Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যে দিন থাকব না সে দিন বুঝবে, কর্মীদের সতর্ক করে বললেন মমতা

এ দিনের বৈঠকে দলের পুরনো নেতাকর্মীদেরও খোঁজ করেন তৃণমূলনেত্রী।

হুগলির দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মমতা। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে। নিজস্ব চিত্র

হুগলির দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মমতা। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

‘‘একা কত খাটব! আমি আর পারছি না। যে দিন থাকব না, সে দিন তোমরা বুঝবে’’—শুক্রবার তৃণমূল ভবনে এক দলীয় বৈঠকে এভাবেই তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের সতর্ক করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নির্বাচনী ফল নিয়ে জেলাভিত্তিক পর্যালোচনায় এদিন হুগলির নেতাদের ডেকেছিলেন তৃণমূলনেত্রী।তাঁর দলে যে তোলাবাজ শ্রেণি তৈরি হয়েছে, সে কথা ইদানিং প্রকাশ্যেই বলছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও এক ধাপ এগিয়ে এবার তিনি সেই তোলাবাজদের গ্রেফতারের হুমকি দিলেন।এদিন জেলা দলের পদাধিকারী ও জনপ্রতিনিধিদের তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘তোলাবাজি, দাদাগিরির অভিযোগ পেলে পুলিশ কিন্তু এবার গ্রেফতার করবে।’’

এদিনের বৈঠকে দলের পুরনো নেতাকর্মীদেরও খোঁজ করেন তৃণমূলনেত্রী। একাধিক ব্লক ও অঞ্চলের পুরনো নেতাদের বৈঠকে না দেখে জানতে চান, আমার সঙ্গে ১৯৯৮ সাল থেকে দল-করা নেতারা কোথায়? তাঁরা নেই কেন ? তাঁদের সকলকে ফিরিয়ে এনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতি ব্লকে এ ব্যাপারে মিটিং করে দেখে নিন।’’ এ ব্যাপারে বিশেষভাবে তৎপর হতে বলেন মন্ত্রী তথা জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতা ফিরহাদ হাকিমকে। শুধু তাই নয়, দল ছাড়া নিয়ে যে গুঞ্জন, সে ব্যাপারে নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা যেতে চান, চলে যান। দরজা খোলা আছে। কিন্তু দলে থেকে অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করবেন না।’’

পর্যালোচনা সভায় হুগলির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

ভোটের পর্যালোচনার জন্য ডাকা এদিনের বৈঠকে দলের একাংশের মধ্যেতোলাবাজি, কাটমানি নেওয়ার বিষয় সামনে আসে আসে সিঙ্গুরের সূত্রে। লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসনে বিজেপির কাছে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত সিঙ্গুর বিধানসভা আসনেও বিজেপির থেকে প্রায় ১৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। সেই সূত্রেই দলের নেতাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, সিঙ্গুরের মানুষের জন্য দল ও সরকার অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু তার সবটা মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। এই অবস্থার জন্য তিনি দলের একাংশকেই দায়ী করেছেন। শুধু তাই নয়, দলের রাজনৈতিক উত্থানের পিছনে মাইলফলক হয়ে থাকা সিঙ্গুরেইদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেও নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।সতর্ক করে দিয়েছেন বিবদমান বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের। জেলার দুই মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত ও অসীমা পাত্রকে ভর্ৎসনা করে মমতা বলেন, ‘‘তোমাদের জন্যই এই অবস্থা হয়েছে। লজ্জা করে না!’’ জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তর ক্ষমতা আরও কাটছাঁট করে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিন কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব, অসীমা পাত্র ও প্রবীর ঘোষালকে। এদিন দিলীপবাবুকে গোটা জেলাই দেখতে বলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর সঙ্গে থাকবেন বাকি দু’জন। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কেসতর্ক করে মমতা বলেন, ‘‘তুমি যে দায়িত্বে আছ সেটাই ঠিক করে কর। সব জায়গায় মাথা ঘামাতে যাবে না।’’

দলীয় সহকর্মীদের উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘‘তোমরা কী পাওনি? এমএলএ, এমপি, পুরসভা, পঞ্চায়েত সব পেয়েছ। তারপরেও কাজ কর না। মানুষের কাছে যাও না। ঠিক মতো সাহায্য পৌঁছয় না। তার জন্য দলের নির্বাচনী খারাপ হয়েছে। এরপর তোমরা কী আশা কর?’’

এদিন বৈঠকে উপস্থিত মোক্তার হোসেন নামে এক দলীয় কর্মীকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পুরষ্কৃত করেন মমতা। দলীয় সূত্রে খবর, ভোটের দিন তিনিই বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে বুথ আগলেছিলেন।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE