অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
সিবিআই বনাম রাজীব কুমার— স্নায়ুযুদ্ধ মঙ্গলবার পৌঁছে গেল টানটান পর্যায়ে। সোমবারই সিবিআইয়ের এক শীর্ষ আধিকারিক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তাঁরা আর রাজীব কুমারকে নিয়ে ‘লুকোচুরি’ খেলায় আগ্রহী নন। তাঁরা চান একটা এসপার-ওসপার। সোমবার রাতেই ওই শীর্ষ সিবিআই কর্তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনারকে তাঁর চাহিদা মতো আর বাড়তি সময় দিতে রাজি নন তাঁরা। হয় তাঁকে অবিলম্বে সিবিআই দফতরে এসে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে, নইলে ‘অন্য পন্থা’ নেবে সিবিআই।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা যখন রাজীব কুমারকে নিয়ে জাল গোটানোর তোড়জোড় করছে, তখন বসে নেই রাজ্য পুলিশের দুঁদে ওই অফিসারও। সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশে তিনি গিয়েছিলেন পারিবারিক কারণে নয়, বরং খুবই ব্যক্তিগত প্রয়োজনে! রাজীব ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের দাবি, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি দরবার করার চেষ্টা করেছেন ওই রাজ্যের শীর্ষ রাজনীতিবিদের সঙ্গে। তাঁর হাতের নাগালে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরও। রাজীবের মরিয়া চেষ্টার খবর এসেছে সিবিআই আধিকারিকদের কানেও। তাই রাজীব নিয়ে আর টালবাহনা করতে রাজি নন তাঁরা।
সোমবার রাত পর্যন্ত সিবিআই আধিকারিকরা ‘অন্য পন্থা’টা ঠিক কী, তা নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে এ দিন সকালে সারদা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের ইওডাব্লু-৪ এর এসপি পার্থ মুখোপাধ্যায় এবং মামলার বর্তমান তদন্তকারী আধিকারিক তথাগত বর্ধন হাজির হন বালিগঞ্জের যামিনী রায় রোডে ওয়াই জে দস্তুরের বাড়িতে। কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম নামী আইনজীবী হিসাবে পরিচিত দস্তুরের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা আইনি পরামর্শ করেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রের ইঙ্গিত, তাঁরা রাজীব কুমারকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়, পরবর্তীতে তাঁকে তলব করা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজীবের দেওয়া চিঠি— সমস্ত ঘটনাই জানান বর্ষীয়ান ওই আইনজীবীকে। এই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী আইনি জটিলতা বা চ্যালেঞ্জ সিবিআইয়ের সামনে আসতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। সিবিআই এই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে কি না তা নিয়েও আলোচনা হয়।
মঙ্গলবার সিবিআই দফতরে সিটের সদস্য প্রভাকর নাথ। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: মোদীর শপথে ডাকা হবে ইমরানকে, আশাও করিনি, বললেন পাক বিদেশমন্ত্রী
সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদনের ক্ষেত্রে কোনও আইনি সমস্যা নেই সিবিআইয়ের সামনে। তাঁরা ওই পথ খোলা রাখছেন। সিবিআই সূত্রেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, সিবিআই আধিকারিকরা দস্তুরের সঙ্গে কথা বলে এ দিনই বারাসত আদালতে যাবেন। সেখানে তাঁরা জেলা বিচারকের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার তাঁরা বারাসত যাননি। এ দিন সিবিআই আধিকারিকরা রাজ্য পুলিশের সিট-এর অন্যতম তদন্তকারী আধিকারিক প্রভাকর নাথকে তাঁদের দফতরে তলব করেন। প্রভাকর সারদা তদন্তের সময়ে ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিউটাউন থানায় কর্মরত। এ দিন তাঁর কাছে ওই সময়ের তদন্ত সংক্রান্ত কিছু নথি চাওয়া হয়। সকালে এক দফা প্রভাকর নাথের সঙ্গে কথা বলার পর ফের বিকেলে ওই পুলিশ আধিকারিক সিবিআই দফতরে যান। সিবিআই সূত্রে খবর দ্বিতীয় দফায় তাঁকে সিট এবং তার কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। এ দিন বিকালে সিবিআইয়ের একটি দল ভবাণী ভবনে যান সিআইডি দফতরে চিঠি দিতে। তাঁরা সিআইডিকে কোন বিষয়ে চিঠি দিলেন তা নিয়ে মুখ খোলেননি সিবিআই আধিকারিকরা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন ওই চিঠি কোনও নোটিস নয়।
আরও পড়ুন: পদে ফিরতে নারাজ রাহুল, প্রিয়ঙ্কা-সহ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, বাড়ছে উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা
অন্য দিকে, এ দিনও রাজীব কুমারের পক্ষ থেকে আগাম জামিন নেওয়ার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। বারাসত জেলা আদালত ছাড়াও, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের সামনেও কোনও আবেদন জমা পড়েনি পুলিশ কর্তার তরফ থেকে। আর সেখান থেকেই আইপিএস মহলের একাংশের ধারণা ‘আদালতের বাইরে বোঝাপড়া’-র চেষ্টায় রাজীব কুমার। তবে এই মুহূর্তে সেটা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের একাংশ। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজীব কুমারের বর্তমান পোস্টিং নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ নির্বাচন কমিশন তাঁকে শেষ দফা নির্বাচনের আগে তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত করে এবং তাঁকে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেন। নির্বাচনী আচরণ বিধির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই তাঁকে আগের এডিজি সিআইডি পদে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় রাজ্য। কিন্তু সূত্রের খবর, রবিবার সেই নির্দেশ নবান্ন দিলেও এখনও তিনি সেই পদে যোগ দেননি। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য নির্দিষ্ট পদে যোগ দিতে গেলে রাজীব কুমারের প্রয়োজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিলিজ অর্ডার। সেই ছাড়পত্র তিনি এখনও পাননি। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে রাজীব কুমারকে ‘রিলিজ’ করার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy