Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আয়ুষ্মানের চিঠির খোঁজ নিতে ডাকঘরে গোয়েন্দা 

‘আয়ুষ্মান ভারত’ নিয়ে কেন্দ্র-রা়জ্য দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই প্রকল্প থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন্দ্রের চিঠির লোগো(ইনসেটে) নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মমতার। ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রের চিঠির লোগো(ইনসেটে) নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মমতার। ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

‘আয়ুষ্মান ভারত’ নিয়ে কেন্দ্র-রা়জ্য দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই প্রকল্প থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের অফিসাররেরা বিভিন্ন জেলার ডাকঘরে গিয়ে কত সংখ্যক উপভোক্তার বাড়িতে ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের চিঠি পৌঁছেছে, তা জানতে চান। ডাক বিভাগের সদর দফতর যোগাযোগ ভবনেও যান গোয়েন্দা কর্তারা। ডাক বিভাগ অবশ্য রাজ্য পুলিশকে কোনও তথ্য দেয়নি। উল্টে কেন্দ্র আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড পাঠালে ডাকঘর তা বিলি করবে বলেই জানানো হয়েছে।

সূত্রের খবর, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের আওতায় যাঁদের আনা হচ্ছে, গত এক মাস ধরেই তাঁদের বাড়িতে স্পিড পোস্ট মারফৎ চিঠি পৌঁছচ্ছে। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের লালবাগের এক ডাকঘর থেকে চিঠি বিলি হচ্ছে বলে প্রথম খবর পান মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে খোঁজ নিয়ে রাজ্য সরকার জানতে পারে, সব জেলাতেই এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি সম্বলিত ‘এনটাইটেলমেন্ট লেটার’ পৌঁছেছে। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিনহা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি লিখে সে কথা জানিয়েও দেন। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে মউ সই হয়েছিল, তা না-মেনে দিল্লি সরাসরি উপভোক্তাদের চিঠি পাঠাচ্ছে। সেই কারণেই রাজ্য আর প্রকল্পে থাকবে না।

যদিও ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের রূপায়ণের দায়িত্বে থাক‌া ন্যাশনাল হেলথ এজেন্সি (এনএইচএ) রাজ্যের অভিযোগ মানতে চায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারও পাল্টা চিঠি লিখে রাজ্যের অভিযোগ খণ্ডন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনএইচএ-র ডেপুটি সিইও দীনেশ অরোরা বলেন, ‘‘কোনও কার্ড বিলি করা হয়নি। উপভোক্তাদের শুধু একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাঁদের কার্ড বিলি করার কথা রাজ্যেরই।’’

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, ২০১৭-এ যখন ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু হয়, তখন রাজ্যের প্রায় ৫২ লাখ পরিবার তাতে যুক্ত ছিলেন। এই প্রকল্পে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুবিধা ছিল। এর পর ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ জোগাত রাজ্য। ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এ যুক্ত হওয়ার পরে রাজ্যে উপভোক্তার সংখ্যা হয়েছিল ১ কোটি ১২ লক্ষ পরিবারের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ। আর্থ সামাজিক জাতি সমীক্ষা (এসইসিসি)-র মাধ্যমে তাঁদের বাছা হয়। ৫ লাখ টাকা বিমার সুবিধাযুক্ত এই প্রকল্পের মোট প্রিমিয়াম ১২০০ কোটি টাকা। যার ৬০ ভাগ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের জন্য প্রিমিয়াম বাবদ খরচ ছিল ৩০০ কোটির মতো। রাজ্য ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এ যোগ দেওয়ার পরে কেন্দ্র উপভোক্তাদের তালিকা রাজ্যকে পাঠায়। রাজ্য সরকার দরপত্র চেয়ে বিমা সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এর মধ্যেই উপভোক্তাদের নামে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে এনএইচএ। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে।

রাজ্য চায় এখনই চিঠি বিলি বন্ধ হোক। সে জন্য এক দিকে গোয়েন্দারা যেমন তথ্য সংগ্রহ করছেন, তেমনই ডাক কর্মীরা যাতে চিঠি বিলি করতে না-পারেন সেটা দেখার জন্য দলীয় স্তরে নির্দেশ গিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘ভোটের আগে এক কোটি পরিবারে পাঁচ লাখি বিমার চিঠি বিলি হলে বিপদ রয়েছে। আর প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার পর ডাক বিভাগ চিঠি বিলি করতেই পারে না।’’

রাজ্যের পোস্টমাস্টার জেনারেল (মেলস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) কৌশলেন্দ্রকুমার সিনহা অবশ্য বলেন, ‘‘চিঠির ভিতরে কী আছে, আমরা জানি না। ডাক বিভাগের কাজ চিঠি বিলি করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE