Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Student

Student: স্কুল বন্ধ, মুরগি কাটছে একাদশের ছাত্র

দোকানটি ছাত্রের দাদার। স্কুল বন্ধ থাকায় ভাইকে মাংসের দোকানে বসিয়ে দাদা অন্য কাজে যায়।

নিরুপায়: দোকানে সেই ছাত্রটি।

নিরুপায়: দোকানে সেই ছাত্রটি। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ০৬:০১
Share: Save:

বাঁশ কেঁটে তৈরি ঝুড়ি দু’টি বসানো রাস্তার উপরে। গাঁ ঘেঁষে বাস, টোটো চলে যাচ্ছে। সেই শব্দে বারবার ডানা ঝাপটে ওঠে ঝুড়িবন্দি মুরগিগুলোর। সেই দিকে তাকিয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রটি। দিনকয়েক হল তাকে শেখানো হয়েছে, কী ভাবে মুরগির মাংস কাটতে হয়। দুপুর থেকে অনেকটা সময়ের জন্য মাংসের দোকানে তাকে বসতে হয়। কারণ, তার এখন স্কুল বন্ধ।

দোকানটি ছাত্রের দাদার। স্কুল বন্ধ থাকায় ভাইকে মাংসের দোকানে বসিয়ে দাদা অন্য কাজে যায়। দাদার নির্দেশ, যতদিন স্কুল বন্ধ থাকবে ছাত্রটিকে কিছুটা সময় দোকানে বসতে হবে। তাতে সংসারে আয় বাড়বে। কারণ, দাদা সেই সময়টায় অন্য কাজ করতে পারবে, জানায় ছাত্রটি। সে বলে, “আমি মাংস ভাল করে কাটতে পারি না। মুরগিগুলোকে দেখলে খুব কষ্টও হয়।”

আজ, বৃহস্পতিবার থেকে স্কুল খোলার কথা ছিল। স্কুল খুললে মাংস কেটে বিক্রি করা থেকে ‘ছুটি’ পেত ছাত্রটি। গরমের ছুটি বেড়ে গিয়েছে আরও কয়েকদিন। আরও কয়েকদিন তাকে মাংসের দোকানে বসতে হবে।

জলপাইগুড়ির ইন্দিরা কলোনিতে রাস্তার উপরেই মুরগির মাংসের দোকান। এ বছর মাধ্যমিক পাশ করেছে ছাত্রটি। জলপাইগুড়ির অরবিন্দনগরের একটি স্কুলে পড়ে সে। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে উচ্চমাধ্যমিকেও সেই স্কুলে কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে। মাধ্যমিকে নম্বর তুলনামূলক ভাল নয়। তার মধ্যে ছাত্রটি সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে ইংরেজিতে। বুধবার দুপুরে মাংসের দোকানে বসে ছাত্রটি বলল, “বাড়িতে সমস্যা তো, তাই ভাল করে পড়তে পারিনি। স্কুল খুললে আবার পড়ব।”

এ দিন দুপুরে দোকানে একাই বসেছিল ছাত্রটি। মেঘলা দুপুরে রোদের তেজ নেই, কালো মেঘের ছায়া যেন এসে পড়েছে রাস্তায়, ফুটপাতে। ছাত্রটি বসে ছিল দরমা-বেড়ার দোকানের ভিতরে। দোকানের ভিতরটায় এ দিন দুপুরেই যেন সন্ধের অন্ধকার নেমেছে। ঘরের ভিতরে আলু, পেঁয়াজও রাখা। ছাত্রটি জানাল, সেগুলিও বিক্রি করতে হয়। ফুটপাত থেকেই দোকান শুরু। একটি তক্তপোশের ওপরে টুল রাখা, তাতেই বসে ছাত্রটি। টুলের একপাশে পড়ে রয়েছে মুরগির পালক, মাংসের ছোট ছোট টুকরো। একপাশে রাখা একটি ধারাল বড় ছুরি, তাতে টাটকা রক্ত লাগা। ছাত্রটির মুখেও যেন মেঘের ছায়া পড়েছে। বাড়িতে পড়া দেখানোর কেউ নেই। স্কুল বন্ধ বলে একাদশ শ্রেণির পড়াও শুরু হয়নি। ছাত্রটি বলল, “ভেবেছিলাম কালকে থেকে আবার স্কুল হবে। স্কুল খুললে আবার পড়া শুরু হবে। নতুন বই-খাতাও কিনতে হবে।”

নতুন ক্লাসে যাওয়ার আগে একটা নতুন কলম কিনবে বলে ভেবে রেখেছিল সে। বলতে বলতেই এক খদ্দের এগিয়ে আসে। ছাত্রটিও কথা থামিয়ে দেয়। পাশে রাখা ধারাল ছুরিটা হাতে হাতে তুলে নেয়। ঝুড়িবন্দি মুরগিগুলো ডানা ঝাপটাতেই থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Chicken Meat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE