E-Paper

বিজয় দিবসে মৈত্রীর কথা মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে, শোনা গেল না হিংসার সমালোচনা

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি সেনা। সেই ঘটনাকে মনে রেখেই প্রতি বছর ‘বিজয় দিবস’ পালন করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৬
উদ্‌যাপন: রাজভবনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিরা। মঙ্গলবার।

উদ্‌যাপন: রাজভবনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিরা। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

এ দেশে পা রেখে ওঁরা মৈত্রীর কথা বললেন। বন্ধুত্বের কথা শোনালেন। দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথাও মনে করাতে ভুললেন না। কিন্তু কাঁটাতারের ও-পারে যে ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন, তার কড়া সমালোচনা সে ভাবে শোনা গেল না তাঁদের মুখে। বরং ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বা ‘রাজনৈতিক বিষয়’ বলেই যেন বিতর্ক এড়িয়ে যেতে চাইলেন তাঁরা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি সেনা। সেই ঘটনাকে মনে রেখেই প্রতি বছর ‘বিজয় দিবস’ পালন করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহম্মদ আমিনুর রহমান এবং ন’জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার। বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তাঁরা। ছিলেন ’৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নেওয়া একাধিক অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাকর্তাও। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হলেও সেখানে অবধারিত ভাবেই উঠল বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ।

বাংলাদেশি অতিথিরা মনে করেন, দু’দেশের মধ্যে তিক্ততার আবহ তৈরি হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তা কোনও স্থায়ী ক্ষত তৈরি করতে পারবে না। যা ঘটছে, তা ‘সাময়িক’। এই দুঃসময় কেটে গেলে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কাঁটাতারের ও-পারে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই দাবি করছেন শহরে আসা মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা মনে করেন, সে দেশে যা ঘটছে, তা ‘রাজনৈতিক বিষয়’। সে সব নিয়ে ভাবার চেয়ে তাঁরা বরং মনে করাতে চাইলেন, দু’দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কথা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদানও অস্বীকার করেছে। যদিও তা মানছেন না মুক্তিযোদ্ধারা। ভারতীয় সেনার পাশাপাশি কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বলে মানছেন তাঁরা। বাংলাদেশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বললেন, ‘‘ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের অবদান ভোলার নয়। সেই সময়ে অনেক বাংলাদেশিকে এ রাজ্যের মানুষ আশ্রয় দিয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাও সব রকম ভাবে আমাদের সাহায্য করেছিল। তার পর থেকেই দু’দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়।’’ এ দেশের বাসিন্দাদের বাংলাদেশে ঘুরে আসার আমন্ত্রণও জানান তিনি। কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাকর্মীদের একাংশ চার দিনে কলকাতা দখল করার হুমকি দিয়েছিলেন। এই ধরনের কথাকে অবান্তর প্রলাপ বলে উড়িয়ে দেন ওই সেনাকর্তা। তবে, বাংলাদেশে সন্ন্যাসী চিন্ময়কুমার দাসের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ উঠতেই সাবধানি তিনি। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি আমিনুর রহমান।

বাংলাদেশ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গির কবীর সেখানে বর্তমানে ঘটে চলা নানা ঘটনাকে গোটা দেশের ছবি হিসাবে দেখতে নারাজ। সে সব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সর্বত্র সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন হচ্ছে, এমনটা নয়। এ সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে হয়। আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা কখনও কোনও দেশের সামগ্রিক ছবি হতে পারে না। যাঁরা হিন্দু বা মুসলিমদের আক্রমণ করছেন, তাঁরা আসলে কোনও সমাজেরই প্রতিনিধি নন।’’ অশক্ত শরীরে লাঠি হাতে কলকাতায় এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা মহম্মদ আলি আশরাফ। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে রাজভবনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘‘প্রায় মরেই গিয়েছিলাম। শরীরে পাঁচটা গুলি লেগেছিল। অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশ পেয়েছি। ব্রিটিশরা আমাদের ভাগ করেছিল। কিন্তু, আসলে তো আমরা এক।’’

মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে ঐক্যের কথা শোনা গেলেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে চলা নির্যাতন বা ভারত-বিদ্বেষ নিয়ে তাঁরা বিশেষ কিছু না বলায় অবাক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাকর্তারাও। তাঁদের মতে, যাঁরা ভারত-বিরোধিতা করছেন, তাঁরা হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন না, অথবা সেটা অস্বীকার করছেন নিজেদের স্বার্থে। রাজ্যপাল যদিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে গণতন্ত্রের জয় হিসাবেই দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত বা বাংলাদেশ নয়, গণতন্ত্রের জয় হয়েছিল ওই দিন। বাংলাদেশের জয় ছিল জাতীয় সংহতি, আবেগ ও মানবিকতার জয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Unrest Indian Army

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy