E-Paper

সৌরজগতে রহস্যময় ‘অতিথি’, চর্চায় ভিন্‌গ্রহী তত্ত্ব

গ্রহাণুর লেজের একটি বিরল বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে। সাধারণত, সূর্যের কাছাকাছি এলে গ্রহাণুর বাইরের স্তরে থাকা বরফের চাদর গলতে শুরু করে এবং লেজ সৃষ্টি হয়। সেই লেজ সূর্য যে দিকে থাকে তার বিপরীত দিকে হয়। সেই লেজযুক্ত গ্রহাণুকে ধূমকেতু বলা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:১১

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

‘অতিথি’ গ্রহাণুকে নজরে এসেছিল আগেই। নজরদারিও চলছিল। সেই নজরদারিতেই উঠে এসেছে তার রহস্যময় গতিবিধির কথা। এই গতিবিধি কি নেহাতই কাকতালীয় নাকি এর পিছনে কোনও ভিন্গ্রহের প্রযুক্তি, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তাই সৌরজগতে প্রবল গতিতে ছুটে বেড়ানো ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামে ওই গ্রহাণুকে নিয়ে রহস্যের মেঘ এখনও কাটেনি।

গত জুলাই মাসে অ্যাটলাস টেলিস্কোপে ধরা পড়ে এই গ্রহাণু। এর চেহারা, আয়তন দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এটি সৌরজগতের কোনও গ্রহাণু নয়। বরং সৌরজগতের বাইরে থেকে হাজির হওয়া গ্রহাণু। এর আগে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে অ্যাটলাসে এমন গ্রহাণু নজরে এসেছিল। এটি তৃতীয় হওয়ায় নাম দেওয়া হয় ৩আই (থ্রিআই)। কিন্তু আগের দু’টি থেকে এই গ্রহাণুর গতিবিধি আলাদা। কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স-এর অধিকর্তা অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রহাণুটি এমন ভাবে ছুটে চলেছে যাতে সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহের কক্ষপথকে ছুঁয়ে যেতে পারে। এর ওজন প্রায় ৩৩০০ কোটি টন। গতিও প্রবল। ঘণ্টায় প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার কিলোমিটার!’’ ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসা) হিসেবে, এই গ্রহাণুর বয়স প্রায় ৭৬০ কোটি বছর। সৌরজগতের থেকে বয়সে প্রায় ৩০০ কোটি বছরেরবড় সে।

এই গ্রহাণুর লেজের একটি বিরল বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে। সাধারণত, সূর্যের কাছাকাছি এলে গ্রহাণুর বাইরের স্তরে থাকা বরফের চাদর গলতে শুরু করে এবং লেজ সৃষ্টি হয়। সেই লেজ সূর্য যে দিকে থাকে তার বিপরীত দিকে হয়। সেই লেজযুক্ত গ্রহাণুকে ধূমকেতু বলা হয়। কিন্তু এখানে এই আগন্তুকের লেজ তৈরি হয়েছে সূর্যের দিকে এবং তা কার্যত গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে। এই বিষয়টিকে তুলে ধরেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজ়িসিস্ট আভি লোয়েব দাবি করছেন, ‘‘কেউ যেন গ্রহাণুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে!’’ এই গ্রহাণুর সঙ্গে ভিনগ্রহীদের প্রযুক্তি জুড়ে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। লোয়েবের মতে, এই গ্রহাণুর উপরে নজরদারি ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে অনেক প্রচলিত ধারণা বদলে দিতে পারে। সন্দীপ বলছেন, এই গ্রহাণু বা ধূমকেতুর লেজে নিকেল ধাতুর অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছে। যা বিরল!

লোয়েবের ধারণাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অধ্যাপক চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, বিশ্বে বহু গ্রহেই প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা আছে। তাই ভিনগ্রহী বিষয়টিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেভাবে এই গ্রহাণু নিজের গতিপথ বদল করছে তাও যথেষ্ট বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করছেন তিনি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, অন্যান্য গ্রহের গা ঘেঁষে বেরোলেও পৃথিবী থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে গ্রহাণুটি। কেন এই অবস্থান, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি তিনি আরও একটি বিষয়কেও সামনে এনেছেন তিনি। বলছেন, সাধারণ মহাকাশযানে চেপে মহাকাশের দূরতম স্থানে পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে এমন কোনও গ্রহাণুর পিঠে সওয়ার হতে পারলে অতি দ্রুত মহাকাশে পরিভ্রমণ সম্ভব এবং তাতে জ্বালানির খরচও লাগবে না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ গ্রহাণু অভিযানে নেমেছে। তাই ভবিষ্যতে গ্রহাণুর পিঠে চেপে মহাকাশ অভিযান দেখা যেতেও পারে।

আপাতত সূর্যের কাছে চলে গিয়েছে এই আগন্তুক। আগামী ২৯-৩০ অক্টোবর সূর্যের সব থেকে কাছে পৌঁছবে সে। এই সময়ে তার বাইরের আবরণ সব থেকে বেশি গলবে। সূর্যের পিছন থেকে ঘুরে ডিসেম্বর মাসে ফের সে দৃষ্টিগোচর হবে বলেও বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Scientist solar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy