উত্তরবঙ্গের দুর্যোগের পর তিন দিন পার। নতুন করে আর বৃষ্টি না-হওয়ায় বিপর্যস্ত এলাকার পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে ধসের কারণে এখনও পাহাড়ের বহু রাস্তা বন্ধ। ঘুরপথেই চলছে যাতায়াত। ভাঙা সেতু মেরামতিও চলছে। কত দিনে আবার পাহাড়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে? সেই প্রশ্নের উত্তর অধরা।
নতুন করে দুর্যোগের শঙ্কা কাটিয়ে দার্জিলিং আবার নিজের পুরনো রূপে ফিরছে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা তেমন নেই। মাঝেমধ্যেই মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দার্জিলিঙে আটকে থাকা পর্যটকেরা নামতে শুরু করেন। মঙ্গলবারও অনেকেই নেমেছেন। প্রায় সব পর্যটককেই নিরাপদে নামানো সম্ভব হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। তবে উৎকণ্ঠার মেঘ এখনও কাটেনি।
শনিবার রাতভর বৃষ্টিতে দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকায় ধস নামে। জলমগ্ন হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও। তবে রবিবার থেকে বৃষ্টি না-হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়। তবে এই দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারের বিকেলের পর থেকে নতুন কোনও দেহ উদ্ধার হয়নি। যদিও দুর্যোগের পর থেকে নিখোঁজ অনেকেই। এখনও পর্যন্ত কত জন নিখোঁজ, কোথায় তাঁরা আছেন— এই সব নিয়ে ধোঁয়াশায় প্রশাসন। নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
রবিবার রোহিণী রোড সাময়িক ভাবে খোলা ছিল। তবে সোমবার সকাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। দুধিয়ায় সেতু ভেঙে যাওয়ায় মিরিকের রাস্তাও আপাতত আংশিক বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার দুধিয়ার ওই সেতু পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভাবে মেরামতির কাজ চলছে, তা খতিয়ে দেখেন তিনি। আপাতত, একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করছে প্রশাসন। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ওই সেতু তৈরি হবে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সেতু তৈরি হলে দার্জিলিঙের যাওয়া-আসার সুবিধা হবে। যদিও এখন ঘুরপথে দার্জিলিং পৌঁছোতে হচ্ছে। আবার ওই পথেই সমতলে ফেরানোর কাজ চলছে।
আরও পড়ুন:
দার্জিলিং থেকে সমতলে নামার জন্য হিল কার্ট রোড এবং পাঙ্খাবাড়ি রোড খোলা থাকার কথা জানানো হয়েছিল সোমবারই। হিল কার্ট রোড, যা তিনধারিয়া হয়ে নেমে যাচ্ছে সুকনার দিকে। তার পরে সেখান থেকে রাস্তা চলে যাচ্ছে শিলিগুড়িতে। এ ছাড়া পাঙ্খাবাড়ি রোডও খোলা রয়েছে। তবে এই রাস্তাটি তুলনামূলক দুর্গম। কার্শিয়াং শহরের কিছুটা আগে থেকে রাস্তাটি নেমে যায় নীচের দিকে। তার পরে দুধিয়ার কিছু দূরে গাড়িধুরায় গিয়ে মেশে রাস্তাটি। সেখান থেকে চলে যায় শিলিগুড়িতে। আপাতত এই দুই পথই জুড়ছে পাহাড় ও সমতলকে।
অন্য দিকে, সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিলিগুড়ির সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত ভারী পণ্যবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত এবং বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে যাত্রিবাহী বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।