Advertisement
E-Paper

সেরার মুকুটেও দুর্নীতির অভিযোগ-কাঁটা

বছর চারেক আগে একবার অভিযোগ উঠেছিল, শীতলখুচিতে একটি পুকুর না কেটেই তুলে নেওয়া হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা, দিনহাটা-১ নম্বর ব্লকে কেঁচো সার প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৪৪
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

চিত্র এক— গ্রামের নাম নাককাটিগছ। মাস দুয়েক আগে একশো দিনের কাজ নিয়ে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে ধুন্ধুমার হয় সেখানে। বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুর, আগুন ধরানোর চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। এক পক্ষের অভিযোগ ছিল, একশো দিনের টাকায় কাজ হয়েছে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পিন্টু হোসেনের বাড়িতে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তা নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়েছে।

চিত্র দুই— গ্রামের নাম ফলিমারি। একশো দিনের কাজে টিউবওয়েলের চারপাশ পাকা করে নিকাশি তৈরি করা হয়। সেই কাজে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। অভিযোগ ওঠে, ৯ বস্তা সিমেন্টের কাজ ২ বস্তায় হয়েছে। ১৬৩টি ইটের জায়গায় একটিও ইট দেওয়া হয়নি। বালি-পাথর দেওয়া হয়েছে ৬ বস্তা, যেখানে তার অনেক বেশি ধরা হয়েছে প্রকল্পে।

চিত্র তিন— গ্রামের নাম গোপালপুর। গ্রামের ভিতরে অলিতে-গলিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে ছোটখাটো কংক্রিটের ট্যাঙ্ক। কোনওটায় মাছ চাষ হচ্ছে ঠিকই, কোনওটা কিন্তু ভরে গিয়েছে আগাছায়। একশো দিনের কাজে মাছ চাষের জন্য ওই ট্যাঙ্ক তৈরি নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ গিয়েছে ‘দিদিকে বলো’তে।

প্রথম ঘটনা দু’টি বাংলাদেশ ও অসম সীমান্ত লাগোয়া কোচবিহারের দু’টি গ্রাম নাককাটিগছ ও ফলিমারি’র। নাককাটিগছের পিন্টু হোসেন বলেন, “মিথ্যে অভিযোগ। আমার বাড়িতে এক কোদাল মাটিও ফেলেনি। বদনাম করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।” তুফানগঞ্জের মহকুমাশাসক অরবিন্দ ঘোষ বলেন, “ফলিমারির কাজ চলছে। অভিযোগ পাওয়ার পরে তা খতিয়ে দেখে বিল পেমেন্টের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি অভিযোগ পাইনি।” তৃতীয় ঘটনাটি কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের। ওই ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি জেলা পরিষদের সদস্য পরিমল বর্মণ বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছনো প্রধান লক্ষ্য। মাছের ট্যাঙ্ক তেমনই একটি প্রকল্প। ওই প্রকল্পে ঠিকাদার জিনিসপত্র সরবরাহ করেছে। প্রথম দিকে কিছু খারাপ হয়েছে। তবে সামগ্রিক ফল ভাল। পঞ্চায়েত বা প্রধান দুর্নীতি করেছেন, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।”

একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে কোচবিহার অন্য জেলাগুলির থেকে একটি বিষয়ে আলাদা। গত দু’বছর ধরে তারা এই ক্ষেত্রে দেশের সেরা। সেখানে কোচবিহারের গ্রামে গ্রামেই এমন বিস্তর অভিযোগ ঘুরছে। কোচবিহার জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও বলেন, “নির্দিষ্ট করে কোনও অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

২০১৭ সালে কোচবিহার জেলা প্রশাসন জবকার্ডধারীদের গড়ে ২৮ দিনের কাজ দিতে পেরেছিল। যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরের বছরই জবকার্ডধারীরা গড়ে ৫৮ দিন কাজ পান। এক ধাক্কায় তিরিশ দিনের হেরফেরই এগিয়ে দেয় কোচবিহারকে। সেরা বাছার সময়ে জবকার্ড-ধারীদের কাজের পরিসংখ্যান, নতুন বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, স্থায়ী সম্পদ তৈরির মতো বিষয় খতিয়ে দেখেন দেশের প্রতিনিধিরা। জেলায় শুধু রাস্তা তৈরির কাজে না থেকে, নদী বাঁধ তৈরি, জমির বালি সরিয়ে কৃষিকাজের উপযোগী করে তোলা, সিমেন্টের ট্যাঙ্কে মাছ চাষ, কেঁচো সার তৈরি, পোলট্রি ফার্ম তৈরি করার মতো কাজেও হাত দেয় প্রশাসন।

বছর চারেক আগে একবার অভিযোগ উঠেছিল, শীতলখুচিতে একটি পুকুর না কেটেই তুলে নেওয়া হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা, দিনহাটা-১ নম্বর ব্লকে কেঁচো সার প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই সময়ে এ ধরনের অভিযোগ তাড়া করে বেরিয়েছে প্রশাসনের কর্মী, ডাকঘর কর্মীদেরও। সেই অভিযোগ ফিরে এসেছে সেরা হওয়ার পরেও। মুকুট থেকে এই কাঁটা সরানোই জেলা প্রশাসনের বড় পরীক্ষা।

Corruption North Bengal Corruption
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy