কসবায় আত্মহত্যাই করেছেন বাবা, মা এবং পুত্র? ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে সেই ইঙ্গিতই মিলছে। সুইসাইড নোট থেকে জানা গিয়েছে তাঁদের শেষ ইচ্ছার কথাও। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, আর্থিক সঙ্কটের কারণে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে কসবার ভটাচার্য পরিবার। যদিও নোটে তেমন কিছু তাঁরা লেখেননি। লিখেছেন, তাঁরা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করছেন।
কসবার রাজডাঙা গোল্ড পার্কের ফ্ল্যাট থেকে মঙ্গলবার উদ্ধার হয় একই পরিবারের তিন জনের ঝুলন্ত দেহ। ৭০ বছরের বৃদ্ধ সরজিৎ ভটাচার্য, তাঁর স্ত্রী গার্গী ভট্টাচার্য (৬৮) এবং পুত্র আয়ুষ্মান ভট্টাচার্য (৩৮) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, দড়ি থেকে ঝুলে পড়ার কারণেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের গলায় অবিচ্ছিন্ন ফাঁসের দাগ রয়েছে। সারা শরীরের আর কোথাও কোনও ক্ষত ছিল না।
আরও পড়ুন:
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, আর্থিক সঙ্কটে ভুগছিল কসবার এই ভট্টাচার্য পরিবার। সুইসাইড নোটে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘আমরা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করছি। স্বেচ্ছায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’’ শেষ ইচ্ছা হিসাবে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের তিন জনকেই যেন একসঙ্গে একই জায়গায় দাহ করা হয়। তবেই তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরজিৎ জমি, বাড়ির দালালির কাজ করতেন। এমনিতে বাড়ির বাইরে খুব একটা দেখা যেত না তাঁকে। তিনি এবং তাঁর পুত্র সকালে জল আনতে যেতেন। সরজিৎ মাঝেমধ্যে দোকানে যেতেন। তা ছাড়া তাঁদের পরিবারের কাউকে খুব একটা বাইরে বার হতে দেখা যেত না বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। প্রতিবেশীদের একাংশ জানিয়েছেন, ৩৮ বছরের আয়ুষ্মানের পায়ে সমস্যা ছিল। তিনি পা টেনে টেনে হাঁটতেন। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও আর্থিক সমস্যা ছিল কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কসবা থানায় যোগাযোগ করে স্থানীয়েরা জানান, ৫০ নম্বর রাজডাঙা গোল্ড পার্কের ফ্ল্যাটবাড়ির তিন তলার বাসিন্দারা মঙ্গলবার সকাল থেকে দরজা খোলেননি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ দেখে, ফ্ল্যাটের কোলাপসিবল গেট ভিতর থেকে তালাবন্ধ। তার পিছনে রয়েছে কাঠের দরজা। সেটিও বন্ধ। পুলিশ দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। দেখা যায়, সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে সরজিতের দেহ। ভিতরের ঘরে তাঁর স্ত্রী গার্গী এবং পুত্র আয়ুষ্মানের দেহও ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ঘটনায় অনেকে কয়েক মাস আগের ট্যাংরাকাণ্ডের ছায়া দেখছিলেন। ট্যাংরার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল দে পরিবারের দুই বধূ এবং এক কিশোরীর দেহ। অভিযোগ, তিন জনকে খুনের পর দেহগুলি বাড়িতে রেখে কিশোর প্রতীপ দে এবং তার বাবা প্রণয় দে-কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন কাকা প্রসূন দে। উদ্দেশ্য ছিল আত্মহনন। ভোররাতে অভিষিক্তার কাছে তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তিন জনই গুরুতর জখম হন। দীর্ঘ দিন এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তাঁরা। এর পর খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দুই ভাইকে। কিশোর এখন হোমে।