Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

গরম-শীতল হাওয়ায় দেখা হল ফাল্গুনে

চরিত্রে তারা বিপরীত মেরুর। তাদের গতির অভিমুখও আলাদা। ফাগুন রাতে লালপাহাড়ির দেশে মিলে গেল ভিন্ন পথের দুই পথিক!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

চরিত্রে তারা বিপরীত মেরুর। তাদের গতির অভিমুখও আলাদা। ফাগুন রাতে লালপাহাড়ির দেশে মিলে গেল ভিন্ন পথের দুই পথিক! তার পরেই বজ্রনির্ঘোষে ধেয়ে এল গাঙ্গেয় বঙ্গের দিকে। ঝড়, বৃষ্টি, বরফশিলার যেন স্রোত বয়ে গেল জেলায়, মহানগরে।

ওই দুই পথিক আসলে দুই চরিত্রের বাতাস। উত্তর-পশ্চিম থেকে বয়ে আসা হিমশীতল জোলো বাতাস আর বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা গরম জোলো বাতাস। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, দুই বিপরীতমুখী হাওয়ার দেখা হল ফাল্গুনে। তাদের মিলনে বজ্রগর্ভ উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ তৈরি হল ঝাড়খণ্ডের আকাশে। এবং তারই ফলে কালবৈশাখীর মতো এই ঝড়।

‘মতো’। কেননা আবহবিদদের পরিভাষায় এটা ঠিক কালবৈশাখী নয়। আবহবিদদের অনেকে বলছেন, কালবৈশাখীর ক্ষেত্রে ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকায় বাতাস প্রচণ্ড গরম হয়ে উপরে ওঠে এবং দ্রুত শীতল হয়ে মেঘ তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে উৎপত্তিগত ফারাক আছে। তবে মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছে সেই ঝাড়খণ্ডেই। তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের ভাষায়, ‘‘এ দিনের ঝড় যেন নিখুঁত কালবৈশাখী! দু’টি বড় মাপের মেঘপুঞ্জ তৈরি হওয়ায় আধ ঘণ্টার ফারাকে ধেয়ে আসে দু’টি ঝড়।’’ হাওয়া অফিস জানায়, রবিবার রাত ৩টে ৫৫ মিনিটে প্রথম ঝড় হয়। আলিপুরে তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৪ কিলোমিটার। স্থায়িত্ব ছিল এক মিনিট। সোমবার ভোর ৪টে ২৫ মিনিটে আছড়ে পড়ে দ্বিতীয় ঝড়। তার গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার।

ঝড়ে কলকাতা এবং অন্যান্য জেলায় প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচ জন। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কলকাতায় ১৯, ব্যারাকপুরে ৫৬.২, মেদিনীপুরে ১৯, উলুবেড়িয়ায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। হাওয়া অফিসের খবর, এ দিন বিকেলে ঝড়বৃষ্টি হয় উত্তরবঙ্গে, সিকিমেও। আবহাওয়া খারাপ থাকায় পাকিয়ং বিমানবন্দরে হেলিকপ্টার অবতরণের পরিস্থিতি ছিল না। তাই উপ-রাষ্ট্রপতি এ দিন সিকিমে পৌঁছতে পারেননি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, মঙ্গলবারেও গাঙ্গেয় বঙ্গে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কাল, বুধবার বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। তবে সে-দিন দার্জিলিং, কালিম্পং এবং তরাই এলাকায় ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা বাড়বে।

এমন ঝড়বৃষ্টি মার্চ, এপ্রিল, মে-তেই দেখা যায়। এ বার ফেব্রুয়ারিতে প্রবল শিলাবৃষ্টি, ঝড় হল কেন? আবহবিদেরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলের উপরের এবং নীচের স্তরে তাপমাত্রার ফারাক বেশি। তার ফলে উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি তো হয়েছেই। গরম বাতাস ক্রমাগত উপরের স্তরে উঠে ঘনীভূত হয়েছে দ্রুত। তাই এমন প্রবল ঝড়বৃষ্টি। ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল, এই ৩০ বছরের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারিতে গড়ে এক দিন শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে আর ঝড়ের গড় সম্ভাবনা এক দিনেরও কম।

সঞ্জীববাবু বলছেন, ‘‘এখন শীত বিদায় নিচ্ছে। স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং গরমের আগমনি। এই ঋতুবদলের সন্ধিক্ষণে এমন আচরণ অস্বাভাবিক বলা চলে না।’’ শিলাবৃষ্টির ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যা, এই সময় মাটি থেকে খুব কম উচ্চতায় শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে। গরম হাওয়া তার উপরের স্তরে উঠলেই মেঘের মধ্যে বরফকণা তৈরি হয় এবং তা বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে নেমে আসে। তাপমাত্রা আরও বাড়লে শূন্য ডিগ্রি সমোষ্ণরেখাটি আরও উঁচুতে উঠে যায়। সে-ক্ষেত্রে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা কমে। তখন মেঘের ভিতরে বরফকণা তৈরি হলেও নেমে আসার পরে তা গলে জলকণা হয়ে যায়।

এই ঝড়বৃষ্টির ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর শোনাচ্ছে হাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে, ঝড়বৃষ্টি থামলে উত্তুরে হাওয়া ঢুকে তাপমাত্রা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। ‘‘তবে তাপমাত্রা কমলেও শীতের ফিরে আসার আশা আর নেই,’’ বলছেন সঞ্জীববাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Storm Rain spring Weather
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE