মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান সম্পর্কে আপত্তিকর ইঙ্গিত রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে।
ফের বেফাঁস দিলীপ ঘোষ। যাদবপুর এবং বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থীদের সম্পর্কে আপত্তিকর ইঙ্গিত রাজ্য বিজেপির সভাপতির মন্তব্যে। মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান সম্পর্কে গত কয়েক দিন ধরে যে সব কুরুচিকর মিম এবং পোস্ট ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওই দুই প্রার্থীর ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন দিলীপ। গোটা রাজনৈতিক শিবিরে দিলীপের এই মন্তব্যের নিন্দা শুরু হয়েছে।
দুই টলি তারকা মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন। প্রার্থী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তাঁদের নিয়ে নানা ঠাট্টা-তামাশা, যেগুলির অধিকাংশই অত্যন্ত কুরুচিকর। তাঁদের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে আপত্তিকর ভঙ্গিতে। অন্য সব পেশার মানুষ যদি রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন, তা হলে ফিল্ম ইনডাস্ট্রির কেউ পারবেন না কেন? মিমি-নুসরতদের হয়ে এই প্রশ্নও কেউ কেউ তুলতে শুরু করেছেন। কিন্তু কুরুচিকর মিম চালাচালির স্রোতে সে সব কণ্ঠস্বর ভেসে যাচ্ছে।
কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এই সব মিম তৈরি হচ্ছে, এমন নয়। কিন্তু শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যে ভাবে মিমি চক্রবর্তী বা নুসরত জাহানকে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা যে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা করবেন না, সে কথা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেই মিমি-নুসরত প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মবিশ্বাস কমে গিয়েছে বলেই মিমি-নুসরতদের প্রার্থী করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোথায় সুগত বসু, কোথায় মিমি! কোথায় ইদ্রিস আলি, কোথায় নুসরত!’’ এঁদের কী অবদান রয়েছে, এঁরা মানুষের জন্য কী করেছেন, এঁদের অভিজ্ঞতা কতটা— তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দিলীপ ঘোষ।
রাজ্য বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই মিমি-নুসরতদের সম্পর্কে ভেসে বেড়ানো মিমগুলির প্রসঙ্গও ওঠে সাংবাদিক সম্মেলনে? মিমি-নুসরতকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব চর্চা চলছে, সে সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়। তাতেই সুস্থ রুচির সীমা ছাড়িয়ে যান দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘চর্চা ওঁদের নিয়ে হবে না তো কি আপনাকে-আমাকে নিয়ে হবে? যাঁরা যে গোত্রের, যাঁদের চরিত্র যে রকম, তাঁদের নিয়েই চর্চা হয়। আপনাকে-আমাকে নিয়ে এই রকম চর্চা কখনও হবে না।’’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি তাতেই থামেননি। তিনি আরও বলেন, ‘‘কোথা থেকে আপনি এসেছেন, কোথা থেকে কোথায় পৌঁছেছেন, আপনাকে ভাবতে হবে তো। বাংলা কি এত ভিখারি হয়ে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা রেখেই ২৫ আসনে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা বামেদের
দিলীপের এই মন্তব্যকে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক শিবির। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলতে থাকা কুরুচিকর মিমগুলিকে দিলীপ ঘোষ কি তা হলে সমর্থন করেছেন? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নানা মহল থেকে।
বিজেপির সকলেও যে দিলীপের মতোই ভাবছেন, তা কিন্তু নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিমি-নুসরতকে অসংবেদনশীলতার শিকার হতে হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে শুক্রবার সকালেই প্রশ্ন করা হয়েছিল আর এক সেলিব্রিটি রাজনীতিক বাবুল সুপ্রিয়কে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাবুল কিন্তু সংবেদনশীলতার পরিচয় দেন। মিমি-নুসরতের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্রবণতাকে তিনি সমর্থন করেন না। বাবুল বলেন, ‘‘আমি নিজেও ফেসবুকে-টুইটারে এগুলো দেখেছি, আমার বন্ধুবান্ধবরা মজার ছলে সে সব আমাকেও পাঠাচ্ছেন। কিন্তু আমি মনে করি যে, যদি একজন ডাক্তারের ছেলে ভোটে নামতে পারেন, যদি একজন উকিলের ছেলে ভোটে নামতে পারেন, তা হলে ওঁরাও (মিমি-নুসরত) পারেন।’’ বাবুল সুপ্রিয় আরও বলেন, ‘‘মিমি এবং নুসরত আমার সহকর্মী, আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তাঁরা যদি ভোটে নামার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তাঁদের নিয়ে এই রকম কুরুচিকর মিম ছড়ানো উচিত নয়। আমি মানুষকে অনুরোধ করব, এটা করবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy