Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

দলের ধমক খেয়েই মিডিয়ার ঘাড়ে দায় চাপালেন অনুপম, ‘কেষ্টকাকু’ ২৪ ঘণ্টাতেই ‘কেষ্টদা’

মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে অনুপমের যুক্তি, ‘‘ওই পার্টি অফিসেই একটি বড় কালী মন্দির রয়েছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন মানুষ পুজোর ভোগ খান। আমিও সেটাই খেয়েছি।’’

সোমবার অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপম হাজরা। —ফাইল চিত্র

সোমবার অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপম হাজরা। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:০০
Share: Save:

ভোটের বাজারে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করে আচমকাই জল্পনা তৈরি করেছিলেন যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন দলকে। দলীয় নেতৃত্বের কাছে সে জন্য ধমকানিও খেতে হয় তাঁকে। যার ফল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গোটা বিষয়টির দায় তিনি চাপিয়ে দিলেন অন্যের ঘাড়ে। অভিযোগ করলেন, সবটাই সংবাদ মাধ্যমের ‘চক্রান্ত’।

সোমবার বীরভূমে ভোট দিতে গিয়েছিলেন অনুপম।ভোট দিয়েই তিনি সটান চলে গিয়েছিলেন বোলপুরের তৃণমূল কার্যলয়ে। সেখানে অনুব্রতকে প্রণাম করার পাশাপাশি পাত পেড়ে মধ্যাহ্নভোজও সেরেছিলেন। কিন্তু, মঙ্গলবার কলকাতায় বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে সেই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়েসংবাদ মাধ্যম‘চক্রান্ত’ করেছে বলে অভিযোগ করলেন অনুপম। যাঁর রাজ্যসভার টিকিটের কথায় ‘না’ করেননি অনুপম, সেই অনুব্রতকেই এ দিন ‘ওঁর পোর্ট ফোলিওটা কী’ প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। অনুব্রতকে বীরভূমের ‘ডিএম-এসপি’ বলে পাল্টা আক্রমণও করেছেন।

সম্প্রতি মাতৃবিয়োগ হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের। এ দিন অনুপম দাবি করেন, সেই কারণেই তিনি তাঁকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের সামনেই অনুব্রত তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘খেয়েছিস? এখান থেকে খেয়ে যাস।’’ ‘কাকু’র কথা শুনে তাঁকে দিব্যি পাত পেড়ে খেতে দেখা যায়। সে ছবিও সংবাদমাধ্যমে ধরা পড়েছিল। ওই সাক্ষাৎপর্বের কথোপকথনে ওঠে রাজনৈতিক প্রসঙ্গও। ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন অনুপম। তবে, জেলা সভাপতি অনুব্রতর সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে নাম লেখান তিনি। ‘কেষ্টকাকু’র সঙ্গে তাঁর ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল একটা সময়ে, সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন মন্তব্যও করেন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর সামনেই অনুব্রতকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওকে দরকার হলে ফিরিয়ে নিতে পারি। রাজ্যসভা তো ফাঁকা আছে। দিদিকে বলে রাজ্যসভার টিকিট দিয়ে দিতে পারি।’’ সেই সময় অনুপমকে কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি। স্মিত হাসতে দেখা যায়।এ সব নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা শুরু হয়, তবে কি তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনার দরজা খোলাই রাখলেন অনুপম?

আরও পডু়ন: রাজীবের গ্রেফতারির আবেদন, সিবিআইয়ের কাছে তথ্য লোপাটের প্রমাণ চাইল সুপ্রিম কোর্ট

আরও পড়ুন: হিমালয়ে ইয়েতি! বরফের বুকে বিশাল পায়ের ছাপ, ছবি শেয়ার করে এমনই জানাল ভারতীয় সেনা

এ সব প্রশ্ন উঠতেই এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেন মুকুল রায় এবং অনুপম হাজরা। অনুপম বলেন, ‘‘আমি সংবেদনশীল মানুষ। অত রাজনীতি বুঝি না। ওঁর (অনুব্রত মণ্ডল) মা মারা গিয়েছেন সম্প্রতি। আমি কেষ্টদাকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর দাবি, আগে থেকেই যে ওখানে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছিলেন, তা তিনি জানতেন না। একই সঙ্গে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, ‘‘যখন অনেক পরিশ্রম করে, ঘাম ঝরিয়ে যাদবপুর কেন্দ্রকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছি, তখন একটা মৃত্যু নিয়ে এ রকম রাজনৈতিক রং চড়ানোর পুরোটাই চক্রান্ত। পরিকল্পনা করে এই কাজ করা হয়েছে। একজনের মৃত্যু নিয়েও যে এ রকম রাজনীতি হতে পারে, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।’’

কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ, ভোটের দিন অনুব্রতর গতিবিধির খবর রাখতে যে সংবাদ মাধ্যম তাঁকে অনুসরণ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তার উপর অনুব্রত আবার কমিশনের নজরবন্দি ছিলেন। ফলে তাঁর সঙ্গে সব সময় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা থাকবেন, এটা বোঝার জন্য তুখোড় রাজনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবু সেই ভোটের দিনই তিনি সটান ‘শত্রু’পক্ষের দলীয় কার্যালয়ে চলে গেলেন!

অনুব্রতর মন্তব্যে কেন সরাসরি ‘না’ করলেন না অনুপম— সেই প্রশ্ন এদিনও উঠেছে। কিন্তু অনুপমের জবাব, ‘‘ওখানে আমি রাজনীতি করতে যাইনি। দীর্ঘদিন ধরে ওখানে আমার যাতায়াত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে (অনুব্রত মণ্ডলের মা) চিনি। তাঁর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। তাই কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করিনি।’’ আর মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে অনুপমের যুক্তি, ‘‘ওই পার্টি অফিসেই একটি বড় কালী মন্দির রয়েছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন মানুষ পুজোর ভোগ খান। আমিও সেটাই খেয়েছি।’’

তৃণমূল বা অনুব্রতর প্রতি তাঁর যে কোনও দুর্বলতা নেই, সেটা বোঝাতে এদিন অনুব্রতকে পাল্টা আক্রমণও করেন অনুপম। বলেন, ‘‘আমি বহু দিন আগেই বলেছিলাম, বীরভূমে ডিএম, এসপি সবই অনুব্রত। তাঁর সঙ্গে সঙ্ঘাতেই আমি দল ছেড়েছি। ফলে এই সাক্ষাতের মধ্যে অন্য কোনও কিছু খুঁজতে যাওয়া বৃথা।’’ মুকুল রায়ও পরে বলেন, ‘‘অনুপম বাচ্চা ছেলে। ওঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।’’ যদিও রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, দলের চাপেই এই ব্যাখ্যা দিতে হল অনুপমকে।

এ বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘আমার কাছে এসেছিল। প্রণাম করেছে। আশীর্বাদ করেছি। আমি ওকে বলি, তুই যাদবপুরে জিতবি না। দিদিকে বলে রাজ্যসভার এমপি করে দেব। খেতেও বলেছিলাম। না খেয়ে পাঠানোটা উচিত নয়।’’

কিছুদিন আগে রাজ্য রাজনীতিতে প্রায় একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তর বাড়িতে ‘লুচি-আলুর দম’ খেতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চরম জল্পনা ছড়ায় যে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বিধাননগর পুরসভার মেয়র। কিন্তু সব্যসাচীকেও পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে ঘোষণা করতে হয়, তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনাটা জল্পনাই, বাস্তব ভিত্তি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE