Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
tmc

তৃণমূল হতে হবে না, যুবযোদ্ধা হন: জনসংযোগ বাড়াতে অভিনব আহ্বান অভিষেকের

এটাই ছিল তৃণমূল যুব কংগ্রেস সুপ্রিমোর প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠক।

‘‘আমার সামর্থের মধ্যে যা কিছু করা সম্ভব,আমি করব’’— ভার্চুয়াল সভায় আশ্বাস রাজ্যের শাসক দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডের।  ফাইল চিত্র।

‘‘আমার সামর্থের মধ্যে যা কিছু করা সম্ভব,আমি করব’’— ভার্চুয়াল সভায় আশ্বাস রাজ্যের শাসক দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডের। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২০ ১৩:২৩
Share: Save:

যে দিন সূচনা হয়েছিল কর্মসূচিটার, অভিনবত্ব কিছুটা টের পাওয়া গিয়েছিল সে দিনই। ‘বাংলার যুবশক্তি’র প্রথম ভার্চুয়াল সভায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, কাজের ধরনও অভিনব হতে চলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে তৃণমূলের এই কর্মসূচি যে রাজনৈতিকই, তা নিয়ে কোনও সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রথম ভার্চুয়াল সভায় ‘যুবযোদ্ধা’দের অভিষেক জানালেন, এই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার জন্য তৃণমূলের ঝান্ডা ধরতে হবে না, তৃণমূলের স্লোগান দিতে হবে না, তৃণমূলের গুণগানও গেয়ে বেড়াতে হবে না। শুধু ১০টা করে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে, বিপদে-আপদে পাশে থাকতে হবে।

বুধবার বিকেলে এই ভার্চুয়াল সভাটি হয়েছে। যুবযোদ্ধাদের (বাংলার যুবশক্তিতে শামিলদের এই নামেই ডাকা হচ্ছে) নিয়ে এটাই ছিল তৃণমূল যুব কংগ্রেস সুপ্রিমোর প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠক। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে যুবযোদ্ধারা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমেই যুক্ত হয়েছিলেন সভায়। সভার সঞ্চালক হিসেবে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সোহম চক্রবর্তী কিন্তু অভিষেকের সঙ্গেই ছিলেন। অভিষেকের পাশে বসেই তিনি সভা পরিচালনা করেন। বাংলার যুবশক্তি নামের এই কর্মসূচি কেন শুরু করা হল, এর লক্ষ্য কী, যুবযোদ্ধাদের কাজ ঠিক কী হবে— এই সব প্রশ্ন কিছুটা সাক্ষাৎকারের ঢঙেই অভিষেকের সামনে রাখেন সোহম। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বিশদে উত্তর দেন প্রতিটি প্রশ্নেরই।
তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা বাংলার যুবশক্তির মুখ অভিষেক খুব স্পষ্ট করে বুধবার যুবযোদ্ধাদের জানিয়েছেন, এই কর্মসূচিতে থাকতে হলে দলের ঝান্ডা ধরে রাস্তায় নামা বা তৃণমূলের হয়ে মিটিং-মিছিল করে বেড়ানো বাধ্যতামূলক নয়। বরং তার কোনও প্রয়োজনই নেই। তা হলে প্রয়োজন কী? অভিষেক জানান, প্রয়োজন হল ১০টা করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারা। প্রত্যেক যুবযোদ্ধাকে ১০টা করে পরিবারের সঙ্গে নিরন্তর সম্পর্ক রেখে চলতে হবে, তাঁদের বিপদে-আপদে সাহায্য করতে হবে, তাঁদের সমস্যার কথা জেনে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

করোনা বা লকডাউনের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারেই সমস্যা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবেও রাজ্যের অনেকগুলো জেলা ক্ষতিগ্রস্ত। এই সঙ্কটের সময়ে রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়ানোই আপাতত বাংলার যুবশক্তির মূল লক্ষ্য বলে অভিষেক জানিয়েছেন। যুবযোদ্ধারা যে সব পরিবারের দায়িত্ব নেবেন, তাদের সমস্যার সমাধান যদি আটকে যায় বা যদি বাধা সৃষ্টি হয়, তা হলে সরাসরি তাঁকেই জানাতে বলেছেন অভিষেক। ‘‘আমার সামর্থের মধ্যে যা কিছু করা সম্ভব, আমি করব’’— ভার্চুয়াল সভায় আশ্বাস রাজ্যের শাসক দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডের।

আরও পড়ুন: তৃণমূলে যোগ

১১ জুন একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমেই বাংলার যুবশক্তির সূচনা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) পরিকল্পনাতেই এই নতুন কর্মসূচি। ‘দিদিকে বলো’ বা ‘বাংলার গর্ব মমতা’র মতোই জনসংযোগের আর একটা কর্মসূচি এই ‘বাংলার যুবশক্তি’। তবে ফারাকও রয়েছে। অন্য কর্মসূচিগুলোর মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটার মুখ অভিষেক। অন্য কর্মসূচিগুলোর রূপায়ণ ঘটানো হচ্ছিল দলের কর্মীদের কাজে লাগিয়েই। বাংলার যুবশক্তির রূপায়ণের জন্য সম্পূর্ণ নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যে সব তরুণ-তরুণীরা রয়েছেন, তাঁদেরই শামিল করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সকলকে তৃণমূলের সমর্থকই হতে হবে, এমন বাধ্যবাধতকা নেই, যে কোনও দলের সমর্থক এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন, অরাজনৈতিকরাও আসতে পারেন, শুধু সমাজসেবার ইচ্ছা থাকতে হবে— কর্মসূচির শুরুতে এ রকমই বলা হয়েছিল। এক মাসের মধ্যে ১ লক্ষ যুবযোদ্ধা খুঁজে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও ধার্য করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্র-ঐতিহ্য রক্ষায় সইব গুন্ডা অপবাদও: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূল যুব কংগ্রেসকে দিয়েই এই নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজটা করা হচ্ছিল। কিন্তু যে ভাবে শুরু থেকে একটা অরাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, বাংলার কোনও রাজনৈতিক দলকে আগে তেমন কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি। একটা কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য যে ভাবে সমান্তরাল নেটওয়ার্ক তৈরির ভাবনা নেওয়া হয়েছিল, সেটাও বেশ অভিনব। যুবযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অভিনবত্বের মোড়কটা ধরে রাখার চেষ্টা করলেন বুধবার। নাম না করে বিজেপি-কে আক্রমণ করলেন। বাংলার যুব সমাজের মধ্যে একটা দল উগ্রবাদী চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করলেন। সেই ‘উগ্রবাদ’ রোখার স্বার্থেই বাংলার যুবশক্তিতে যোগ দেওয়া প্রয়োজন— এমন ইঙ্গিতও দিতে চাইলেন। আর বাংলার যুবসমাজকে ‘উগ্রবাদ’ থেকে দূরে রাখার জন্যই যে এই কর্মসূচি, সেই তত্ত্বকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার জন্যই সম্ভবত বার বার বললেন— যুবযোদ্ধা হওয়ার জন্য তৃণমূল হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

এক মাসে ১ লক্ষ যুবযোদ্ধা জোগাড় করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও, সেই লক্ষ্য ১০ দিনেই পূরণ হয়ে গিয়েছিল বলে বুধবারের সভায় সোহম জানান। তিনি দাবি করেন যে, এই মুহূর্তে বাংলার যুবশক্তির সদস্য সংখ্যা ৬ লক্ষ। এই সদস্য সংখ্যাকে ২০ লক্ষে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Abhishek Banerjee Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE