E-Paper

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের বিমান ঘাঁটি সংরক্ষণের দাবি 

১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। শেষ হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর। টানা ছ’বছর যুদ্ধ চলে। সে সময়ে অশোকনগর এলাকায় তৈরি করেছিল অস্থায়ী সামরিক বিমান ঘাঁটি।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৫১
An image of old building

অশোকনগরের ছড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায় ব্রিটিশরা অস্থায়ী সামরিক বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল। উপযুক্ত সংরক্ষণের কারণে সেগুলি আজ ধ্বংসের মুখে। কিছু জায়গা বেদখল হয়ে গিয়েছে। হ্যাঙ্গারগুলি গরুর খাটালে পরিণত হয়েছে।

১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। শেষ হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর। টানা ছ’বছর যুদ্ধ চলে। সে সময়ে ইংরেজরা উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর এলাকায় তৈরি করেছিল অস্থায়ী সামরিক বিমান ঘাঁটি। যুদ্ধবিমান সারানোর জন্য হ্যাঙ্গার, রানওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, কন্ট্রোল রুম ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরেই ভারত স্বাধীন হয়। সামরিক ক্ষেত্রে ইংরেজরা অশোকনগরের যে জায়গাগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিমানঘাঁটির জন্য প্রস্তুত করেছিল, তা ধীরে ধীরে অব্যবহৃত হতে থাকে।

বিমানবন্দরের জন্য তৈরি কন্ট্রোলরুমে ১৯৬৮ সালে তৈরি হয় অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা। পরবর্তীতে অবশ্য পুরসভার আয়তন বৃদ্ধি হওয়ায় বর্তমানে কন্ট্রোলরুমের পাশেই তৈরি হয়েছে পুরসভার বড় ভবন। বিমানবন্দরের কন্ট্রোলরুমের কক্ষগুলি থেকে বর্তমানে সরকারি কয়েকটি বিভাগের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। বহু টাকা ব্যয়ে ইংরেজ আমলে তৈরি হওয়া বিমানবন্দর ভারত সরকার চাইলে সামরিক ক্ষেত্রে হোক বা অন্য কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করতেই পারত বলে মনে করেন এখানকার মানুষ। কিন্তু তা না করায় বর্তমানে অব্যবহৃত বিমানবন্দরের অনেক জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে একটি সময়ের ইতিহাস।

বর্তমানে অশোকনগরের গোলবাজার থেকে অশোকনগর স্টেডিয়াম যাওয়ার যে রাস্তা, সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিমান ওঠানামার জন্য চওড়া কংক্রিটের রানওয়ে ছিল। সেই জায়গার দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বহু দোকান। রানওয়ের উপরে তৈরি হয়েছে যাতায়াতের রাস্তা। বিমান বন্দরের ওয়াচ টাওয়ার ও আলো ফেলার যে জায়গা, তার ভগ্নদশা। যুদ্ধবিমান যেখানে সারানো হত, সেই হ্যাঙ্গারগুলির মধ্যে স্থানীয় কিছু গোপালক খাটাল তৈরি করেছেন। একটি হ্যাঙ্গারের মধ্যে পুরসভার তরফে কমিউনিটি হল তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে অশোকনগরের এই ইতিহাস ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে।

অভিযোগ, এ সব সংরক্ষণে মাথাব্যথা নেই পুরসভার। অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, "হ্যাঙ্গারগুলি খসে খসে পড়ছে। সেখানে ঘুঁটে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশরা এখানে অস্থায়ী সামরিক বিমান ঘাঁটি করেছিল। পরবর্তী সময়ে ওই বিমানঘাঁটিগুলিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত শহর গড়ে উঠেছিল। বিমানঘাঁটিগুলি শহরের ঐতিহাসিক ভিত্তি। অবশ্যই তা উপযুক্ত সংরক্ষণের প্রয়োজন।"

পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার জানান, সরকারের এখন ওই জায়গাগুলি প্রয়োজন হচ্ছে না। যখন প্রয়োজন হবে, তখন নিশ্চয়ই তা সঠিক নিয়মে দখলমুক্ত করা হবে।

কী ভাবে দখল হচ্ছে সরকারি জায়গা? এ নিয়ে অবশ্য একে অন্যের দিকে আঙুল তুলছে বাম ও শাসকদল। স্থানীয় মানুষ জানালেন, বাম আমল থেকেই দখলদারি শুরু হয়েছে, বর্তমান জমানায় তা আরও বেড়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

World War II Ashoknagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy