Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

বাইশ নম্বর বিশ্বখেতাব, বিশ্বের খেলাধুলোর মানচিত্রেও বিরল পঙ্কজের ধারাবাহিকতা

১৫০-আপ ফর্ম্যাটে পঙ্কজ এই নিয়ে টানা চার বার চ্যাম্পিয়ন হলেন। ইংল্যান্ডে পেশাদার খেলোয়াড়জীবন শেষ করে ২০১৪ সালে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ৩৪ বছর বয়সি পঙ্কজ প্রতি বছর দেশকে একটি করে বিশ্বখেতাব এনে দিয়েছেন।

লক্ষ্যপূরণ: বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি হাতে পঙ্কজ। টুইটার

লক্ষ্যপূরণ: বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি হাতে পঙ্কজ। টুইটার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

বিশ্বখেতাব জেতা তিনি যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। বছরের পর বছর তাঁর সাফল্যের যে ধারাবাহিকতা তা ভারতীয় ক্রীড়াজগতে তো বটেই বিশ্বের খেলাধুলোর মানচিত্রেও বিরল। তিনি— পঙ্কজ আডবাণী। রবিবার মায়ানমারে ভারতের বিলিয়ার্ডস ও স্নুকার আরও এক বার উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন বিশ্বমঞ্চে। আইবিএসএফ বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে ২২তম বিশ্বখেতাব জিতে।

১৫০-আপ ফর্ম্যাটে পঙ্কজ এই নিয়ে টানা চার বার চ্যাম্পিয়ন হলেন। ইংল্যান্ডে পেশাদার খেলোয়াড়জীবন শেষ করে ২০১৪ সালে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ৩৪ বছর বয়সি পঙ্কজ প্রতি বছর দেশকে একটি করে বিশ্বখেতাব এনে দিয়েছেন। গত ছ’বছরে এই ফর্ম্যাটে পঙ্কজের এটি পঞ্চম খেতাব। বিলিয়ার্ডসে তার মতো সাফল্য আর কোনও খেলোয়াড় পাননি। এ রকম ধারাবাহিকতাও কেউ দেখাতে পারেননি। তবু বাইশতম বিশ্বখেতাব জেতার পরেও তার মধ্যে সাফল্যের খিদেটা যে একই রকম রয়েছে সেটা জানিয়ে দিলেন ভারতীয় তারকা। রবিবার ফাইনালের পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পঙ্কজ বলেন, ‘‘সত্যি বলতে প্রথম বিশ্বখেতাব জেতার সময়ও আমার সাফল্যের খিদে যে রকম ছিল, এখনও সে রকমই আছে। এতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আবেগটাও একই রকম আছে। সেই জায়গাটা গত দেড় দশক ধরে রাখতে পেরে দারুণ লাগছে।’’ বিলিয়ার্ডসের এই ছোট ফর্ম্যাটে টানা সাফল্য কতটা কঠিন ছিল সেটা ব্যখ্যা করতে গিয়ে পঙ্কজ আরও বলেন, ‘‘এই ফর্ম্যাটে মুহূর্তের মধ্যে খেলা যে কোনও দিকে ঘুরে যেতে পারে। তাই টানা চার বছর জেতা ও শেষ ছ’বারের মধ্যে পাঁচটা খেতাব পাওয়াটা বিশেষ একটা অনুভূতি।’’

গত বছরের ফাইনালের মতোই এ বারও স্থানীয় তারকা নাই থোয়াই ও-র বিরুদ্ধে একই রকম দাপটে জেতেন পঙ্কজ। শুধু তাই নয়, গত বারের মতো একই ফলাফলেও। ৬-২। ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকেই পঙ্কজকে তার পরিচিত ছন্দে দেখা যায়। তাঁর প্রতিপক্ষদের কাছে যেটা সব চেয়ে আতঙ্কের ছবি। ম্যাচের মাঝামাঝি পর্বে পঙ্কজ ৩-০ এগিয়ে গিয়েছিলেন। যে ফলাফলে যেতে তাঁকে সাহায্য করেছিল ১৪৫, ৮৯, ১২৭ ব্রেক। তাঁর প্রতিপক্ষ তখনও স্কোর করতে পারেননি। এর পরে ৬৩ ও ৬২ ব্রেকে একটি ফ্রেমে জেতার পরে ফের পঙ্কজ নিজের দাপট বজায় রাখেন। যা দেখে মায়ানমারের দর্শকরাও প্রশংসা করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। পঙ্কজ এর পরের দুটি ফ্রেম দখল করেন অপরাজিত ১৫০ ব্রেক-এ। শেষে ৭৪ ব্রেক নিয়ে তিনি প্রতিপক্ষকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগই না দিয়ে ট্রফি নিশ্চিত করে ফেলেন। ফলে পঙ্কজের প্রতিপক্ষকে এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় বার রুপো জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

এই জয়ে পঙ্কজ ২০০৩ থেকে তাঁর একের পর এক জেতা বিশ্বখেতাবের সংখ্যা আরও উঁচুতে নিয়ে গেলেন। যে কৃতিত্ব বিলিয়ার্ডসে আর কারও নেই। ‘‘প্রত্যেক বার আমি যখন কোনও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামি আমার সেরা জায়গায় পৌঁছনোর উৎসাহ যেন কোনও ভাবে থেমে না যায়, সেটা মাথায় রাখি,’’ বলেন পঙ্কজ। পোলভল্টে সের্গেই বুবকার অনবদ্য ৩৫ বার বিশ্ব রেকর্ড গড়া, সাঁতারে মাইকেল ফেল্পসের ২৩টি অলিম্পিক্স সোনা জয়ের অনন্য নজিরের সঙ্গে পঙ্কজের এই সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করা শুরু হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু পঙ্কজের হাতে ২৪ ঘণ্টাও যে নেই এই সাফল্য উপভোগ করার। সোমবার থেকেই একই জায়গায় বিশ্ব সিক্স রেড স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্ব দলগত স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়ে যাচ্ছে। যার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন পঙ্কজ। ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমার সকালেই আবার নামতে হবে বিশ্ব সিক্স রেড স্নুকারে। যার জন্য আমার টেকনিকে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। তার প্রস্তুতি চলছে।’’

গত দেড় দশকে তিনি যে খেলাটার সঙ্গে যুক্ত তাতে নানা প্রতিপক্ষ এসেছে। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু নিজের সিংহাসনটা তিনি একই ভাবে ধরে রেখেছেন। এই অনবদ্য সাফল্যের রহস্য কি? তাঁর প্রতিপক্ষদের মান কি আরও কমে গিয়েছে না উন্নত হয়েছে, আর তিনি সেই অনুযায়ী নিজেকে উপরে তুলে এনেছেন? প্রশ্ন করা হলে পঙ্কজ বলেন, ‘‘আমার মনে হয় খেলাধুলোয় মানসিকতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাসটাই আসল। আমি খেলোয়াড় জীবনের প্রথম দিকে সাফল্য পেয়েছিলাম। এই সাফল্যে একটা আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল। সেটাই এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আমার প্রতিপক্ষরা একই রকম আছে। কিন্তু নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করা এবং জায়গাটা ধরে রাখাটা বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। আমি চেষ্টা করি সব সময় এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতাতেও সেমিফাইনালে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিলিয়ার্ডস খেলোয়াড় মাইক রাসেলের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল। তার পরে ফাইনালে থোয়াইকে হারালাম। গত বছরও একই ফলে হারিয়েছিলাম। এ বার আমাকে স্নুকারের জন্য তৈরি হতে হবে।’’

বোঝা গেল, নতুন লক্ষ্যভেদের জন্য প্রস্তুত পঙ্কজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE