—ফাইল চিত্র।
দু’বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের তখনকার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া একটি নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার শুক্রবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘কী ভাবে চলছে রাজ্য?’’
সরকারকে দুরমুশ করার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের আমলাদেরও কঠোর সমালোচনা করেছে উচ্চ আদালত। একটি আপিল মামলার শুনানিতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তলব করা হয়েছে। সেই তলবি নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য অ্যাডভোকেট জেনারেল এ দিন সকালে আবেদন জানান বিচারপতি সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সমাদ্দার প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যের আমলারা কি মনে করেন, বিচারপতিরা তাঁদের হাতের পুতুল?
হাইকোর্টের খবর, দার্জিলিঙের একটি চা-বাগানের কর্তৃপক্ষ বছর দশেক আগে ‘টি-টুরিজম’ প্রকল্প রূপায়ণের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি চান। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। ২০০৮ সালে তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাগান-কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে গঠিত হয় গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। ২০১৫-র ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু চা-বাগান কর্তৃপক্ষের মামলায় জিটিএ-কে নির্দেশ দেন, পর্যটন প্রকল্পটি বিবেচনা করা হোক। রাজ্যের তরফে জিটিএ-কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, প্রকল্প বিবেচনা করবে সরকারই। বিচারপতি বসুর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৩৪০ দিনের পরে আপিল মামলা দায়ের করে রাজ্য।
কিন্তু এত দিন পরে আপিল মামলা করা হল কেন, মামলার আবেদনে সরকার তা আদালতকে জানায়নি। ২০১৬ সালের ২৭ জুন হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এক নির্দেশে মন্তব্য করেন, যে-অফিসারের গাফিলতিতে আপিল মামলা দায়ের করতে এত দেরি হয়েছে, তিনি রাজ্য সরকারের ‘বোঝা’। দেরির সবিস্তার কারণ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশও দেন প্রধান বিচারপতি চেল্লুর।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, তার পরেও ওই অফিসার হলফনামা জমা দেননি। ইতিমধ্যে আপিল মামলাটি বিচারপতি সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে যায়। গত ১৯ জুলাই মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এজি-কে আদালতে হাজির হতে হবে। ২৭ জুলাই এজি-র উপস্থিতিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিচারপতি চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ কার্যকর হয়নি কেন, তার সন্তোষজনক জবাব না-পেলে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আদালতে ডেকে পাঠানো হবে। সরকারি কৌঁসুলি তপন মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চে একটি হলফনামা জমা পড়ে। ওই হলফনামা দিয়েছেন দিবাকর মুখোপাধ্যায় নামে এক অফিসার। তিনি ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের সচিব। ওই হলফনামা পড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, ৭ অগস্ট, মঙ্গলবার মুখ্যসচিবকে আদালতে হাজির হতে হবে।
এ দিন সকালে ডিভিশন বেঞ্চ বসতেই সেই নির্দেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানান এজি। তার পরেই রাজ্য কী ভাবে চলছে এবং হাতের পুতুল সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সমাদ্দার। এজি জানান, মুখ্যসচিব তাঁর মক্কেল। তাঁকে আইনি সাহায্য দেওয়া এজি-র কাজ। ডিভিশন বেঞ্চ এজি-র আবেদন মেনে নেয়নি। তারা জানিয়েছে, এজি-র আবেদনের শুনানি হবে ৬ অগস্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy