Advertisement
E-Paper

‘পাঙ্গা নিতে এসো না, চুড়ি পরে বসে নাই’, অনুব্রত জেলায় ফিরতেই হুঁশিয়ারি কাজলের! নিশানায় কে?

অতীতে অনুব্রত-বিরোধী স্বর থাকলেও তা খুব একটা প্রকাশ পেত না। তাঁর দাপটে ঢাকা পড়ে যেত। কিন্তু সেই অনুব্রত আর এই অনুব্রতের মধ্যে ফারাক রয়েছে বলেই অভিমত জেলার অনেকের।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৭
Kajal Sheikh warned the close leader of Anubrata Mondal without naming him

(বাঁ দিকে) অনুব্রত মণ্ডল। কাজল শেখ। (ডান দিকে) —ফাইল ছবি।

দু’বছর পর মঙ্গলবার জেল থেকে জেলায় ফিরেছেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। বুধবার তিনি বোলপুরে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠকও করেছেন। যদিও সেই বৈঠকে ছিলেন না জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। যাঁর সঙ্গে অনুব্রতের সম্পর্ক আগে থেকেই ‘মধুর’। বুধবার রাতেই কাজলের নিজের ‘এলাকা’ নানুরে দলীয় কর্মীদের বৈঠকে তাঁর বক্তৃতায় যে সুর শোনা গিয়েছে, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে বীরভূম জেলার রাজনীতিতে।

নানুরের বাসাপাড়ায় বুধবার রাতে কর্মী-বৈঠকে কাজলকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি দাবা খেলতে জানি। হাডুডু-ও জানি। খেলা হবে, গান শুনিয়ে লাভ নেই।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘পাঙ্গা নিতে এসো না। হাতে চুড়ি পরে বসে নাই। যে দিন গোটাব, সে দিন একদম গুটিয়ে দেব।’’ কাজল তাঁর বক্তৃতায় কারও নাম করেননি। তবে বীরভূমের রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহালদের অনেকে বলছেন, কাজল হুঁশিয়ারি দিতে চেয়েছেন নানুরেরই ‘অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ’ তৃণমূল নেতা করিম খানকে।

কে এই করিম? অনুব্রত তিহাড় জেলে থাকার সময়ে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ রাখতেন করিম। দিনের পর দিন গিয়ে দিল্লিতে থাকতেন। আদালতে অনুব্রতের মামলার শুনানিতেও নিয়মিত হাজির থাকতেন করিম। ঘটনাচক্রে, কাজলেরও ‘উত্থানভূমি’ নানুরই। অনুব্রত জেলায় ফিরতে সেই করিম নতুন করে দাপট দেখাতে শুরু করেছেন বলে খবর। মঙ্গলবার রাতেই অনুগামীদের নিয়ে করিম নানুরের বাসাপাড়া পার্টি অফিসে গিয়েছিলেন। অনেকের মতে, বুধবার তারই পাল্টা সভা করে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন কাজল।

করিম বীরভূম জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে অনুব্রত ছিলেন জেলবন্দি। জেলা সংগঠন চালাত দলীয় কোর কমিটি। যার অন্যতম সদস্য কাজল। ভোটের পরে ‘অনুব্রত-বিরোধী’ কাজলকেই জেলা সভাধিপতি করে দল। সেই সময়েই অনেকে বলেছিলেন, অনুব্রত বাইরে থাকলে কাজল কখনওই ওই পদে যেতে পারতেন না।

অনুব্রত জেলায় ফেরা ইস্তক বীরভূমের গোষ্ঠী-রাজনীতির বিভিন্ন সমীকরণ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকালে অনুব্রত বাড়িতে ঢোকার পরে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীরা গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু দুয়ার থেকেই তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অনুব্রত। অথচ নলহাটির বিধায়ক রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ, বোলপুর পুরসভার পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ, তাঁর স্বামী দেবাশিস ঘোষদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি। যা বীরভূমের তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী-ব্রত’ প্রকট করে দিয়েছিল।

বুধবার নানুরের কর্মী-বৈঠকে কাজল এ-ও বলেছেন, ‘‘গ্রুপবাজি করতে এসো না। গ্রুপবাজি করতে এলে ভাল হবে না।’’ তবে পাশাপাশিই তিনি এমনও বলেছেন যে, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে আমি কাজ করব।’’ মুখে কাজল বলছেন, অনুব্রত তাঁর ‘অভিভাবক’। তবে বাস্তবের ঘটনাক্রম ‘অন্য’ কথা বলছে বলেই অভিমত দলের অনেকের। তাঁদের বক্তব্য, অভিভাবকের ‘ঘনিষ্ঠ’কে লক্ষ্য করে এমন হুঁশিয়ারি কেন! এ কথা ঠিক যে, অতীতে জেলায় অনেকের কণ্ঠে অনুব্রত-বিরোধী স্বর থাকলেও তা খুব একটা প্রকাশ পেত না। তাঁর দাপটেই ঢাকা পড়ে যেত। কিন্তু সেই অনুব্রত আর এই অনুব্রতের মধ্যে ফারাক রয়েছে বলেই অভিমত অনেকের। তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘‘অনুব্রত জেলে থাকার সময় পঞ্চায়েত ও লোকসভায় তৃণমূল বীরভূমে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ফলে তিনি না থাকলে দল ভোটে জিতবে না, সেই ‘মিথ’ ভেঙে গিয়েছে। এর মধ্যে কাজলেরাও নিজেদের মতো করে সংগঠন গড়েছেন। ফলে সংঘাত থাকবেই। কিন্তু তা কতটা ঠিকরে বার হয়, সেটাই দেখার।’’

Kajal Sheikh Anubrata Mondal TMC Leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy