Advertisement
E-Paper

ফ্যাট খান ওজন ঝরান

মেদ ঝরাতে গিয়ে ডায়েট থেকে ফ্যাটকে বিদায় দেওয়া চরম ভুল। বাড়তি চর্বি নয়। এতে ঝরে রূপ, লাবণ্য, যৌবন। তাই পরিমাণ মেপে ফ্যাট খেয়েই বাড়তি ফ্যাটকে হারিয়ে দিনমেদ ঝরাতে গিয়ে ডায়েট থেকে ফ্যাটকে বিদায় দেওয়া চরম ভুল। বাড়তি চর্বি নয়। এতে ঝরে রূপ, লাবণ্য, যৌবন। তাই পরিমাণ মেপে ফ্যাট খেয়েই বাড়তি ফ্যাটকে হারিয়ে দিন

চিরশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৫

ঘি মানে ছি নয়। ভাতও পাত থেকে বাদ নয়। আঙুল চেটেপুটে খান মালাই পনির দিয়ে বাদামি খোসাওয়ালা গরমাগরম পরোটা। তার পরও থাকুন মেদহীন এবং জেল্লাদার। পোশাক পরুন ইচ্ছেমতো। না। কিছুই অসম্ভব নয়। এই ডায়েট মেনেই তো সাড়া ফেলে দিচ্ছেন দুই বোন।

তাঁদের বড় জন চল্লিশ পেরিয়েও সুশ্রী এক কলেজছাত্রী। ছোট জনের ‘জিরো’ ফিগারে এক সময় আঁতকে উঠেছিল দেশ। তার মাস কয়েক বাদেই আবার শরীরে ‘কার্ভ’ ও ‘গ্ল্যামার’-এর প্রগলভতা ফিরিয়ে এনে চমক দেন তিনি। গর্ভাবস্থাতে তাঁর ভরন্ত রূপ দু’চোখ ভরে দেখেছি সবাই। সন্তান জন্মের পর এখন ফের ‘শেপ’-এ তিনি।

ঠিক। করিশ্মা-করিনার কথাই হচ্ছে। এঁরা পঞ্জাবি কপূর-পরিবারের মেয়ে। ওঁদের গোলাপ-ত্বক বা পশম-চুলের ঝলমলে স্বাস্থ্য দেখে আমরা অবাক হই। তার কারণ শুধু জিন নয়, ঘি বোলানো পরোটা আর বাটার-চিকেনের খানিকটা হলেও অবদান আছে। এ সব তাঁদের ডায়েটে রেখেও, এমন ‘ডিভা-লুক’ আনতে সাহায্য করেছেন তাঁদের ডায়াটেশিয়ান।

বিখ্যাত নিউট্রিশনিস্টদের ডায়েট প্ল্যানের গোড়ার কথাই হল, ‘ফুড ইজ গুড’। গোটা দুনিয়াই ভারতীয়দের সুডৌল গড়ন ও চাকচিক্যের ভক্ত। আমাদের খাদ্যাভ্যাসই শরীরকে এমন আকর্ষণীয় গঠন দিয়েছে। তাই যুগের ডাকে ভুল তাল ঠুকে, খাবার থেকে প্রাদেশিক স্বাদ-আহ্লাদগুলি বাদ দিয়ে, বিদেশি শাকপাতা খেয়ে থাকলে ঠকবেন। খোয়া যাবে লাস্য এবং লাবণ্য।

প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, ফ্যাট— প্রতিটিরই দেহে প্রয়োজন। যে কোনও একটিকে একেবারে এড়িয়ে চললে প্রথমেই অপুষ্টি আসবে। তার পর অসুস্থতা। যেমন ফ্যাট। সে তো হার্ট, লাংস, লিভার, কিডনিকে রক্ষা করে। শরীর গরম রাখে, জয়েন্ট বা সন্ধিস্থলকে সচল রাখে, ব্যথা তাড়ায়। মস্তিষ্কের ক্ষিপ্রতা বাড়ায়। বাঁচতে গেলে স্নেহজাতীয় খাদ্য অপরিহার্য।

ঝটপট মেদ ঝরবে মনে করে খাবার তালিকা থেকে ফ্যাট বাদ দিলে, অকালবার্ধক্য দেখা দেবে। ত্বক মসৃণ ও টানটান রেখে বলিরেখার ভাঁজ ঠেকিয়ে রাখে চর্বিজাতীয় খাবার। চনমনে করে শরীর-মন। শারীরিক বা মানসিক স্ট্রেস-কে জব্দ করে।

যা শরীরে থাকলই না, তা ঝরানোর কি কোনও মানে হয়? আর কী ভাবেই বা সেটা সম্ভব? তাই, ফ্যাট ঝরাতে হলে প্রথমে ফ্যাট খেতে হবে।

তার জন্য চিনতে হবে ভাল ফ্যাট আর মন্দ ফ্যাট। বাজারে লো-ফ্যাট বলে এক ধরনের চিপস, আইসক্রিম ও অন্যান্য কিছু খাবার স্বাদ-স্বাস্থ্য দুয়েরই দাবি করে। ডায়াটেশিয়ানরা বারবার বলছেন, এমন বিপণন কৌশলে শরীরের ক্ষতিটাই বেশি। এ সব অদৃশ্য ফ্যাট আসলে ‘ব্যাড ফ্যাট’। ওজন নয়, এতে ঝরে ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স।

আর এক ভিলেন ট্রান্স ফ্যাট। রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড চেন যারা ব্যবসায়িক স্বার্থে অনেকটা পরিমাণে খাবার তৈরি করে, তারা স্বাদ ও দেখনদারি বাড়াতে এবং বহুক্ষণ রেখে দিতে এই ফ্যাট ব্যবহার করে। প্রসেসড ফুড অর্থাৎ ক্রিম ভর্তি কেক, মোটা কুকিজ, পিৎজা-বার্গার-ফ্রাই ধরনের মুখরোচকেও ভর্তি এই ‘ব্যাড ফ্যাট’। এরা শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ায়। মাংসের ফ্যাটও দুষ্টু ফ্যাট। হজম হতেই চায় না। এই ধরনের ফ্যাট দিনের শুরুতে বা ব্যায়ামের পর খেলে কুপ্রভাব কাটানো যায়।

‘গুড ফ্যাট’ হল দুগ্ধজাত স্নেহপদার্থ। যেমন মাখন, ঘি, দই। খুব সহজপাচ্য, তাড়াতাড়ি পেশি-রক্ত-কোষে পৌঁছে কাজ করতে শুরু করে। তবে খেতে হবে পরিমাণ বুঝে। মাছ, বাদাম, পনির, চিজেও থাকে শরীরবন্ধু স্নেহ। কম তেলের রান্নায় জোর দেওয়ার বদলে রান্নার তেলে বদল আনুন। সকালে বাদাম তেলে রান্না করা খাবার খেলে, রাতে রাঁধুন সূর্যমুখী তেলে। উপকার পাবেন।

খাবার খান দু’ঘণ্টা অন্তর। ওজন কমাতে, ফ্যাট কী ভাবে খাচ্ছেন, সেই দিকে নজর দিন। দিনের অন্তত তিনটি মিল-এ একটু একটু করে ফ্যাট রাখুন। কখনও বাদাম, কখনও চিজ, কখনও ফ্লাক্স সিড তেলে (তিসি) রাঁধা মাছ। শুধু শুধু নয়, শর্করা, প্রোটিনের সঙ্গে ফ্যাট খান। বাড়তি মেদ গলে যাবে। পকোড়া-লুচিও বাদ দিতে হবে না। বাড়িতে লোহার কড়াইতে ডুবো তেলে ভেজে মাসে এ সব দু’-এক বার খেতেই পারেন। তবে তা খান প্রাতরাশে। রান্নার তেল কখনও দ্বিতীয় বার ব্যবহার করবেন না। এ জন্যই বাড়ির খাবারের এত গুণ গাওয়া হয়। রান্নার পর পরই গরম গরম খেলে সে খাবার থেকে কোনও অপকার হয় না।

বাড়িতে তৈরি উপাদেয় ঘি রোজ অন্তত এক চামচ করে খান। মুখের স্বাদ ফিরবে, রূপ খুলবে, বুদ্ধিও চাঙ্গা থাকবে। খাবারের ম্যারিনেশনে ব্যবহার করা ভাল তেলও শরীরে নিজের কাজুটুকু করেই ক্ষান্ত। ওজন বাড়াতে তার ভূমিকা নেই। খাবার পর, বিশেষত লাঞ্চ করেই মনটা মিষ্টি বা কফি-র জন্য হুহু করলে, সর্বনাশ! এ সব ইচ্ছে দমন করতে, শেষ পাতে রাখুন জলপাইয়ের টক।

ভাত-রুটি, সব্‌জি, ডাল আর এক টুকরো চিকেন। এই খেয়েই শরীরের ‘বেবি ফ্যাট’ ঝরিয়েছেন আলিয়া ভট্ট। বরুণ ধবন তাঁর সুঠাম শরীরের জন্য সব্‌জির সঙ্গে খান গ্রিল করা মাছ। ছোটবেলার খাদ্যাভ্যাস বদলে না ফেলে, তাতে একটু রদবদল এনেই দিব্যি চোখ কাড়ছেন এই তরুণ তুর্কিরা। করিনা বলেন, তিনি তৃপ্তি করে খান ঘরের খাবার। যা দেখে এক বার ভেঙেই পড়েছিলেন তাঁর এক প্রিয় বান্ধবী। করিনার মতো ফিগারের লোভে প্রায় দু’সপ্তাহ কিছু না খেয়ে ছিলেন তিনি। ফলে, প্রচণ্ড অবসাদ ও রুগ্ণ চেহারা। ধুঁকছিলেন প্রায়। করিনা বলেন, ক্র্যাশ ডায়েট কখনও করেন না। সব খান তিনি। বেবো বন্ধুটিকে পরামর্শ দেন, ‘যা ভালবাসো, সব খাও। তবে অল্প করে। নিয়ম মেনে। খেয়ে, তার পর ওজন ঝরাও। সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রাণশক্তি সব থাকলে তবেই তো রূপসী তুমি।’ আপনিও করিনা-কে এক বার বন্ধু ভেবেই দেখুন না!

মডেল: রিয়া

ছবি: আশিস সাহা

Food Fat Health Care
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy