E-Paper

সমাজবাড়ির ইতিহাস কি হারিয়েই যাবে

এক একর ৪০ শতক জমির উপরে তৈরি সমাজবাড়ির দু’টি মন্দির ছাড়া বাকি জায়গা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:৩৬
কালনার সমাজবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

কালনার সমাজবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

প্রাচীন স্থাপত্য ও ইতিহাসে মোড়া কালনা শহর দেশ-বিদেশের পর্যটকের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণের জায়গা। আর সেই শহরে ধ্বংসের দিন গুনছে সমাজবাড়ির প্রাচীন দুই স্মৃতি মন্দির।

রাজ্যে অসংরক্ষিত পুরাকীর্তিগুলির মধ্যে ডাঙাপাড়া এলাকার সমাজবাড়ি একটি। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বর্ধমান রাজ পরিবারের এই নিদর্শনটি বহু বছর ধরেই অবহেলায় পড়ে। ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৩০ সালে বর্ধমান রাজা মহতাবচাঁদ কালনায় সমাজবাড়ি তৈরি করেন। সেখানে রয়েছে তেজচাঁদ ও তাঁর স্ত্রী কমলকুমারীর স্মৃতি মন্দির। পশ্চিম ভারতীয় রীতি মেনে পাথর বা ধাতুর পাত্রে চিতাভষ্ম-সহ মৃতের ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী রেখে তার উপরে তৈরি করা হয়েছিল এই মন্দির। এদের একটি সতেরো চূড়ার, অন্যটি ন’চূড়ার।

১৯৬৬ সালে সমাজবাড়ি বর্ধমান রাজ এস্টেটের থেকে দীর্ঘ মেয়াদী লিজে দেখভালের দায়িত্ব পায় নবদ্বীপের অবনী বিশ্বাস পরিবার। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের নথিতে এই নিদর্শনটি দীর্ঘ দিন সমাধিস্থল বলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু সেখানে নিজেদের ব্যক্তিগত অধিকার কায়েম করতে আদালতের দ্বারস্থ হন বিশ্বাসেরা। রায় যায় তাঁদের পক্ষে। বছর দশেক আগে সমাজবাড়ির জমি বিক্রির উদ্যোগ করেন তাঁরা। প্রতিবাদে পথে নামে কালনার বহু মানুষ। মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে মহকুমা প্রশাসন। তাতে অবশ্য লাভ বিশেষ হয়নি।

এক একর ৪০ শতক জমির উপরে তৈরি সমাজবাড়ির দু’টি মন্দির ছাড়া বাকি জায়গা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি। মন্দির দু’টিরও ভগ্নদশা। তার গায়ের বহু কারুকার্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নানা জায়গায় দেখা দিয়েছে লম্বা লম্বা ফাটল। মন্দিরের চূড়াগুলির আশপাশে মাথা তুলেছে আগাছা। ভিতরের বেশ কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি মন্দিরে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে পুজোপাঠ চলছে। অপরটির হাল এতই খারাপ, যে কোনও সময় সেটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

শুধু মন্দির নয়, প্রাচীন সমাজবাড়ির চারপাশে থাকা পাঁচিলেও ছিল চোখ ধাঁধানো কারুকার্য। প্রবেশদ্বারের সামনে লাগানো রয়েছে সংস্কৃতে লেখা সাদা পাথরের ফলক। এখন নির্মাণ কাজের জন্য অনেকেই ভাঙতে শুরু করেছে সেই পাঁচিল। কালনা পুরসভার এক প্রতিনিধি সমরজিৎ হালদার বলেন, “মন্দির দু’টির অবস্থা ভাল নয়। ভাঙা শুরু হয়েছে পাঁচিল। যে কোনও দিন প্রবেশদ্বারের ফলকটিও হারিয়ে যাবে। আমাদের দুর্ভাগ্য, ইতিহাসকে আমরা রক্ষা করতে পারলাম না।”

এই ব্যর্থতার পিছনে অনেকেই প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। কালনার বাসিন্দা বলরাম মণ্ডল বলেন, “মন্দিরের শহর হিসেবে কালনাকে চেনে পর্যটকেরা। এমন শহরে সমাজবাড়ি রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে স্থানীয় মানুষ কম আবেদন করেননি। সরকার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমাজবাড়ির জমি কিনে প্রাচীন ইতিহাস রক্ষা করতে পারত। তা হয়নি। অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই নিদর্শন।” অনেকেরই দাবি, এখনও যদি ভগ্ন মন্দির এবং পাঁচিল সংস্কার করে সংরক্ষণ করা যায়, তাও বাঁচে আংশিক ইতিহাস।

উপ-পুরপ্রধান তপন পোড়েল বলেন, “সমাজবাড়ির মন্দির দু’টির কী অবস্থা রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, “প্রাচীন ওই নিদর্শনটির পরিস্থিতি জানার চেষ্টা হচ্ছে। কী করা যায়, ভাবা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalna

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy