Advertisement
E-Paper

তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা কঠিন, দুই ‘শত্রু’র গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে সিপিএম

গত ১৫ বছর ধরে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে ঢলে রয়েছে। পাশাপাশি, মহিলা ভোটও শাসকদলের অন্যতম পুঁজি। আবার বিজেপির অস্ত্র ‘হিন্দুত্ব’।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৫
fight against the two forces of TMC and BJP is getting tougher, discussion within the CPM

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

গত ১০ বছর ধরে সিপিএম বলে আসছে, বাংলায় তাদের লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় দলের বিরুদ্ধেই। কিন্তু ফলিত স্তরে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের তৃতীয় স্থানে সরিয়ে দিয়ে বিজেপি হয়ে উঠেছে প্রধান বিরোধী দল। ভোটচিত্র বলছে, বামেদের ভোট গণহারে গিয়ে পড়েছে বিজেপির বাক্সে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের সাংগঠনিক সম্মেলন প্রক্রিয়ায় বার বার উঠে আসছে দুই শত্রুর ‘গোলকধাঁধায়’ পড়ার কথা। এরিয়া স্তরের সম্মেলন তো বটেই, এখনও পর্যন্ত যে কয়েকটি জেলার সম্মেলন হয়েছে, সেখানেও এই প্রসঙ্গই উঠে এসেছে।

২০১৯ সালের লোকসভা থেকে এখনও পর্যন্ত যে ক’টি বড় ভোট হয়েছে, তার প্রতিটিতেই দেখা যাচ্ছে, বিজেপি বিরোধিতার জায়গা থেকে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন। আবার তৃণমূলের বিরোধী ভোটারেরা বেছে নিচ্ছেন বিজেপিকে। রাজ্যে ওই দু’টি দলকেই ‘সমান বিপদ’ বলে চিহ্নিত করে বামেরা কোণঠাসা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের সম্মেলনে তৃণমূল সম্পর্কে দলের অবস্থান নিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দলের ‘বৈপরীত্য’ও আলোচিত হচ্ছে। রাজ্যে বিরোধিতা করলেও সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে সিপিএম। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা তৃণমূল এবং বিজেপিকে একই বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ করলেও জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতার ফলে সর্বভারতীয় স্তরে তা করা যাচ্ছে না। যেমন লোকসভা নির্বাচনের পর্যালোচনায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলার ফলাফলকে ‘বিজেপিকে রুখে দেওয়া’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। আবার তৃণমূল যে আসন জিতেছে, তাকে ধরা হয়েছে বিজেপি-বিরোধী খাতায়।

উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের প্রচারে সিপিএম-তৃণমূলকে একসঙ্গে নিয়ে ‘দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি’র ভাষ্য রচনা করেছিল বিজেপি। আবার তৃণমূল একই ভাবে বামেদের আক্রমণ করেছিল। তাদের হাতিয়ার ছিল ‘রাম-বাম’ শব্দবন্ধ। অর্থাৎ, বিজেপি (রাম) এবং সিপিএমের (বাম) যোগসাজশ।

সিপিএমের সম্মেলনে আলোচিত হচ্ছে সেই প্রসঙ্গও। বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি যে জায়গায় গিয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ তো বটেই, দলের নিচুতলার সদস্যেরাও ‘বিভ্রান্ত’। আলোচনায় এ-ও উঠে আসছে যে, আদর্শগত প্রশ্নে বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বললে জনমানসে তৃণমূল সম্পর্কে নরম বার্তা যাচ্ছে। তৃণমূলকে নিশানা করলে তা বিজেপির ‘সুর’ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু দু’দলকে একই বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ করলে সেটাও ধোপে টিকছে না।

সর্বভারতীয় স্তরে একটা সময়ে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সমদূরত্বের’ নীতি নিয়ে চলত সিপিএম। মোদী সরকারের প্রথম মেয়াদেই দলের সেই ‘লাইন’ পরিবর্তন করে দেশের রাজনীতিতে বিজেপিকে ‘বড় বিপদ’ বলে স্বীকার করেছে একে গোপালন ভবন। ফলে জাতীয় স্তরে সিপিএম সেই নীতিতেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে প্রতিপক্ষ একটি। কিন্তু রাজ্য স্তরে পরিস্থিতি ভিন্ন। যেমন কেরলে বামেদের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। কিন্তু সেখানে এখনও রাজনৈতিক অক্ষ বাম-কংগ্রেসে দ্বিমেরু। বিজেপি সেখানে প্রান্তিক শক্তি। পশ্চিমবঙ্গে যেমন বিজেপির উত্থানে বামেরা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত। যার ফলে ১৩ বছর আগে যে দল রাজ্য শাসন করত, আট বছর আগে যে দল ছিল প্রধান বিরোধী, তিন বছর আগে বিরোধী পরিসরে যে শক্তি ছিল ‘উল্লেখযোগ্য’, এখন তারাই প্রান্তিক। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুই শত্রুর গোলকধাঁধা।

বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে এমনও উল্লেখ করা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক প্রশ্নে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে চড়া প্রচার দল করছে, বিজেপির ক্ষেত্রে তা সেই পরিমাণে করা হচ্ছে না। সিপিএমের প্রথম সারির নেতারাও দুই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা যে কঠিন, তা মেনে নিচ্ছেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘একটা ধনুক থেকে কখনও একসঙ্গে দুটো তির বেরোয় না। কিন্তু আমাদের সেই কাজই করতে হচ্ছে।’’ গত ১৫ বছর ধরে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে ঢলে রয়েছে। মহিলা ভোটও শাসকদলের অন্যতম পুঁজি। আবার বিজেপির অস্ত্র ‘হিন্দুত্ব’। মেরুকরণের জাঁতাকলেও যে দল পিষে যাচ্ছে, তা-ও মানছেন সিপিএম নেতারা। পাশাপাশিই মানছেন, মেরুকরণের এই ‘চক্রব্যূহ’ থেকে বঙ্গ রাজনীতি এখনই বার হতে পারবে না।

CPM TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy