Advertisement
E-Paper

ভান্ডারে ‘লক্ষ্মী’ ছিলই, উন্নয়নের খতিয়ানে জুড়ল ‘পাঁচালি’! ১৫ বছরের হিসাব দিয়ে মমতা গড়ে নিলেন ১০ পর্যবেক্ষকের বাহিনী

‘উন্নয়নের পাঁচালি’ পেশ করে মমতা বলেন, ‘‘আগামী বছর মে মাস এলে আমাদের সরকারের ১৫ বছর পূর্ণ হবে। এই সাড়ে ১৪ বছরে আমাদের সরকার কী কী কাজ করেছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছি। আমরা রাজ্যবাসীর কাছে দায়বদ্ধ।’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:০০
CM Mamata Banerjee presented the report card of her governments 15 years of development work

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

২০২১ সালের ‘কঠিন’ নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছিল, সেই ঘোষণা জাদুকাঠির কাজ করেছে। ভান্ডারে ‘লক্ষ্মী’ ছিলই। এ বার ২০২৬ সালের ভোটের আগে ১৫ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান পেশের সরকারি কর্মসূচিতে মমতা জুড়ে দিলেন ‘পাঁচালি’ও।

মঙ্গলবার নবান্নে তাঁর তিন মেয়াদের কাজের খতিয়ান (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার পোশাকি নাম ‘উন্নয়নের পাঁচালি’। সরকার ও শাসকদলের অনেকে যাকে ভোটমুখী বাংলায় মমতার ‘পথের পাঁচালি’ বলেও অভিহিত করছেন। আর মমতা বলেছেন, ‘‘আমাদের মা-ঠাকুমারা পাঁচালি পড়তেন। এখনও গ্রামের কিছু কিছু জায়গায় সেই চল রয়েছে। কিন্তু বহু জায়গাতেই তা আর হয় না। সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেই আমরা পাঁচালি শব্দটা ব্যবহার করলাম।’’

কর্মসূচির শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। তাতে মমতার সরকারের অজস্র সামাজিক প্রকল্প, পরিকাঠামো উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক, খরচের হিসাব তুলে ধরা হয়। তার পরই মমতা মঞ্চে ডেকে নেন সঙ্গীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তীকে। ইমন কীর্তনের আঙ্গিকে খোল-খঞ্জনির সঙ্গে ‘পাঁচালি’ পাঠ করেন। সেই পাঁচালির কথাতেও আবার সরকারি প্রকল্প, সরকারের অভিমুখ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছিল স্পষ্ট।

মহিলাদের হাতে নগদ দেওয়ার প্রকল্পের নাম কেন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ দেওয়া হল, তা নিয়ে ২০২১ সালে ভোটের পরে বিরোধীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ‘লক্ষ্মী’কে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান। দেখা গিয়েছে, যত দিন গিয়েছে, এই প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু মহিলাও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর সুবিধাভোগী। আরও একটি বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই মমতা ফের এক বার ‘পাঁচালি’কেও ধর্মের বেড়া ভেঙে বাঙালির করে তুলতে চাইলেন। যদিও অনেকের মতে, মমতা কৌশলেই ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘উন্নয়নের পাঁচালি’র মতো নাম ব্যবহার করছেন। যাতে সুপ্ত ভাবে হলেও হিন্দুধর্মের ছোঁয়া রয়েছে। তাঁদের মতে, এটা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, মমতার মূল বিরোধী শক্তি হিসাবে বিজেপি তাদের অস্ত্র করছে হিন্দুত্বকেই।

‘উন্নয়নের পাঁচালি’ পেশ করে মমতা বলেন, ‘‘আগামী বছর মে মাস এলে আমাদের সরকারের ১৫ বছর পূর্ণ হবে। এই সাড়ে ১৪ বছরে আমাদের সরকার কী কী কাজ করেছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছি। আমরা রাজ্যবাসীর কাছে দায়বদ্ধ।’’ তিন মেয়াদের কাজের খতিয়ান পেশ করলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও সম্পূর্ণ তথ্য একত্রিত করা যায়নি। তা করতে আরও সাত-দশ দিন লেগে যেতে পারে। তার পর খতিয়ানের পূর্ণাঙ্গ নথি প্রকাশ করা হবে। মঙ্গলবার মমতা সার্বিক ভাবে কোন প্রকল্পে কত খরচ বৃদ্ধি হয়েছে, কত সুবিধাভোগী, তার কিছু পরিসংখ্যান বলেন। কিন্তু একাধিক বার স্মরণ করিয়ে দেন, এখনও সম্পূর্ণ তথ্য নেই। তা আরও বাড়তে পারে। খতিয়ান পেশ করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যের কর এবং রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৫.৩৩ গুণ। এ ছাড়াও মূলধনি ব্যয় বেড়েছে ১৭.৬৭ শতাংশ। সামাজিক ক্ষেত্রে ১৪.৬৪ শতাংশেরও বেশি। কৃষিক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধির পরিমাণ ৯.১৬ গুণ।

প্রশাসনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন, নির্বাচনের কাজের মধ্যেও সাধারণ মানুষের কাজ গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। জেলায় জেলায় আবাস, সড়ক, জলসংযোগ, স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকাঠামো-সহ অন্যান্য চলমান কাজের গতি যাতে শ্লথ না-হয়, তার জন্য ১০ জন আধিকারিকের একটি পর্যবেক্ষক বাহিনী গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই পর্যবেক্ষণের কাজ কেন্দ্রীয় ভাবে তদারকি করার জন্য একটি ‘মনিটরিং টিম’ গঠন করতে হবে। সেখানে কাকে কাকে রাখা হবে, তা মুখ্যসচিবের অগ্রাধিকারের উপর ছেড়ে দিয়েছেন মমতা।

সরকারকে বুথস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে পুজোর আগে থেকে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি শুরু করেছিল নবান্ন। সেই কর্মসূচির মূল ভাবনা ছিল, সাধারণ মানুষ নিজের পাড়ায় দাঁড়িয়ে একেবারে বুথস্তরের সমস্যার কথা বলবেন। তার পর সেই সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার ভূমিকা গ্রহণ করবে। যার জন্য বুথপিছু ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। রাস্তা, আলো, পানীয় জল, ছোট সেতুর মতো ছোট-ছোট সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই অর্থ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে তার বাস্তবায়ন চান মমতা। সে কারণেই ১০ পর্যবেক্ষকের বাহিনী গড়ে দিলেন তিনি। যে যে জেলা আবাস, রাস্তা, পানীয় জল সংযোগের কাজ দ্রুত ভাল ভাবে করতে পারবে, তাদের রাজ্য সরকারের তরফে পুরষ্কৃত করা হবে বলেও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সংযোজন: ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ১০ জন আমলার কথা বললেও ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, ১৩ জন আমলাকে নিয়ে পর্যবেক্ষক দল গঠন করা হয়েছে।

CM Mamata Banerjee State Government West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy