জরুরি। তাতে সুস্থতার পাশাপাশি কার্যক্ষম থাকবে শরীর।

—প্রতীকী চিত্র।

কী খাবেন?

ব্লু জ়োন ডায়েটে থাকে মূলত ফাইবার সমৃদ্ধ, উদ্ভিদজাত খাবার। এ দেশে সহজলভ্য খাবারের মধ্যে তালিকায় রাখতে পারেন চাল, গম, মিলেট, বিভিন্ন ধরনের ডাল, বিভিন্ন রকম বীজ, বিনস ও বাদাম। খেতে পারেন যে কোনও তাজা আনাজ। বেগুন, বিট, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, বেলপেপার, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাওয়া ভাল। ফলের মধ্যে যে কোনও ধরনের বেরি, লেবু ও আপেল রাখতে পারেন। তা ছাড়া কফি, ডার্ক চকলেট ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে। অনন্যা বলছেন, এই ধরনের খাবারে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে, যার জেরে শরীরে ক্রনিক রোগ সহজে বাসা বাঁধে না। তালিকায় থাকতে পারে ভাত। তা ছাড়া, রসম, সম্বরের মতো দক্ষিণী খাবারও কিন্তু উপকারী।

  • ব্রেকফাস্টে খেতে পারেন ওটস, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি হোল গ্রেন সিরিয়ালস। তার সঙ্গে থাকতে পারে বিভিন্ন ধরনের সিডস, বাদাম ও বেরি জাতীয় ফল। এতে স্বাদ যেমন বাড়বে, মিলবে উপকারও।
  • দুপুরে ভাত বা ব্রাউন রাইস, কিনোয়া বা আটার পাস্তা খেতে পারেন। সঙ্গে রাখুন ডাল, মটরশুঁটি, সয়াবিন, শিম ইত্যাদি। ডালের মধ্যে মুসুর সবচেয়ে উপকারী। তা ছাড়া, ছোলা, মটর, কলাইয়ের ডালও খেতে পারেন, সঙ্গে সবজি। চাইলে অল্প পরিমাণে মাছ বা চিকেন খেতে পারেন।
  • রাতের খাবারে হোল গ্রেন শস্য যেমন বার্লি, ওটস ইত্যাদির সঙ্গে রাখতে পারেন সিদ্ধ বা রোস্ট করা আনাজ। পাশাপাশি আনাজ দিয়ে সুপ বা স্টু বানিয়ে নিতে পারেন। প্রোটিনের জন্য টোফু খাওয়া যেতে পারে।
  • দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ ধরনের ফল খাওয়া জরুরি।
  • ভারতীয় বিভিন্ন মশলাও শরীরের জন্য উপকারী।

মেনে চলুন

  • রান্নায় দিন বাদামজাত মাখন (আমন্ড বাটার, পিনাট বাটার ইত্যাদি), নারকেল তেল, অলিভ অয়েল।
  • স্যালাডে খান কাঁচা আনাজ ও ফল, স্প্রাউটস। রান্নায় ব্যবহার করুন নারকেল।
  • চিনি, গুড়, মধু ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভাল।
  • চা পানের পরিমাণ কমাতে হবে। জল খেতে হবে বেশি করে।

খেয়াল রাখবেন

অঞ্চলভেদে এই ব্লু জ়োন ডায়েটের খাদ্যতালিকায় সামান্য বদল আসতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলা জরুরি। দিনে যতবারই খাবেন, কম পরিমাণে ও সময় মেনে। রাতের খাওয়া সেরে ফেলুন তাড়াতাড়ি। এতে অন্তত যত দিন বাঁচবেন রোগমুক্ত জীবন কাটাতে পারবেন।

এই ডায়েট অনুসরণে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীর হালকা হয়, পেশির নমনীয়তা বাড়ে। ফলে বেশি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে মানুষ। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই খাদ্যাভ্যাস ভাল। তবে খেয়াল রাখবেন, বাদাম ও বাদামজাত খাবারে অ্যালার্জি থাকে অনেকেরই। তাই এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করার আগে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diet Food habits Healthy Diet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE