Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ICC World Cup 2019

কেরিয়ারের প্রথম ম্যাচেও রান আউট ধোনি, সে দিনের কথা মনে করলেন খালেদ মাসুদ

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ক্রিকেট জীবনের শুরু আর শেষ মিলে গেল একই বিন্দুতে।

সে দিন আর এ দিন। কী অদ্ভুত মিল ধোনির জীবনে।

সে দিন আর এ দিন। কী অদ্ভুত মিল ধোনির জীবনে।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ১৬:১৯
Share: Save:

২৩ ডিসেম্বর, ২০০৪। চট্টগ্রামে রান আউট হয়ে ফেরেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সেটাই ছিল মাহির জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ।

১০ জুলাই, ২০১৯। ম্যাঞ্চেস্টারে মার্টিন গাপ্তিলের অসাধারণ থ্রোয়ে আর ক্রিজে ফেরা হল না মাহির। কেরিয়ারের সম্ভবত শেষ ওয়ানডেতেও যেন শুরুর সে দিনেরই ছায়া।

‘সম্ভবত’ বলা হচ্ছে, কারণ ধোনি সম্পর্কে আগে থেকে কিছু বলাই সম্ভব নয়। কারণ তাঁর কেরিয়ারের চিত্রনাট্য যে তিনি নিজেই লেখেন। তাই এখনই বলা সম্ভব নয়, ম্যাঞ্চেস্টারের হৃদয়ভাঙা সেমিফাইনালই তাঁর কেরিয়ারের শেষ ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ম্যাচ কি না। তবে শেষ বিশ্বকাপ যে তিনি খেলে ফেললেন বিলেতে, তা বলে দেওয়াই যায়। প্রায় হেরে বসা একটা ম্যাচ শুধু তাঁর জন্যই শেষের দিকে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। গাপ্তিলের দুরন্ত থ্রোয়ে যখন উইকেট ভেঙে গেল, তখনও ক্রিজে পৌঁছতে পাঁচ সেন্টিমিটারের মতো বাকি ধোনির। অবিকল একই ছবি ছিল ১৫ বছর আগের সেই ম্যাচে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটার তাপস বৈশ্যর ছোড়া বল উইকেটকিপার খালেদ মাসুদের হাতে পড়তেই উইকেট ভেঙে দেন তিনি। ক্রিজে আর ফেরা হয়নি মাহির। তাঁকে রান আউট করার মুহূর্তটা একসময়ে ভুলেই গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক খালেদ মাসুদ। ধোনির বায়োপিক দেখার পরে সব ঘটনা মনে পড়ে যায় তাঁর। বৃহস্পতিবার যখন খালেদ মাসুদের সঙ্গে দূরভাষে যোগাযোগ করা হল, তখন তিনি দারুণ ব্যস্ত। সেই ব্যস্ততার মধ্যেই আনন্দবাজারকে মাসুদ বললেন, ‘‘অনেক দিন আগের ঘটনা। ভুলেই গিয়েছিলাম। ধোনির বায়োপিকে রান আউটের মুহূর্তটা দেখানো হয়েছে। ছবিটা দেখার পরে পুরনো কথা মনে পড়ে যায়। রফিকের বল স্কোয়ার লেগে ঠেলে রান নেওয়ার জন্য দৌড়েছিল ধোনি। নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়ানো কাইফ ফিরিয়ে দেয় ওকে। তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তাপস বলটা ধরেই আমাকে ছুড়ে দেয়। বল হাতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই উইকেট ভেঙে দিই আমি। ধোনির আর ক্রিজে ফেরা হয়নি।’’

আরও পড়ুন: তৃতীয় পাওয়ার প্লে-তে ছয় ফিল্ডার আউটফিল্ডে, বিতর্কে ধোনির আউট

আরও পড়ুন: ম্যাচের পর আমায় খুঁজছিল জাডেজা, বললেন মঞ্জেরেকর

চট্টগ্রাম আর ম্যাঞ্চেস্টারের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব। দু’দেশের দুই মাঠে ধোনির খেলা ইনিংসের প্রেক্ষিতও ভিন্ন। বুধবার ধোনি যখন মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখন তাঁর মুখ যন্ত্রণাক্লিষ্ট। দেশকে জেতাতে না পারার শোক তাঁর চোখমুখে। খালেদ মাসুদ বলছিলেন, ‘‘ধোনির জন্য খুব খারাপ লাগছিল। অল্পের জন্য ক্রিজে পৌঁছতে পারল না। বিশ্বক্রিকেটে যে ক’জন ক্রিকেটার মস্তিষ্ক দিয়ে খেলে, তাঁর মধ্যে অন্যতম ধোনি। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে গোটা ম্যাচটা দারুণ বিশ্লেষণ করে। আমার বিশ্বাস, কোন ব্যাটসম্যানকে কোন জায়গায় বল ফেলতে হবে, সেটা ধোনিই বোলারদের বলে দেয়। বোলার যখন বল করার জন্য দৌড়ন, তখন ক্যামেরা বোলারকেই ধরে। বাকিদের আমরা আর দেখতে পাই না। তাই ধোনি থেকে যায় অদৃশ্য। কিন্তু, ওই তো দলের আসল মস্তিষ্ক।’’

বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক খালেদ মাসুদ।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চলেন খালেদ। দুনিয়ার অন্যতম সেরা ফিনিশারের কাছে তাঁর অনুরোধ, “খেলা যেন চালিয়ে যায় ধোনি। ওর শূন্যস্থান পূরণ করার মতো কাউকে এই মুহূর্তে দেখছি না।’’ ধোনি-ভক্তরা বুক ঠুকে বলছেন, ‘‘ধোনি, খেলা চালিয়ে যাও। থেমো না।’’

কিন্তু, তিনি তো ধোনি! কী করবেন কেউ জানেন না। হঠাৎই টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন। কাউকে বুঝতে দেননি। প্রায় একই ভাবে ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। যে মানুষটা প্রতিটি মুহূর্তেই চমক দেন, সেই তিনিও হয়তো জানতেন না তাঁর ক্রিকেটজীবনের শুরু আর শেষ মিলে গিয়েছে একই বিন্দুতে। এও তো আশ্চর্য এক সমাপতন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE