Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Swami Vivekananda

বাংলার ভোটে চোখ রেখেই কি স্বামীজিকে নিয়ে এত ধুমধাম বিজেপি-র

রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক ধাপ এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, বঙ্গে পরিবর্তনের জন্য বিবেকানন্দই তাঁদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

বিধান সরণিতে বিবেক জয়ন্তী পালন বিজেপি-র।

বিধান সরণিতে বিবেক জয়ন্তী পালন বিজেপি-র।

ভাস্কর মান্না
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:১১
Share: Save:

রাজ্যে ভোট আসছে। তার আগে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালনে কোনও খামতি রাখতে চাইল না বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব— স্বামীজির ১৫৮তম জন্মদিবস পালনে শামিল সকলেই। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো এক ধাপ এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, বঙ্গে পরিবর্তনের জন্য বিবেকানন্দই তাঁদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যা দেখে তৃণমূল নেতৃত্বের খোঁচা, ভোট আসছে বলে বিবেকানন্দের কথা এখন ওদের মনে পড়ছে। আর বামেদের মতে, বিজেপি বিবেকানন্দের ধর্ম সংক্রান্ত ধারণাটাই গুলিয়ে দিতে চাইছে।

স্বামীজির জন্মদিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় যুব উৎসব’-এর সূচনা করেন। তাঁর সরকারের আমলে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। মোদী বলেন, “বিবেকানন্দ আমাদের সকলের অনুপ্রেরণা। তিনি ভারতের শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। আধুনিক ভারত গঠনের জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক ছিল।’’ ওই বক্তৃতায় যুবদের উদ্দেশে একের পর এক বার্তা দেন মোদী। যুব ও মানব সমাজে ‘বাংলার অন্যতম মহাপুরুষ’ বিবেকানন্দের গুরুত্ব কতটা তারও উল্লেখ করেন তিনি।

গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বিবেকানন্দের জন্মদিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব কলকাতাতেও বিবেক জয়ন্তী পালন করেন। সকালে সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজির জন্মস্থানে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেল, উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা। পরে দলীয় পতাকা ছাড়া বিজেপি-র যুব মোর্চার ডাকে একটি মিছিল বার হয় বাগবাজার স্ট্রিট থেকে সিমলা স্ট্রিট পর্যন্ত। সেই মিছিলে হাঁটেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ-সহ বিজেপি নেতারা।

আরও পড়ুন: ‘সুদীপ্তর থেকে কোটি টাকা ঘুষ’! শোভনকে গ্রেফতারের দাবি কুণালের

আরও পড়ুন: ‘ক্ষুব্ধ’ রেজিনগরের সেই হুমায়ুন, এ বার তোপ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে

গত বছরও বিবেক জয়ন্তী পালন করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাতে এ বছরের মতো এত আড়ম্বর ছিল না। তবে কি এ বার বাংলা ভোটের কারণেই এত আড়ম্বর? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, শুধুমাত্র বাংলায় নয়, কোনও রাজ্যে ভোট এলে সে রাজ্যের ভূমিপুত্রদের বরাবর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে গেরুয়া শিবির। বাংলার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হচ্ছে না। বিজেপি-র এই বিবেকানন্দ স্মরণকে ‘ভোটের দিকে তাকিয়ে’ বলে মনে করছে তৃণমূলও। সিমলা স্ট্রিটের বাড়িতে মঙ্গলবার স্বামীজিকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ বছর স্বামীজির প্রতি বিজেপি যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে, অন্য বছর তো তা দেখা যায় না। আমরা প্রতি বছর এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসি। তখন কাউকে দেখতে পাই না। তবে ভাল লাগছে এখন বিবেকানন্দের কথা ওদের মনে পড়েছে। স্বামীজির আদর্শ মেনে চললে ভাল।”

বামেদের মতে, বিবেকানন্দের আদর্শটাই গুলিয়ে ফেলেছে বিজেপি। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ওরা আসলে গুলিয়ে দিতে চাইছে। ১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন বিবেকানন্দ। তিনি সনাতন হিন্দু ধর্মের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও ঔদার্যের নতুন বার্তা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু মোদীজির হাতে সেই হিন্দু ধর্মকেই বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। তাঁদের আচরণ তো ধর্মকে অসম্মান করে। ওঁদের সঙ্গে বিবেকানন্দের ধর্ম সংক্রান্ত ধারণার কোনও মিল খুঁজে পাওয়া ভার।’’

তবে আসন্ন ভোটের কারণেই যে বিবেকানন্দ শরণ, তার আভাস মিলেছে বিজেপি নেতাদের কথাতে। মঙ্গলবার সৌমিত্র খাঁ বলেন, ‘‘বিবেকানন্দ যুব সমাজকে যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা নিয়েই যুবকদের এগিয়ে চলার কথা বলি আমরা। এ ছাড়া স্বামীজি হিন্দু ধর্ম নিয়ে যে প্রচার করেছিলেন, সেটাকেও আমরা অনুসরণ করি।’’ আর দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘বাংলায় পরিবর্তনের জন্য বিবেকানন্দই আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE