বাদলের যত্ন নিচ্ছেন পুরকর্মী। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা থেকে ধরে এনে দাবিদারহীন ঘোড়াকে রাখা হয়েছিল গুসকরা পুরসভা চত্বরে। স্নান করানো থেকে শুরু করে খাওয়ানো— ঘোড়াটির দেখভালের সব কাজই করছিলেন পুরসভার অস্থায়ী কর্মী সনাতন মুর্মু-সহ চার জন। আদর করে তার নাম দেওয়া হয়েছিল বাদল। দু’সপ্তাহ ধরে বাদলের ঠিকানা ছিল গুসকরা পুরসভার সাইকেল স্ট্যান্ড। বৃহস্পতিবার ঠিকানা বদল করল বাদল। তাকে পোষ্য করার আবেদন জানিয়ে পুরসভায় আর্জি জানিয়েছিলেন গুসকরা পুরসভারই প্রাক্তন কর্মী ঝিঙুটির বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াসিন। এ দিন তাঁর হেফাজতে দেওয়া হয় বাদলকে।
আদরের বাদলকে বিদায় জানাতে গিয়ে ছলছল করে ওঠে সনাতনের চোখ। বলেন, ‘‘ওর প্রতি মায়া জন্মেছিল। নিজের হাতে ওকে খাইয়েছি, স্নান করিয়েছি। নাম রেখেছিলাম বাদল। এই নামে ডাকলে সাড়া দিত ও। ঘোড়াটি চলে যাওয়ায় মন খারাপ লাগছে।” ইয়াসিন বলছেন, “অনেক দিন ধরে ঘোড়া পোষার শখ ছিল। পুরসভায় একটি ঘোড়া আছে জেনে, সেটি প্রতিপালনের আবেদন জানাই। কর্তৃপক্ষ সে আবেদনে সাড়া দেওয়ায় আমি খুশি।” পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার চার জন অস্থায়ী কর্মী ঘোড়াটিকে দেখভাল করছিলেন। তাঁরাই ঘোড়াটিকে খাওয়ানো ও পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করেছিলেন। এমনকি, তার মলমূত্রও সাফ করতেন। ঘাস, ভুসি, জল এবং ভেজা ছোলা খাওয়ানো হচ্ছিল ওকে। ঘোড়াটির থাকার একটা জায়গা হওয়ায় দায়মুক্ত হলাম।’’ মাস তিনেক ধরে বর্ধমান-বোলপুর ২বি জাতীয় সড়কে গুসকরা কলেজ মোড় থেকে ইটাচাঁদার মাঝে দেখা যেত ঘোড়াটিকে। মানুষ বা যানবাহন দেখলেই তেড়ে যেত। রাস্তা দখল করে থাকত সে। মাঝেমধ্যেই যানজট হত। বিষয়টি বন দফতর, পুলিশ এবং গুসকরা পুরসভাকে জানানো হলে পুরসভার কর্মীরা ঘোড়াটিকে পুরসভায় এনে আসেন।
এক পুর-আধিকারিক বলেন, “ঘোড়াটির দেখভালের জন্য রোজ ১৫০-২০০ টাকা খরচ হচ্ছিল। সে টাকা দেওয়া হচ্ছিল পুরসভার তহবিল থেকে। ঘোড়াটির পুনর্বাসনের জন্য বন দফতরের তরফে কলকাতার একটি পশুপ্রেমী সংস্থার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে উত্তর আসেনি। ঘোড়াটিকে প্রতিপালনের ইচ্ছা জানিয়ে আবেদন করেছিলেন ইয়াসিন।” ইয়াসিনের দাবি, ঘোড়াটিকে দেখভাল করার আর্থিক ক্ষমতা তাঁর আছে। তিনি জানান, ঘোড়াটির দেখভাল সংক্রান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়েছে পুরসভার সঙ্গে। আগেও তিনি ঘোড়া পুষেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy