শেষ শয্যায় নবনীতা দেবসেন। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
হিন্দুস্তান পার্কের বাড়ির বাইরে সকাল থেকেই ভিড়। প্রিয় ‘নবনীতাদি’কে দেখতে সাতসকালেই ‘ভাল-বাসা’র বাইরে জড়ো হয়েছেন শোকস্তব্ধ মানুষজন, পাড়াপড়শি, বিশিষ্টজনেরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা গিয়েছেন নবনীতা দেবসেন। খবরটা শোনার পর থেকেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হিন্দুস্তান পার্কে নবনীতার বাড়ি ‘ভাল-বাসা’য় ভিড় বেড়েছে। কিন্তু পরিবারের বাইরে কাউকেই ওই দিন সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার সকাল থেকে সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের মরদেহ রাখা ছিল তাঁর বাড়িতে। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। গিয়েছেন সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সাংসদ মালা রায়-সহ বহু বিশিষ্টজন। নবনীতার মৃত্যুতে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘সাহিত্য, সংস্কৃতি জগতের ক্ষেত্রে এটা একটা বিরাট ক্ষতি।’’
আরও পড়ুন: হাসতে হাসতে প্রকাশ ঘটাতেন বৈদগ্ধ্যের
নবনীতা দেবসেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানান সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
নবনীতার মেয়ে নন্দনা দেবসেন বললেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরেই মা অসুস্থ ছিলেন। তবে মায়ের মনের জোর খুব বেশি। তা নিয়ে অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। গত কাল মায়ের অক্সিজেন কমে আসছিল, বাইপাফ ও নেবুলাইজার দিচ্ছিলাম আমরা। এক সময় দিদি আর আমি গান গাইতে শুরু করলাম। মা গান শুনতে শুনতেই চলে গেলেন।’’
স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ কখনই ছিন্ন হয়নি। এমনটা জানিয়েছেন নবনীতার প্রাক্তন স্বামী নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, ‘‘নবনীতার সঙ্গে যোগাযোগ ৬৫ বছরের। যদিও এর মধ্যে আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে ৪৫ বছর হতে চলল। তবে আমাদের দুই কন্যার মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল। গত কয়েক দিন ধরে কথা বলতে পারছিলেন না। তবে চলে যাওয়া অবধি যোগাযোগ ছিল।’’ অমর্ত্য আরও বলেন, ‘‘নবনীতার অসাধারণ প্রতিভা।’’
আরও পড়ুন: তুমি আমাদের মগ্ন সরস্বতী
প্রয়াত সাহিত্যিকের বাড়িতে যান শঙ্খ ঘোষ, শ্রীজাত-সহ বিশিষ্টজনেরা। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
শুধুমাত্র সাহিত্যানুরাগীরাই নন, প্রয়াত সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের বিশিষ্টরাও। তাঁর স্মৃতিচারণা করে তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার একটি পত্রিকার জন্য শারদীয়ায় নবনীতাদির কাছ থেকে লেখা চাইতাম। প্রতি বার কবিতা দিলেও এ বার তাতে গল্প লিখেছেন। সব কিছুকেই খুব সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি ভাল মনের মানুষ ছিলেন।’’
এ দিন হিন্দুস্তান পার্কের বাড়ি থেকে নবনীতার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান সেখানকার পড়ুয়ারা। এসেছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরাও। এর পর তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাংলা আকাদেমিতে। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাংসদ মালা রায়-সহ বিশিষ্টজনেরা। বাংলা আকাদেমি থেকে এ দিন তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। দুপুরে সেখানে নবনীতার শেষকৃত্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy