প্রায় নিঃশব্দেই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি মডেল) একটি ডেন্টাল কলেজ চালু হয়েছে কলকাতায়। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, এ ক্ষেত্রে পাওনাগণ্ডা বুঝে নিতে কসুর করেনি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। জমির লিজ বাবদ যেমন মোটা টাকা নিশ্চিত করেছে সরকার, তেমনই ওই কলেজের পড়ুয়াদের ক্লাস করানো নিয়েও সরকারের আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের পরে উত্তর কলকাতার কাশীপুরে অবস্থিত কুসুমদেবী সুন্দরলাল দুগ্গর জৈন ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালই হল রাজ্যের দ্বিতীয় হাসপাতাল, যা পিপিপি মডেলে কাজ করছে। এর আগে ভাঙড়, কার্শিয়ং, কোচবিহার ও ধুবুলিয়ায় পিপিপি মডেলে মেডিক্যাল কলেজ খোলার ব্যাপারে আলোচনা, দরপত্র, চুক্তি, এমনকী ঘোষণা পর্যন্ত হয়ে গেলেও, অদূর ভবিষ্যতে সেগুলি চালুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অথচ পিপিপি মডেলে এই ডেন্টাল কলেজটি খোলা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা এত দিন প্রকাশ্যে আসেনি। এ জন্য যে সরকার বছর দশেক আগে প্রায় তিন একর জমি লিজে দিয়েছিল, সেটাও জানাজানি হয়নি। কিন্তু পিপিপি মডেলে ওই ডেন্টাল কলেজটিই প্রস্তাবিত আরও চারটি কলেজের থেকে আগে খুলে গিয়েছে। ১০০ শয্যার এই ডেন্টাল কলেজ চলতি বছরই ‘ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র ছাড়পত্র পেয়ে পঠনপাঠন শুরু করেছে।
কেপিসি-র ক্ষেত্রে মাত্র এক টাকায় কলকাতায় জমি ছেড়ে দেওয়া এবং তার বিনিময়ে কিছু আসনে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে কৃতকার্য পড়ুয়াদের ভর্তি করা ছাড়া আর কোনও সুবিধাই পায়নি সরকার। ওই হাসপাতাল প্রতি মাসে নিখরচায় গরিব রোগীদের চিকিৎসা করবে বলে জানালেও বাস্তবে তা হচ্ছে কি না, নজরদারি চালানো যায়নি বলেই স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। তবে কুসুমদেবীর ক্ষেত্রে এই ভুল হয়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শ্বেতাম্বর জৈনদের ওই সেবামূলক ট্রাস্টের থেকে জমির লিজ বাবদ প্রতি বছর প্রায় ১২ লক্ষ টাকা করে পাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। কলেজের ১০০টি আসনে নিট পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের সরকারই বেছে পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ৫০টি আসনে নিটের মেধা তালিকা অনুযায়ী যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের পঠনপাঠনের জন্য মাত্র ৭৪ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আর বাকি ৫০টি আসনে ভর্তি হলে দিতে হচ্ছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এই ডেন্টাল কলেজের সঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকেও যুক্ত করা হয়েছে। মেডিক্যালেই এই ডেন্টাল কলেজের পড়ুয়াদের কিছু ক্লাস করানো হচ্ছে।
বেসরকারি হাসপাতালের পঠনপাঠন সরকারি কলেজে হওয়া নিয়ে কলকাতা মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশ আপত্তি জানিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের জবাব, পিপিপি মডেলে চুক্তির জন্যই পঠনপাঠনের ভার নেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে অর্থও আসছে সরকারের ঘরে। প্রতিটি থিওরি ক্লাস পিছু ৭৫০ টাকা ও প্রতিটি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস পিছু ১০০০ টাকা করে পাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। পরীক্ষা নেওয়ার জন্যও প্রতি দিন, প্রতি বিষয় পিছু ২০০০ টাকা করে পাচ্ছে তারা।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ভাঙড়, কার্শিয়ং, কোচবিহার ও ধুবুলিয়ায় পিপিপি মডেলে মেডিক্যাল কলেজ গড়ার ব্যাপারে ২০১৪ সালে চুক্তি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এবং সরকার জমি দেওয়ার পরেও কেন সেখানে কাজ এগোচ্ছে না? ভাঙড় ও কার্শিয়ঙের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের তরফে গৌতম রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের থেকে অনেক কঠিন মেডিক্যাল কলেজ গড়া। ৩০০ কোটি টাকা খরচ। দু’লক্ষ বর্গফুটের ভবন তৈরি করতে হবে। আরও অন্তত এক বছর লাগবে।’’ কোচবিহার ও ধুবুলিয়ার দায়িত্ব পেয়েছিল ক্যামেলিয়া গ্রুপ। তারা ইতিমধ্যেই প্রকল্প ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। এখনও দরপত্র ডেকে সেই দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা বা সংলগ্ন এলাকায় পিপিপি মডেলে মেডিক্যাল কলেজ করা সহজ। কারণ চিকিৎসক সহজে মেলে। কিন্তু জেলায় বিশেষত উত্তরবঙ্গে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেলাই মুশকিল। ফলে কেউ লগ্নি করতে চায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy