Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ঘরে শিশু, ভয়ে ছুঁতে পারেন না করোনা-যোদ্ধা মা

ভাইরাসের ভয়ের সঙ্গেই সামনের সারিতে থেকে রোজ লড়ছেন অমৃতা কর্মকার।

ছেলের সঙ্গে অমৃতা। নিজস্ব চিত্র

ছেলের সঙ্গে অমৃতা। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৩:২৯
Share: Save:

হাসপাতাল থেকে মা ফিরলেই কোলে উঠতে চায় একরত্তি ছেলে। প্রাণ কাঁদলেও সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে ছুঁতে পারেন না মা। ভয়ে। দেড় বছরের ছেলেকে রেখেই টানা দশ দিন হোটেলে কোয়রান্টিনে ছিলেন। ইচ্ছে হত, ছুটে বাড়ি চলে যেতে। যাননি। ভয়েই।

ভাইরাসের ভয়ের সঙ্গেই সামনের সারিতে থেকে রোজ লড়ছেন অমৃতা কর্মকার। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের সহকারী সুপার বিশ্বাস করেন, এই লড়াইয়ে জয় আসবেই। ‘‘শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমি তো একা নই, সবাই মিলে আমরা লড়াই করছি’’ মাতৃদিবসে প্রত্যয়ী মায়ের গলা।

রবিবার অবশ্য বাড়িতেই থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন অমৃতা। বললেন, ‘‘টানা ২১ দিন পরে এই দিনটা ছুটি পেয়েছি বলে ভাল লাগছে।’’ সারা দিনই কাটিয়েছেন ছেলের সঙ্গে। তিনি না থাকলে ছেলেকে সামলান বাবা-মা ও স্বামী সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতায় আইটি সেক্টরের কর্মী সৌরভও আপাতত সিউড়িতে। সিউড়িরই মেয়ে, হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রিধারী অমৃতা ১৮-র অগস্ট থেকে জেলা হাসপাতালের সহকারী সুপার পদে যোগ দিয়েছেন। করোনা মোকাবিলার নীল নকশা তৈরি হওয়ার পর থেকেই কাজের চাপ বাড়ে। বিদেশ থেকে বা সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তেমন কোনও রাজ্য থেকে জেলায় ফিরে জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গের রোগী সামলাতে জেলা হাসপাতালে ফিভার ওয়ার্ড তৈরি হয়। প্রাথমিক ভাবে সেই ওয়ার্ডের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই।

আরও পড়ুন: বেশি মিউটেশনেই কি মৃত্যু বেশি কলকাতায়

অমৃতার কথায়, ‘‘বাইরে থেকে কে সংক্রমণ নিয়ে আসছেন বলা শক্ত। নার্স-ডাক্তারদের সঙ্গে পরিদর্শনে প্রতিদিনই ওই ওয়ার্ডে যেতে হবে জেনে নিজেকে পরিবার থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিই।’’ দিন দশেক শহরের একটি হোটেলে হাসপাতালের বাকিদের সঙ্গে কোয়রান্টিনে ছিলেন তিনি। অমৃতার কথায়, ‘‘ওই ক’টা দিন কী ভাবে কেটেছে, বলে বোঝাতে পারব না। ফোনে শুনতাম, ছেলে খুব কান্নাকাটি করেছে। ইচ্ছে হত, চলে যাই।’’ হাসপাতালের সুপার শোভন দে-ও বলছেন, ‘‘অমৃতার মতো অনেকেই নিজেদের সন্তানকে বাড়িতে রেখে কাজ করে চলেছেন। যেটা খুব কঠিন।’’

আরও পড়ুন: হাওড়ায় আক্রান্ত আরও দুই পুলিশকর্মী

এখন আইসোলেশন ওয়ার্ড তদারকির দায়িত্ব অমৃতার। সম্ভাব্য করোনা রোগীদের রাখা হচ্ছে সেখানে। সকাল ১০টায় বেরিয়ে ফেরেন রাত ৮টায়। সমস্ত পোশাক বদলে স্নান করে তবেই ছেলের কাছে যান। অমৃতা বলছেন, ‘‘জয়ী আমরা হবই।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Mother's Day 2020 Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE