Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Internal Conflict TMC

উপরতলার দ্বন্দ্বে সংশয়ে তৃণমূলস্তর

রাজ্যের নেতাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও তা নিয়ে কোথাও টুঁ শব্দটিও করেননি দলের কোনও নেতা।

চায়ের দোকানে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা খলিলুর রহমানের।

চায়ের দোকানে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা খলিলুর রহমানের।  ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৩
Share: Save:

শাসক দলের উপরতলার দ্বন্দ্ব ও নেতাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থার হানায় সংশয়ে পড়েছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা। মুর্শিদাবাদেও সেই সঙ্গে নতুন-পুরনো দ্বন্দ্বে বিভ্রান্তি বাড়ছে দলের মধ্যে। জেলার বহু জায়গাতেই দলের প্রতিষ্ঠা দিবস, দলনেত্রীর জন্মদিন বা স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন হলেও আগের মতো উপচে পড়া ভিড় সে ভাবে এবার দেখা যায়নি জেলার বেশির ভাগ জায়গাতে। কোথাও আবার বিধায়কদের জন্মদিন পালন হয়েছে সাড়ম্বরে।

রাজ্যের নেতাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও তা নিয়ে কোথাও টুঁ শব্দটিও করেননি দলের কোনও নেতা। তবে দলনেত্রী টিভি দেখবেন না বললেও সর্বত্রই কর্মীদের নজর এখন টিভির দিকে। দলের জেলা নেতাদের ধারণা, এই সব দ্বন্দ্বের কারণেই ব্লক কমিটি ঘোষণা স্থগিত হয়ে গিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

জেলার এক সর্বোচ্চ পদাধিকারী তৃণমূল নেতার কথায়, “সামনে লোকসভা নির্বাচন। জুন মাসে মেয়াদ শেষ হচ্ছে লোকসভা সহ ৪ বিধানসভার। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন তা ঘোষণা করায় জেলায় অফিসারদের বদলির নির্দেশ কার্যকরী করতে শুরু করেছেন। জেলায় অন্তত জনা ১২ পদস্থ পুলিশ অফিসার আগে কমিশনের শাস্তির মুখে পড়ায় তাদের সরানো হবে। দু’টি বিরোধী দল তাদের তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে দেশে বিরোধীরা একজোট হতে আলোচনা চালাচ্ছে, তখন তৃণমূলের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে জেলার কর্মীদের মধ্যে।”

এক দলীয় বিধায়কের কথায়, ‘‘সংবাদ মাধ্যম তিলকে তাল করছে। তাদের ফাঁদা পাতে পা গলাচ্ছেন কয়েকজন রাজ্য নেতা। আমরা কী করব, কর্মীদের কী বলব বুঝতে পারছি না। তাই এই মুহূর্তে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখা। ১৯ জানুয়ারির বৈঠকে কী বলেন তিনি সেই অপেক্ষাতেই আছে সকলেই।”

দলের মধ্যে পুরনোদের রাখার কথা বলেছেন দলনেত্রী বার বার। অথচ এ জেলায় তা ঘটছে না বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতা শেখ ফুরকানের। ১৯৯৮ সাল থেকে মমতার সঙ্গে রয়েছেন তিনি।এক সময় দলের হয়ে নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছেন। জেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছর বহরমপুরে প্রশাসনিক সভায় ঢোকার ছাড়পত্র না পেয়ে তাকে বাইরে দেখতে পান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ পাঠিয়ে তাঁকে বৈঠকে ডেকে নেন মমতা।
ফুরকান বলছেন, “দলের প্রায় আড়াইশো জনের জেলা কমিটিতেও স্থান হয়নি আমার। দলে আমার গুরুত্ব কতটুকু আমি নিজেও এখন তা জানি না। দিদিকে ভালবেসে দলে আছি এইমাত্র। বহু পুরনো কর্মী হতাশ হয়ে বসে গেছেন। দিদি বললেও জেলা কমিটি শোনে কই?”

আর এক কর্মী বহরমপুর নিয়াল্লিশপাড়ার গরিব পরিবারের আনিকুল শেখ বরাবর মমতার সঙ্গেই।এ পর্যন্ত কখনও কোনও দলীয় কমিটিতে স্থান হয়নি তাঁর। জেলার প্রতিষ্ঠা দিবসে হঠাৎ সংবর্ধনা দিয়েছে তাকে তৃণমূলের জেলা কমিটি। হতবাক আনিকুল বলছেন, “গত ১০/১২ বছর দলের কেউ আমাদের আর ডাকে না। পুরনোরা অনেকে বিতৃষ্ণায় বসে গেছেন। তবু দিদি যতদিন আছে ততদিন থাকব।” জঙ্গিপুরের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন,“সংবাদ মাধ্যমে দলের দ্বন্দ্ব নিয়ে যা দেখানো হচ্ছে তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। অন্যত্র কী হচ্ছে জানি না, তবে মুর্শিদাবাদে দলের মধ্যে নতুন পুরনো সে ভাবে কোনও দ্বন্দ্ব নেই । কমিটিতে না থাকলেও জেলার বহু অনুষ্ঠানেই তাঁকে এখন ডাকা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE