Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Jiban Krishna Saha

বিধায়ক, শিক্ষকের বেতন দুই-ই নিতেন তৃণমূলের জীবনকৃষ্ণ! বিজেপি বলছে, ‘নীতিহীন কাজ’

২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। তার পর ২০১৩ সালে বীরভূম জেলার নানুরের দেবগ্রাম হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০২১ সালে যোগ দেন কুন্ডল হাইস্কুলে।

image of MLA Jibankrishna Saha

জীবনকৃষ্ণের বেতন-কীর্তি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৩৫
Share: Save:

বিধায়ক এবং স্কুলশিক্ষকের বেতন দুই-ই নিতেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। রবিবার ভোরে তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে নানা কাহিনি উঠে আসছে তাঁকে ঘিরে। স্কুলে শিক্ষকতা করে কী ভাবে মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম জেলায় বিপুল সম্পত্তি এই অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িয়েছিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এক সময় বাবার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন জীবনকৃষ্ণ। কিন্তু প্রথমে ২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তাঁর পথচলা। তার পর ২০১৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষকতা ত্যাগ করে বীরভূম জেলার নানুরের দেবগ্রাম হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বদলি নিয়ে কুন্ডল হাইস্কুলে যোগদান করছিলেন ২০২১ সালে। ওই বছরই বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরেই স্কুলে ছুটি নেন তিনি। স্কুলে ছুটি নেওয়ার পরেও নিয়মিত বেতন নিয়েছেন জীবনকৃষ্ণ, সঙ্গে নিয়েছেন বিধায়কদের জন্য বরাদ্দ বেতনও। এমনই অভিযোগ মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশংকর দত্তের। তিনি বলেন, “শিক্ষক এবং বিধায়কের দুই বেতন নিয়ে চরম নীতিহীনতার কাজ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ।” তিনি আরও বলেন, “শুধু চাকরি চুরি, গরু চুরি, কয়লা চুরি নয়, সরকারি সম্পত্তি কী ভাবে লুট করতে হয় রাজ্যের শাসকদল তা করে দেখিয়েছে। শিক্ষক আগামী প্রজন্ম তৈরি করেন। আর তৃণমূলের শিক্ষক-বিধায়ক কী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সবাই দেখছেন। রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কদের এই সব নীতিহীন কাজ দিনের পর দিন সমর্থন করে যাচ্ছেন। খুঁজলে পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক জীবনকৃষ্ণের সন্ধান পাওয়া যাবে তৃণমূলে।”

প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছুটি নেওয়া সত্ত্বেও বিধায়ক নিয়মিত মোটা টাকার বেতন নিয়েছেন স্কুল থেকে। প্রায় ৬০ হাজার টাকা বেতন পেতেন শিক্ষকতা করার জন্য। আর বিধানসভায় বিধায়কের বেতন বাবদ ৮২ হাজার টাকাও যেত তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এ ছাড়াও অধিবেশন চললে অতিরিক্ত ভাতা পেতেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে একজন শিক্ষক নীতিগত ভাবে এই দুই বেতনই নিতে পারেন? গত দু’বছরের বেশির ভাগ সময় ছুটিতে কাটিয়েছেন জীবনকৃষ্ণ। বিধায়ক হওয়ার পর থেকে আর স্কুলে সে ভাবে যেতেন না তিনি, এমনটাই স্কুল সূত্রের খবর। তাই স্কুলে না গিয়ে কী ভাবে তিনি বেতন নিয়েছেন? তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে শিক্ষক মহলে। অতীতে বা বর্তমানে এমন অনেক বিধায়ক রয়েছেন যাঁরা স্কুল শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। ওই সব বিধায়ক স্কুলের চাকরি বজায় রেখে নিজেদের দুই দায়িত্ব সামাল দেন। তাদেরই একজন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। যিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ দিন। তাঁর কথায়, “কে কী করেছে আমি বলতে পারব না। তবে আমি স্কুলে শিক্ষকতা করেই রাজনীতি করেছি। বিধায়ক হিসাবে নিজের দায়িত্ব সামলেছি। শুধুমাত্র অধিবেশন যখন চলত তখন প্রাপ্য ছুটি থেকেই নিয়েছি। বিধায়ক হিসাবে খুব প্রয়োজন হলে সিএল বা মেডিক্যাল লিভ নিতাম। বছরের পর বছর ছুটি নিয়ে কখনও নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাইনি। তাই শিক্ষকের বেতন এবং বিধায়কের বেতনও নিয়েছি।”

তৃণমূল পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেছেন, “এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের কী নিয়ম আছে, সে বিষয়ে জেনেই কোনও মন্তব্য করা সম্ভব।” তবে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের এমন জোড়া বেতন নেওয়ার ঘটনাকে তৃণমূলের দুর্নীতির আরও একটি রূপ বলেই আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। বিধায়ক শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বিধানসভায় তোলা একটি প্রশ্নের ভিত্তিতে নতুন একটি নির্দেশিকা জারি হয় রাজ্য সরকারের তরফে। সমবায় দফতর সেই নির্দেশিকা জারি করে বলে, কোনও শিক্ষক-বিধায়ক উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে এবং নথি জমা দিয়ে স্কুলে ছুটির আবেদন করলে তবেই তা গৃহীত হবে। সঙ্গে তিনি পাবেন সবেতন ছুটি। যদি তিনি এমনটা না করেন, তাহলে ‘লিভ উইদআউট পে’ বলে ধরা হবে। যে কংগ্রেস বিধায়কের প্রশ্নের ভিত্তিতে এই নির্দেশিকা জারি হয়, সেই বিধায়ক মিহির এখন বিজেপিতে। জীবনকৃষ্ণের ঘটনায় নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির বলেন, “একজন শিক্ষক, বিধায়ক হিসাবে যা যা পাওনা পেতেই পারেন। কিন্তু যখন তিনি যাবতীয় শর্তপূরণ করে বিধানসভায় তাঁর অনুপস্থিতির সঠিক কারণ জানিয়ে উপযুক্ত নথি জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা ওই তৃণমূল বিধায়ক যদি এই শর্তগুলি পূরণ না করে থাকেন, তা হলে তিনি জোড়া বেতন নিয়ে অন্যায় করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jiban Krishna Saha TMC BJP CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE