বেশ কয়েক বছর ধরে বন দফতরের বর্ধমান ডিভিশনে জঙ্গল বাড়ছে। তেমনই এই জঙ্গলগুলিতে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও বেড়েছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু বসন্তে গাছের পাতা ঝরার সময়েই, প্রতি বছর আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ফলে, গাছের যেমন ক্ষতি হয়। তেমনই ক্ষতি হয় অনেক কীটপতঙ্গের। এই আগুন লাগানো রোধ করতে লাগাতার প্রচার চালানো ও কর্মীদের পাহারা সবই চলছে। তার পরেও কিছু কিছু জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে বনকর্মীরা জানিয়েছেন। যদিও বন দফতরের কর্তাদের দাবি, তাঁরা সচেতনতা প্রচার চালানোর পাশাপাশি, দোষীদের খুঁজে বের করারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বন দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের মধ্যে রয়েছে কাঁকসা বনাঞ্চল। এ ছাড়া, পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের জঙ্গলও রয়েছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ডিভিশনের মূলত এই দুই এলাকায় জঙ্গলই সব থেকে বেশি। এই দুই এলাকায় জঙ্গলের পরিমাণ ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি। গত কয়েক বছর ধরে এই দুই এলাকায় জঙ্গল অনেকটাই বেড়েছে। এই জঙ্গল বেড়ে ওঠার পিছনে বন দফতরের পাশাপাশি, আশপাশের বসবাসকারী নাগরিকদেরও ভূমিকা রয়েছে।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ ও ৩০ মার্চ যথাক্রমে কাঁকসার চারেরমাইল ও ত্রিলোকচন্দ্রপুরের জঙ্গলে আগুন লেগেছিল। এর আগে গড় জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। আগুন লাগানোর এই প্রবণতা রুখতে দফতরের তরফে প্রতিটি এলাকায় প্রচার চালানো হয়। দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জঙ্গলে আগুন লাগলে যে সবার ক্ষতি, তা সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে। বন দফতরের কর্তাদের দাবি, প্রচারে যে একেবারে কাজ হয়নি, তা কিন্তু নয়। এ বছর জঙ্গলে আগুন লাগানোর পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। প্রায় প্রতিটি জঙ্গল এলাকাতেই পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছেন।
দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আগুন লাগার খবর পাওয়া মাত্রই, কর্মীরা জঙ্গলে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আগুনের শিখা কম থাকলে ‘ফায়ার ব্লোয়ার’-এর মাধ্যমে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। এমনকি, দমকলকেও আগুন নেভানোর জন্য ডাকা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও জঙ্গলে আগুন নেভাতে এগিয়ে আসছেন। যেমন কাঁকসার সাধন কিস্কু, রমা মুর্মুরা বলেন, “জঙ্গলের উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হয়। তাই জঙ্গলকে নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না।” তবে যাঁরা জঙ্গলে আগুন ধরাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে
করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ডিএফও (বর্ধমান) নিশা গোস্বামী বলেন, “আমরা লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। যতটা সম্ভব মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। অনেকে সচেতন হয়েছেন। আশা করি, আগামী দিনে সংখ্যাটা
আরও বাড়বে।”