সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গোটা দেশ একজোট, কিন্তু পুলওয়ামা হামলার সুযোগ নিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির চেষ্টা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। বিজেপি-কে স্পষ্ট বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। গোয়েন্দাদের তরফ থেকে সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও কী করে পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গিহানা হল? প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলার নানা প্রান্তে বিজেপি-আরএসএস দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে বলেও তিনি এ দিন অভিযোগ করেছেন। এই রকম চেষ্টা দেখলেই কঠোর পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নির্দেশও দিয়েছেন।
পুলওয়ামার হামলা প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবাই মিলে তার নিন্দা করেছি। একজোট হয়েই আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। কিন্তু কারও কাছ থেকে আমরা দেশপ্রেম শিখব না।’’ বিজেপি এবং আরএসএস-ই মূলত তাঁর নিশানায় ছিল এ দিন। তিনি বলেন, ‘‘গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে। রাত ১২টা-১টায় জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আরএসএস আর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কিছু লোক রাস্তায় বেরচ্ছে। আতঙ্ক তৈরি করছে।’’ দেশপ্রেম দেখানোর নাম করে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার এখন গোটা বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাইছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ।
বেহালা, বনগাঁ, শ্রীরামপুর-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে এ রকম প্ররোচনা মূলক কার্যকলাপ এবং অশান্তি বাধানোর চেষ্টার খবর তাঁর কাছে পৌঁছেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠক থেকে কঠোর স্বরে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘পুলওয়ামায় যারা হামলা করেছে, কেন্দ্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু এই সুযোগে বিজেপি-আরএসএস দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করলে দেশ কিন্তু ক্ষমা করবে না।’’
আরও পড়ুন: দাদা মাসুদ আজহারের ছায়ায় পাকিস্তানে বসে জইশের ফিদায়েঁ অপারেশন চালাচ্ছে আসগর
রাজ্যবাসীর প্রতি এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা— প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কেউ যেন সেই ফাঁদে পা না দেন। সাংবাদিক বৈঠক থেকেই পুলিশের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা— কোথাও প্ররোচনা দেওয়া বা অশান্তি পাকানোর চেষ্টা দেখলেই কঠোর পদক্ষেপ করা হোক।
কেন্দ্রীয় সরকারকেওকিন্তু এ দিন নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা হওয়ার বিষয়ে গোয়েন্দা সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও কেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এ দিন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ৭৮টা গাড়ির কনভয়কে কেন যেতে দেওয়া হল? আড়াই হাজারের কাছাকাছি জওয়ানকে কেন সড়ক পথে পাঠানো হচ্ছিল? প্রশ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘‘জওয়ানদের আকাশপথে পাঠানোর জন্য তো সিআরপিএফ-এর কাছ থেকে অনুরোধ গিয়েছিল। কেন আকাশপথে পাঠানো হল না?’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সে প্রশ্নও তোলেন।
আরও পডু়ন: ‘দেশ বিরোধী’ পোস্টে গ্রেফতার, জামিন পেয়েই উধাও গুয়াহাটির বাঙালি অধ্যাপিকা
জঙ্গি হামলা হওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতৃত্ব গোটা দেশে ঘুরে ঘুরে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও এ দিন তোপ দেগেছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ দিন আমরা কিছু বলিনি, চুপ করে বসেছিলাম। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ গোটা দেশে ঘুরে ঘুরে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘এত বড় ঘটনার পরে পদত্যাগ না করে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?’’
যে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে কিছু দিন আগে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, নির্বাচনের আগে ভারত জুড়ে দাঙ্গা হতে পারে, সেই রিপোর্টের কথা এ দিন উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই রিপোর্ট কি তা হলে ঠিকই ছিল? যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাই ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে? প্রশ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা সম্বন্ধে কতটা জানেন?
আরএসএস-এর লোকজন সোশ্যাল মিডিয়ায় বা বিভিন্ন গ্রুপে নানা রকম প্ররোচনামূলক মেসেজ ছড়াচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান। সে সব মেসেজে অনেককে ‘পাকপ্রেমী’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তীব্র অসন্তোষ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘পাকপ্রেমী মানে কী? পাকপ্রেমী কারা? শুধু বিজেপি-আরএসএস ভাল? বাকি সবাই পাকপ্রেমী?’’
ওই ‘পাকপ্রেমী’ প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন তির ঘুরিয়ে দেন কেন্দ্রের দিকে। পাকিস্তান থেকে জঙ্গিরা ঢুকছে কী করে, একের পর এক হামলা হচ্ছে কী করে? প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে পেরেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে? প্রশ্নতুলেছেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির তরফে আবার এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রশ্ন তুলেছেন ধুলাগড়, কালিয়াচক, বসিরহাট বা আসানসোলে যে সব সাম্প্রদায়িক অশান্তি হয়েছে, সে সবের দায় কার? রাজ্যের প্রশাসক হিসেবে ওই সব ঘটনার দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এড়াবেন কী ভাবে? প্রশ্ন দিলীপের। রাজ্য বিজেপির সভাপতির দাবি, ‘‘কেন্দ্রের উপরে মানুষের ভরসা রয়েছে। উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। তাই প্রত্যাঘাতের দাবি উঠছে।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে দিলীপের প্রশ্ন, পুলওয়ামা হামলায় এ রাজ্যের যে দুই জওয়ান শহিদ হয়েছেন, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করল না কেন? ‘‘বিষমদ খেয়ে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দেন, জঙ্গি হামলায় জওয়ানের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা হয় না কেন?’’—প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ ঘোষ।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy