গ্রামীণ আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির মজুরির খরচ ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে পাওয়া যায়। ছবি: সংগৃহীত।
চলতি আর্থিক বছরের প্রথম সাত মাসে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে এ রাজ্যের প্রতিটি পরিবার গড়ে ৫২ দিন কাজ পেয়েছে।
এই সাত মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে-জুন মাসে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কাজকর্ম প্রায় বন্ধ ছিল। অগস্টে শুরু হয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। চলছে বিজয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থীদের প্রশিক্ষণের কাজও। তার মধ্যেই এসেছে বর্ষা। অর্থাৎ এই সময়ে মাটি কাটা বা কায়িক শ্রমের কাজের সুযোগই তেমন ছিল না বলে মনে করছেন দফতরেরই একাংশ। তা সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে গড়ে ৫২ দিন কাজ করেছেন ৩৭ লক্ষ পরিবার।
পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘উন্নয়ন ছাড়া এর ব্যাখ্যা হয় না। আমরা মন দিয়ে শুধু কাজটাই করি। তাই ভোট ও বর্ষা থাকা সত্ত্বেও প্রথম সাত মাসে ৫২ দিন করে কাজ দেওয়া হয়েছে। বছর শেষে তা ৭৫ দিন ছাড়িয়ে যেতে পারে।’’
কাজের খতিয়ান
• বরাদ্দ: ৬৬২৫.৪৯ কোটি
• খরচ: ৪৬৩৫.০৩ কোটি
• মজুরি বকেয়া: ৪২১ কোটি
• ১০০ দিন কাজ পেয়েছে: ২৭৩৯১৯ পরিবার
• প্রতি পরিবার গড়ে পেয়েছে: ৫১.২৬ দিন
সূত্র: পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর
কী ভাবে এত দ্রুত পরিবার পিছু ৫২ দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হল? যেখানে গত বছরে বছর শেষে পরিবার পিছু ৫৯ দিন কাজের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল, সেখানে এ বার প্রথম সাত মাসেই ৫২ দিন কাজ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মজুরি ভিত্তিক অংশটুকু ১০০ দিনের প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেই কাজ তৈরির সুযোগ হয়েছে। এক কর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির মজুরির খরচ ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে পাওয়া যায়। আবাস যোজনার প্রত্যেক উপভোক্তাকে ৯০ দিন কাজ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে কয়েক লক্ষ বাড়ি তৈরি হচ্ছে, ফলে আবাস যোজনা খাতেই বহু মজুরিভত্তিক কাজের সংস্থান হয়েছে। একই ভাবে গাছ লাগানোর কাজেও ১০০ দিনের কাজ থেকে মজুরি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জীবিকা সংস্থানের ক্ষেত্রেও ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই ৫২ দিনের কাজের ব্যবস্থা করা গিয়েছে।
তবে পঞ্চায়েত দফতরের একাংশ এও মনে করছে, নভেম্বর থেকে মার্চ মাসেই ১০০ দিনের প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি কাজের ব্যবস্থা করা যায়। কারণ, অগ্রহায়ণে আমন ধান কাটার পর গ্রামে শ্রমিকদের হাতে টাকার জোগান কম থাকে। শীতের শুরুতে এক সময়ে পুব খাটতে যাওয়ার প্রবণতাও ছিল রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। ফলে এই সময়ে মাটি কাটার কাজ সবচেয়ে ভাল হয়। অর্থাৎ এই সময়ে কাজ চাওয়ার আবেদন বেশি আসতে পারে এবং কাজ দেওয়ার সুযোগও থাকে বেশি। অথচ চলতি বছরে ২৫ কোটি কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রার ৭৬% ইতিমধ্যেই পূরণ হয়ে গিয়েছে। বাকি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য মজুরি বাবদ হাতে রয়েছে মাত্র দু’হাজার কোটি। যে কাজ হয়ে গিয়েছে, তার মজুরি অগস্ট পর্যন্ত মেটানো হয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রের টাকা না আসায় বকেয়া ৪১০ কোটি টাকা মজুরি। ফলে বাকি পাঁচ মাস কাজের বর্ধিত চাহিদা ও সুযোগ কী ভাবে সামলানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হতে পারে বলে দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি।
যদিও চিন্তার কিছু দেখছেন না পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পরিবার পিছু ১০০ দিন কাজ দিতে আইন করেছে। তার জন্য সংবিধান সংশোধন হয়েছে। যাঁরাই কাজ চাইবেন, তাঁদের সকলকে দিল্লি সেই কাজ দিতে বাধ্য। ফলে কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পূরণ হয়ে যাক বা হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাক, আগামী পাঁচ মাস গ্রামের মানুষ কাজ চাইলেই তা দেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী দিল্লি টাকা দিতে বাধ্য। ‘‘যদি টাকা না দেয় তো প্রয়োজন হলে দিল্লিতে গিয়ে অবস্থানে বসব’’— সাফ কথা পঞ্চায়েত মন্ত্রীর।
সুব্রতবাবু অনড় হলেও কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে যখন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত বলেই কিছু ছিল না, সে সময় পরিবার পিছু ৫২ দিন কাজ বিলি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘প্রথম সাত মাসে অন্তত তিন মাস ভোটের জন্য কোনও কাজই হয়নি। এতেই প্রমাণ হচ্ছে, ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা খরচ করেই রাস্তায় ‘উন্নয়ন’ দাঁড় করানো হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy