—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সেই মেয়েটিই মেলালেন। মা আসার প্রাক্কালে মেয়ের বিদায়ের ঘটনায় যখন শোকপ্রস্তাব ঘনিয়ে উঠেছে চার পাশে, তখন এক ধরনের উলটপুরাণেও যেন পথ দেখালেন সেই মেয়েটিই।
মহালয়ার তিন সপ্তাহের সামান্য কয়েক দিন আগে আর জি করে নিহত চিকিৎসক ছাত্রীটি কার্যত মিলিয়ে দিলেন কলকাতার তাবড় সব পুজো কমিটিকে। শহরে প্রতিবাদের আবহে পুজোর হোর্ডিং লাগানো নিয়ে ডাকসাইটে পৃষ্ঠপোষকেরা অনেকেই দোলাচলে ভুগছেন। এই অবস্থায় শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, বা পুব থেকে পশ্চিমের পুজো কমিটিগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরস্পরের হোর্ডিং লাগাতে নেমে পড়লেন। শনিবার রাতভর এই ‘পুজো হোর্ডিং অপারেশন’-এর সুফল মিলেছে। ১০-১৫টি পরিচিত সর্বজনীন পুজো এক রাতে শহরের ৯০টি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। শহরের বারোয়ারি পুজোগুলির সব থেকে বড় যৌথ মঞ্চ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি শাশ্বত বসু বলছেন, “এমনিতে বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলির নানা রকম রেষারেষি আছে। পাড়ায় পাড়ায় টক্কর, উত্তর বনাম দক্ষিণে টক্কর বা অমুক কর্মকর্তার সঙ্গে তমুক কর্মকর্তার সংঘাত বা এই শিল্পীর সঙ্গে ওই শিল্পীর ঠান্ডা লড়াই। অনেকেরই অনেক কিছু প্রমাণ করার থাকে। কিন্তু এখন যা সময়, তাতে বিরোধ কাজের কথা নয়। সবাইকে একসঙ্গে যা করার, তা-ই করতে হবে।”
শনিবার মধ্যরাতে তাই দেখা গিয়েছে অভূতপূর্ব সব দৃশ্য। কেউ কখনও ভাবেইনি, ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক সর্বজনীনের কর্তারা নিউ আলিপুর এলাকায় দমদম পার্ক ভারতচক্রের হোর্ডিং লাগাবেন। আবার কাশী বোস লেনের পুজো হয়তো উল্টোডাঙায় বালিগঞ্জ কালচারালের প্রচারের আয়োজন করছে। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ লাগাচ্ছে টালা প্রত্যয়ের হোর্ডিং কিংবা হাতিবাগান সর্বজনীন বি টি রোডে কোথাও বড়িশা ক্লাবের হোর্ডিং লাগাচ্ছে। বি টি রোড চিড়িয়ামোড় থেকে তারাতলা, বেহালা ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড কিংবা টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট বা খিদিরপুর, মোমিনপুর থেকে লালবাজার, কলেজ স্ট্রিট সর্বত্র ছেয়ে গিয়েছে বিভিন্ন পুজোর হোর্ডিংয়ে।
ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক সর্বজনীনের পুজোকর্তা সঞ্জয় মজুমদার বলছিলেন, “খাতায়কলমে কারণ বলা না-হলেও স্পনসরেরা হঠাৎ করেই চুক্তি চূড়ান্ত করতে পিছিয়ে যাচ্ছেন দেখছি। অস্বীকার করব না, এতে এক ধরনের চাপা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।” অনেক পুজো কমিটির ধারণা, স্পনসরেরা এখন চুক্তি চূড়ান্ত না-করে শেষ মুহূর্তের দর কষাকষির অপেক্ষায় রয়েছেন। পুজোর আগের মুহূর্তে কিছুটা সস্তায় স্পনসরেরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শর্ত চাপাবেন বলেই উদ্যোক্তাদের একাংশের আশঙ্কা।
আপাতত কোনও পৃষ্ঠপোষকের সৌজন্য ছাড়াই কিন্তু হোর্ডিং-যজ্ঞে শামিল ১০-১৫টি পরিচিত পুজো। দমদম পার্ক ভারতচক্রের প্রতীক চৌধুরীর কথায়, “কলকাতার নানা প্রান্তে আমাদের সব হোর্ডিং লাগাতে তিন, চার দিন লেগে যেত। সবাই একসঙ্গে হওয়ায় কাজটা সহজ হল। নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দরকার ছিল।” আরও অনেকে মিলে একযোগে কিছু করার পরিকল্পনা চলছে। রাজ্য প্রশাসনের একটা অংশও প্রতিবাদ থেকে পুজোর মেজাজ তৈরি করতে তৎপর বলে শোনা যাচ্ছে। উৎসব উপদেষ্টা তথা উদ্যোক্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু শুভ বলছিলেন, “প্রতিবাদের মেজাজটা এ বার পুজোকে ছুঁয়েই থাকবে। কিন্তু পুজো মানে তো শুধু উৎসব নয়, অর্থনীতিও। এটা বুঝে পুজো কমিটিগুলির এই অভূতপূর্ব পদক্ষেপ অবশ্যই সদর্থক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy