প্রতিবাদ: নানা দাবি নিয়ে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন দফতরে ধর্নায় শিক্ষার্থীরা। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সড়কপথে কলকাতা থেকে দূরত্ব ৪৪১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার সেই শহর ভুবনেশ্বর যখন মেতে রয়েছে হকি বিশ্বকাপ নিয়ে, তখন বাংলার হকিতে শুধুই আঁধার।
ভারতীয় দলে বাংলা থেকে শেষ সদস্য ছিলেন বীরবাহাদুর ছেত্রী। তাও ৩৮ বছর আগে, ১৯৮০ সালে। তার পরে গত সাড়ে তিন দশকে ভারতীয় দলে দেখা যায়নি বাংলার কোনও খেলোয়াড়কে। ১১০ বছর আগে ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএ)। এই শহরে হকি খেলেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন লেসলি ক্লদিয়াস, কেশব দত্ত, গুরবক্স সিংহদের মতো পদকজয়ী অলিম্পিয়ানরা। সেই শহরেই এখন চলছে হকির অন্তর্জলি যাত্রা। ২০১২ সালের পরে আর নির্বাচনই হয়নি বিএইচএ-তে। যা হওয়ার কথা প্রতি দু’বছর অন্তর।
কেন এই দুরবস্থা বঙ্গ হকির? কেন রাজ্যের নিয়ামক সংস্থায় গত ছয় বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না? কেন কোনও ক্লাব অনুদান পায় না? এই প্রশ্ন তুলে শনিবার বিএইচএ দফতরে ধর্নায় বসলেন প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড়, আম্পায়ার, ক্লাব কর্তা-সহ তিনশো শিক্ষার্থী হকি খেলোয়াড়। দুপুর একটা থেকে পাঁচটা বিএইচএ দফতরে প্রতীকী তালা ঝুলিয়ে ধর্নায় বসেন তাঁরা। যাদের অনেকের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘নো ইলেকশন, নো হকি’, ‘রাজ্য সরকার ও হকি ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ চাই বাংলার হকির হাল ফেরাতে’, ‘বেটন কাপ বন্ধ কেন’, ‘আমাদের হকির গৌরব ফিরিয়ে দাও।’
ধর্না দিতে এসেছিলেন বাংলার প্রাক্তন খেলোয়াড় রঞ্জন পাল, তাপস পাল, রবিন মুখোপাধ্যায়, হংস কুমাররা। অসুস্থ শরীরে শ্রীরামপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন প্রবীণ হকি আম্পায়ার লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ধর্নায় বসেছিলেন নবীন আম্পায়ার ইমরান আজাদ, তেজনারায়ণ শাহরা। কেন ছয় বছর ধরে নির্বাচন হয় না জানতে চাওয়ায় যাঁরা এই মুহূর্তে বহিষ্কৃত। ধর্নামঞ্চ থেকেই বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বাসু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পিছোতে পিছোতে ভারতীয় হকির শেষ বেঞ্চের ছাত্র হয়ে গিয়েছে বাংলা। আমরা নির্বাচন চাই।’’ বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি, ২০১২ সালে সংস্থার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ছিল ৫৭ লক্ষ টাকার উপরে। এখন তার পরিমাণ ১৪ হাজার টাকা। বিরোধী গোষ্ঠীর কর্তার দাবি, ‘‘আমাদের সঙ্গে চল্লিশটি ক্লাব রয়েছে। অনেক অফিস ক্লাব পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিচ্ছি সংস্থাকে। এর পরে ভোট না হলে চল্লিশটি ক্লাব হকি লিগে খেলবে না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘প্রয়োজনে মামলা বা পাল্টা নিয়ামক সংস্থা গড়ার রাস্তা খুলে যাবে তখন। অনেক রাজ্যেই এ রকম পাল্টা নিয়ামক সংস্থা রয়েছে।’’
বিএইচএ সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় যুবভারতীতে মোহনবাগানের ম্যাচে ছিলেন। বার বার ফোন করার পরেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সংস্থার প্রাক্তন সহ-সভাপতি ও অলিম্পিয়ান গুরবক্স সিংহ আবার বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাকে তোপ দেগে বলছেন , ‘‘ওঁরা রাজনীতি করছেন। জেলাগুলোকে নিয়ে হকি বাংলা করলেই হকি ইন্ডিয়ার অনুদান আসবে। কিন্তু ওঁরা করতে দিচ্ছেন না।’’ বিরোধী গোষ্ঠীর কর্তারা পাল্টা প্রমাণ পেশ করে বলছেন, ‘‘হকি বাংলা তো গত বছরেই করে ফেলেছেন ওঁরা। কেন মিথ্যা বলছেন?’’
যে অবস্থা শুনে আফসোস করছেন কলকাতার দুই পঞ্জাবী খেলোয়াড়। একজন ভারতের হয়ে ও একজন কানাডার হয়ে হকি অলিম্পিকে খেলেছেন অতীতে। সেই বলজিৎ সিংহ সাইনি ও জগদীশ গিল বলছেন, ‘‘বাংলার হকিতে সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই কলকাতা ছেড়েছিলাম। তার পরেই জাতীয় দলে জায়গা পাই। বাংলার হকির খোলনলচে বদলানোর সময় এসেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy