Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শামির দুরন্ত শেষ ওভার, রোহিতের সুপার শো, সিরিজ ভারতের
India

সুপার ওভারে স্নায়ু সামলেই রুদ্ধশ্বাস জয়

মহম্মদ শামি যখন নিউজ়িল্যান্ড ইনিংসের কুড়ি নম্বর ওভারটা বল করতে এল, তত ক্ষণে ম্যাচ প্রায় কেন উইলিয়ামসনদের হাতে। ৬ বলে দরকার ৯।

নায়ক: জয়ের পরে রোহিতকে আলিঙ্গন কোহালির। (ডান দিকে) শেষ ওভারে নিউজ়িল্যান্ডকে আটকে ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে গেলেন শামি। গেটি ইমেজেস

নায়ক: জয়ের পরে রোহিতকে আলিঙ্গন কোহালির। (ডান দিকে) শেষ ওভারে নিউজ়িল্যান্ডকে আটকে ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে গেলেন শামি। গেটি ইমেজেস

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

নিউজ়িল্যান্ড, সুপার ওভার এবং হার। এই তিনটে শব্দ যেন এক সুতোয় বাঁধা পড়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, টানা পাঁচটা সুপার ওভারের ম্যাচ হারল নিউজ়িল্যান্ড! বুধবারের এই ম্যাচ কখনও সুপার ওভারে যেতে পারে, তা ভাবা যায়নি। ম্যাচ গেল এবং নিউজ়িল্যান্ড সেই হেরে বসল।

মহম্মদ শামি যখন নিউজ়িল্যান্ড ইনিংসের কুড়ি নম্বর ওভারটা বল করতে এল, তত ক্ষণে ম্যাচ প্রায় কেন উইলিয়ামসনদের হাতে। ৬ বলে দরকার ৯। এর পরে হিসেবটা দাঁড়াল ৪ বলে ২ রান। যে-কেউ তখন চোখ বুজে বলে দেবে, ভারত হারছে। বিশেষ করে তখনও যে ব্যাট করছে অসাধারণ ছন্দে থাকা উইলিয়ামসন। কিন্তু পরের বলেই উইলিয়ামসন আউট। এবং শেষ বলে যখন এক রান দরকার, ফুল লেংথ ডেলিভারি ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হয়ে গেল রস টেলর। ম্যাচ টাই। অর্থাৎ আবারও একটা সুপার ওভার!

যে সুপার ওভারটাও প্রায় নিউজ়িল্যান্ডের দখলেই ছিল। যশপ্রীত বুমরার জন্য ম্যাচটা মোটেও ভাল যায়নি। ৪ ওভারে ৪৫ রান দেয়। তার সুপার ওভারে দিল ১৭। অর্থাৎ ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬ বলে ১৮। মোটেই সোজা কাজ নয়। শেষ দু’বলে ভারতের দরকার ছিল ১০ রান। ওই সময়ই রোহিত শর্মা বুঝিয়ে দিল কেন ওকে ‘হিটম্যান’ বলা হয়। কোনও তাড়াহুড়ো নয়। স্নায়ুর চাপ সামলে পঞ্চম বলটা দুরন্ত ফ্লিকে ডিপ স্কোয়ার লেগ গ্যালারিতে ফেলে দিল। ওই ছয়টা খেয়েই টেনশনে পড়ে যায় টিম সাউদি। শেষ বলটা ব্যাটের সামনে দিয়ে বসল। লং অফের উপর দিয়ে তুলে দিতে সমস্যা হয়নি রোহিতের। তবে সুপার ওভারের প্রথম বলেই রোহিতের রান আউটের সুযোগ ফস্কেছিল ওদের উইকেটকিপার টিম সেইফার্ট।

আরও পড়ুন: কোহালির লক্ষ্য এখন ৫-০

নিউজ়িল্যান্ডের মাটি থেকে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। তাও আবার সুপার ওভারে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে এই সিরিজ জয় কিন্তু ভারতের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেবে। হ্যামিল্টনের পরে বিরাট কোহালিরা এখন আরও বেশি করে বিশ্বাস করবে, যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এই দল।

ভারতকে তৃপ্তি দেবে আরও একটা ব্যাপার। এই ম্যাচে বুমরা একেবারেই ছন্দে ছিল না। যেটা এক-আধটা ম্যাচে হতেই পারে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা ডেথ বোলারের খারাপ দিনেও এই ভাবে ম্যাচ জেতায় বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যাবে ভারত। কোহালিরা আরও একটা ব্যাপার বুঝিয়ে দিয়েছে। শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত ভারত লড়াই থেকে সরে যায় না। এই জয়ের পিছনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ঠান্ডা মাথা খুব ভাল কাজ করেছে। ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলে শামি ছয় খেয়ে গেলেও মাথা ঠান্ডা রেখে পরের বলগুলো করে। আর সুপার ওভারে রোহিত ছিল বোলারের ভুলের অপেক্ষায়। বোলার ভুল করল আর রোহিত ঠান্ডা মাথায় বল দু’বার গ্যালারিতে ফেলে দিল।

সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ভারতের শুরুটা খুব ভাল হয়েছিল। প্রথম ৬ ওভারে তোলে ৬৯-০। সেডন পার্কের উইকেটে ‘স্পঞ্জি বাউন্স’ আছে। অর্থাৎ বল থেমে থেমে আসে। শট খেলা অতটা সোজা নয়। সেখানে কিন্তু দু’জন ব্যাটসম্যান অসাধারণ প্রতিভার ছাপ রাখল। প্রথমে রোহিত (৪০ বলে ৬৫), পরে উইলিয়ামসন। তবে দিনের সেরা শটটা এসেছে কোহালির ব্যাট থেকে। বাঁ-হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে একটু স্টেপ আউট করে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে মারা একটা ছয়।

রোহিতকে এ দিন শুরু থেকেই বিধ্বংসী দেখিয়েছে। পাওয়ারপ্লের ষষ্ঠ ওভারে হামিশ বেনেটকে তিনটে ছয় আর দুটো চার মেরে ২৭ রান তুলেছিল। শেষ দিকে নিউজ়িল্যান্ড বোলাররা অবশ্য আঁটসাঁট বোলিং করে ভারতের স্কোর ১৭৯ রানে আটকে দেয়।

কিন্তু এই ১৭৯ রানও এক সময় নিউজ়িল্যান্ডের কাছে খুব বড় দেখাচ্ছিল। তখনই ওই অসাধারণ ইনিংসটা খেলল উইলিয়ামসন (৪৮ বলে ৯৫)। কোহালি, উইলিয়ামসন এবং স্টিভ স্মিথ— তিন ধরনের ক্রিকেটেই এই তিন ব্যাটসম্যান দুরন্ত ব্যাটিং করছে। বুধবার ছিল উইলিয়ামসনের দিন। কোহালি ওর বিরুদ্ধে নানা ভাবে ফিল্ডিং সাজিয়েও রান ওঠা আটকাতে পারছিল না। কিন্তু ম্যাচ জেতাতে না পারায় ব্যর্থ হয়ে গেল নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়কের লড়াই।

নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম তিনটে ম্যাচের পরেই যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পকেটে চলে আসবে, তা সম্ভবত অনেকেই ভাবেনি। ভারত হয়তো পরের দুটো ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইবে। কয়েক জন নতুন মুখকে খেলাতে পারে। কিন্তু আমি বলব, ৫-০ করার জন্য ঝাঁপাতে হবে। বিশ্বকাপ ফাইনালিস্ট দলের বিরুদ্ধে ওদের ঘরের মাঠে গিয়ে ৫-০ জিততে পারলে কোহালিদের আত্মবিশ্বাস কোথায় গিয়ে ঠেকবে, ভাবা যায় না। কিছু মাস পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে এর চেয়ে ভাল টনিক আর কিছু হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE