ফাইল চিত্র।
শিক্ষকতা করতে হলে বিএডের মতো প্রশিক্ষণের ডিগ্রি থাকতেই হবে। বিদেশে স্নাতক স্তরে পঠনপাঠনের সঙ্গেই এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ রাজ্যেও স্নাতকের সঙ্গে বিএড ইন্টিগ্রেটেড কোর্স বা সংহত পাঠ্যক্রম পড়ানো শুরু হবে। রাজ্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী বছর যাতে এই কোর্স চালু করা যায়, সেই বিষয়ে এখন প্রস্তুতি চলছে।
এমনিতে বিএড দু’বছরের পাঠ্যক্রম। তবে যাঁরা স্নাতকের সঙ্গে সংহত বিএড পাঠ্যক্রম পড়বেন, তাঁদের মোট চার বছর পড়তে হবে। তাঁদের ডিগ্রির নাম হবে বিএ-বিএড, বিএসসি-বিএড বা বিকম-বিএড। পঠনপাঠন চলবে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ পদ্ধতিতে। সাধারণ ডিগ্রি কলেজে স্নাতক অনার্স ও পাশ কোর্সের পাঠ্যক্রম যেমন চলে, তেমনই চলবে। তার পাশাপাশি স্নাতক ও বিএডের সংহত পাঠ দেওয়া হবে বিএড কলেজের নতুন এই কোর্সে। সেখানে অনার্সের সঙ্গে সঙ্গে বিএড ডিগ্রি মিলবে। এমনিতে তিন বছরের অনার্সের পরে বিএড পড়তে হলে দু’বছর বাড়তি সময় লাগে। নয়া পাঠ্যক্রমে পড়ুয়াদের একটি বছর বাঁচবে। চার বছরেই তাঁরা একসঙ্গে অনার্স ও বিএড ডিগ্রি পেয়ে যাবেন।
উপাচার্য সোমাদেবী জানান, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) চাইছে, এই ধরনের কোর্স চালু হোক। কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকারও এ বিষয়ে খুবই উৎসাহী। এই কোর্স করা থাকলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে আলাদা ভাবে আর কোনও প্রশিক্ষণ নিতে হবে না। এনসিটিই ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে ওয়ার্কশপ করেছে। বিদেশে যে-ভাবে এই ধরনের কোর্স পড়ানো হয়, সেই ধাঁচে দেশেও এমন সংহত পাঠ্যক্রম চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে এনসিটিই। তারই অঙ্গ হিসেবে এ রাজ্যে চালু হচ্ছে এই কোর্স।
পশ্চিমবঙ্গের মোট ৪২৮টি বিএড কলেজ আছে রাজ্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। সোমাদেবী জানান, বেশ কিছু বিএড কলেজ সংহত পাঠ্যক্রম চালু করার জন্য ইতিমধ্যেই তাঁদের কাছে আবেদন জানিয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে সেই সব কলেজে এই কোর্স পড়ানোর তোড়জোড় চলছে। কিন্তু সেই সব কলেজে এই কোর্স চালু করার পরিকাঠামো আদৌ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেই জন্য দফায় দফায় কর্মশালা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
এনসিটি এই পাঠ্যক্রম চালুর বিষয়ে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট ভাবেই বলা হয়েছে, দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পরে এই পাঠ নেওয়া যাবে। এই পাঠ্যক্রমে ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। উপাচার্য অবশ্য জানাচ্ছেন, রাজ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের যে-সব পাঠ নিতে হবে, তার তালিকা তৈরি। সেই পাঠ্যসূচি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং এনসিটিই-র কাছে পাঠানো হয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘‘এটা খুবই স্পেশ্যালাইজড কোর্স (বিশেষ লক্ষ্য-নির্ভর পাঠ্যক্রম)। ধীরে ধীরে সব বিএড কলেজেই এই সংহত পাঠ চালু করার পরিকল্পনা আছে।’’
এটা কতটা স্পেশ্যালাইজড কোর্স, তা বোঝাতে এনসিটিই-র তরফে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তুলনা টানা হয়েছে। তারা বলছে, শিক্ষকতাকেই যাঁরা পাখির চোখ করে এগোতে চান, এই পাঠ্যক্রম তাঁদের জন্য। শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, এটি খুবই সময়োপযোগী ও কার্যকর পাঠ্যক্রম। এতে স্নাতক পড়ুয়ারা কম সময়ে শিক্ষকতার ডিগ্রি হাতে পাবেন। তারও আগে বিএড কলেজে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠনের জন্য নতুন নিয়োগ করতে হবে। সেখানে বেশ কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সংহত পাঠ্যক্রম শুরু তো হচ্ছে, বিএড কলেজগুলিতে তা চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy