Advertisement
E-Paper

হাড়ও হজম করে ফেলতে পারে অজগর! জাদু বিশেষ একটি কোষের, ধরে ফেললেন বিজ্ঞানীরা

কী ভাবে অজগর যে কোনও শিকারের হাড় সম্পূর্ণ রূপে হজম করে ফেলে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল ছিলই। এ বার সেই অজগরের দেহে একটি বিশেষ ধরনের কোষের সন্ধান পাওয়া গেল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ০৯:২৩
বার্মিজ় পাইথনের দেহে নতুন ধরনের কোষ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বার্মিজ় পাইথনের দেহে নতুন ধরনের কোষ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। —ফাইল চিত্র।

ছোট পাখি থেকে শুরু করে আস্ত হরিণ কিংবা গরু! বিশাল অজগরের শিকারি নজর থেকে বাদ যায় না কিছুই। সুযোগ পেলে মানুষকেও রেহাই দেয় না অজগরের গ্রাস। তারা যা খায়, তা-ই হজম করে ফেলতে পারে। শিকার ধরে সম্পূর্ণ গিলে নেয় এই সাপ। মুখের ভিতরে সেই খাবার রেখে ধীরে ধীরে হজম করে। দীর্ঘ সেই হজমপ্রক্রিয়া চলতে পারে কয়েক সপ্তাহ ধরেও! অজগরের বিষ নেই। তাদের এই শিকার এবং হজমপ্রক্রিয়ার কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু অজগরের হজমে রয়েছে রহস্যের বীজও। যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন গবেষণা করে চলেছেন। কী ভাবে আস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের গিলে ফেলে এই সাপ, কী ভাবেই বা তাদের শক্ত হাড় হজম হয়ে যায় ওই বিরাট পেটের গহিনে, তা এখনও রহস্য। অজগরের হজম নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তরই এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অধরা। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় নতুন তথ্য উঠে এসেছে। মনে করা হচ্ছে, অজগর-রহস্যে আলো দেখাতে পারে সেই তথ্য।

অজগরের দেহে একটি বিশেষ ধরনের কোষের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দাবি, এই কোষেই লুকিয়ে সব রহস্যের উত্তর। বার্মিজ় পাইথন নামের এক বিশেষ ধরনের অজগরের অন্ত্রে এই কোষটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এর আগে এই ধরনের কোষের অস্তিত্ব কারও জানা ছিল না। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই কোষই কঙ্কাল-সহ সমগ্র শিকারটিকে হজম করতে সাহায্য করে অজগরকে।

বার্মিজ় পাইথনের বিজ্ঞানসম্মত নাম পাইথন মলিউরাস বাইভিট্টাটাস। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়। অজগর প্রজাতির অন্যতম বড় আকারের সাপ এই বার্মিজ় পাইথন। এদের অন্ত্রে যে নতুন ধরনের কোষের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাস হজম করতে সাহায্য করে। এই কোষ না থাকলে এই বিপুল পরিমাণ ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাস সাপের দেহে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করত। সহজে খাবার হজম হত না।

ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবতত্ত্ববিদ জেহান-হার্ভ লিগনট বলেছেন, ‘‘পাইথনের শরীরের টিস্যুগুলির রূপগত বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট এক ধরনের কণার হদিস মিলেছে, যা আমি অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে কখনও দেখিনি। অন্ত্রের স্বাভাবিক শোষণকারী কোষগুলির চেয়ে এটি ভিন্ন। এই বিশেষ ধরনের কোষ অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। এতে রয়েছে ছোট মাইক্রোভিলি এবং উপরের দিকে রয়েছে একটি ভাঁজ, যা ক্রিপ্ট তৈরি করে।’’

হাতেগোনা কয়েকটি প্রজাতির প্রাণীকেই ইচ্ছাকৃত ভাবে হাড় খেতে দেখা যায়। এই অভ্যাসকে বলে অস্টিয়োফ্যাজি। অনেক সময়ে গরু, জিরাফের মতো তৃণভোজীরাও শরীরে ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি মেটাতে হাড় খেয়ে থাকে। তবে সাপের খাদ্যাভ্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হাড়। শরীরের চাহিদা মেটাতেই হাড় খেয়ে থাকে তারা। কেবল যে সমস্ত সাপকে পোষা হয়, তাদের হাড় ছাড়া খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করা হয়ে থাকে। সেই ধরনের সাপের শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় প্রায়ই।

এত হাড় খাওয়ার পরেও বিপুল পরিমাণ ক্যালশিয়াম সাপেদের শরীরে হারিয়ে কোথায় যায়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল ছিল। লিগনট বলেছেন, ‘‘কী ভাবে সাপ নিজেদের শরীরে ক্যালশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে, অন্ত্রের ওই প্রাচীরের মাধ্যমে কী ভাবে এই বিশাল শোষণ প্রক্রিয়াজাত করা হয়, আমরা সেটাই শনাক্ত করতে চেয়েছিলাম।’’ এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা ব্যবহার করেছেন আলো এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি। বার্মিজ় পাইথনের অন্ত্রের কোষগুলিতে এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়েছিল। এ ছাড়া পরীক্ষার জন্য তিন ধরনের সাপের দেহ থেকে নেওয়া হয়েছিল রক্তের হরমোন ও ক্যালশিয়ামের পরিমাপ। যে সাপ সম্পূর্ণ খালিপেটে রয়েছে, যে সাপকে সাধারণ হাড়যুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছে এবং যে সাপকে হাড়বিহীন ইঁদুর খাওয়ানো হয়েছে— এই তিন প্রকার সাপের শরীর থেকে নেওয়া হয়েছিল নমুনা। এই পরীক্ষা থেকেই বিশেষ এক ধরনের কোষের সন্ধান পাওয়া যায়, যা হাড় হজম করতে সাহায্য করে। হাড় খাওয়া সাপটির পেটে হাড়ের কোনও অস্তিত্বই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, হাড় তার শরীরে গিয়ে সম্পূর্ণ হজম হয়ে গিয়েছে।

শুধু কি বার্মিজ় পাইথন? আপাতত এই প্রজাতিকে নিয়েই গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা বোয়া কনস্ট্রিক্টর, গ্রিন অ্যানাকোন্ডা, ব্লাড পাইথন, রেটিকুলেটেড পাইথন, মধ্য আফ্রিকান রক পাইথন, কার্পেট পাইথন এবং গিলা মনস্টার লিজ়ার্ডের দেহেও এই কোষের সন্ধান মিলেছে বলে খবর। এখনও গবেষণাপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। বেলজিয়ামের একটি কনফারেন্সে জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি নামক পত্রিকায় বার্মিজ় পাইথন সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

Snakes Python Food habits
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy