Advertisement
E-Paper

সন্তানহারা পরির সর্বক্ষণের সঙ্গী এখন ছোট্ট টুপুস

জানুয়ারিতে বরাহনগরের কুমোরপাড়া লেনের বাসিন্দা কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই আগুনেই চোখের সামনে সাত সন্তানকে দগ্ধ হতে দেখেছিল পরি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৬
টুপুসের সঙ্গে খেলা। (পাশে) সন্তানদের হারিয়ে বিষণ্ণ পরি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়, ফাইল চিত্র

টুপুসের সঙ্গে খেলা। (পাশে) সন্তানদের হারিয়ে বিষণ্ণ পরি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়, ফাইল চিত্র

আট মাস আগে আগুনে ঝলসে গিয়েছিল তার আট সন্তান। দিন সাতেক বয়সের সন্তানদের হারানোর যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েছিল মা। তবে পরিবারের সকলের সাহচর্য, লং ড্রাইভে বেড়াতে যাওয়া— এ সবই স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়েছে বরাহনগরের পরি ওরফে মুম্বিকে।

জানুয়ারিতে বরাহনগরের কুমোরপাড়া লেনের বাসিন্দা কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই আগুনেই চোখের সামনে সাত সন্তানকে দগ্ধ হতে দেখেছিল পরি। আগুনে ঝাঁপ দিয়ে সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করেও শেষে হার মেনেছিল ল্যাব্রাডর প্রজাতির ওই পোষ্য। সন্তান হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল পরি। প্রথম কয়েক দিন বন্ধ রেখেছিল খাওয়াদাওয়া। সারা ক্ষণই চেষ্টা করত, যে ঘরে তার সন্তানেরা ছিল সেখানে ছুটে যেতে। কিন্তু সেই ঘরে গেলে পোষ্যের মানসিক যন্ত্রণা আরও বাড়বে ভেবে সেখানে পরিকে যেতে দিতেন না বাড়ির লোকজন।

শেষে পশু চিকিৎসকদের পরামর্শে ঘটনার দু’দিন পরেই অনাথ চার পথকুকুরের ছানাকে পরির কাছে এনে দেয় ওই পরিবারের লোকজন। প্রথম দিন মানিয়ে নিতে না পারলেও পরে প্রায় এক মাস ওই ছানাদেরই সন্তান ভেবে দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে চেটে চেটে আদর করা, সবই করেছে পরি। পৃথাদেবী বলেন, ‘‘ছানাগুলিকে পেয়েই পরি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। বাড়ির সকলে এবং আত্মীয়েরাও ওকে বেশি করে ভালবাসতে শুরু করি।’’ তবে কিছু দিন আগুন দেখলেই আঁতকে উঠত পরি। তার জন্য দোতলা বাড়ির মে‌জ়েনাইন ফ্লোরের যে ঘরে ঘটনাটি ঘটেছিল, তার আমূল পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান পৃথাদেবীর স্বামী সুজিতবাবু।

তিনি জানান, পরির মানসিক যন্ত্রণা কী ভাবে সামাল দেওয়া যায় তা নিয়ে পরিবারের সকলেই চিন্তায় ছিলেন। পশু চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, পোষ্যের আতঙ্ক ও মানসিক কষ্ট কাটাতে তাকে সকলের মধ্যে রেখে বেশি করে খেলাধূলা করাতে হবে। বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে তার সঙ্গে কুকুরটিকে খেলতে দিলে মন হালকা হবে। সেই মতো সাড়ে ছয় বছরের পরির এখন প্রিয় বন্ধু ছোট্ট মেয়ে টুপুস। পৃথাদেবীর তিন বছরের ওই নাতনির সঙ্গেই খেলা করে দিন কাটে পোষ্যের। সাইকেলে চেপে টুপুস এ-ঘর ও-ঘর করলে পরিও তার পিছু ধরে। আর সাইকেল ফাঁকা পেলে তাতে ওঠার চেষ্টাও করে সে।

আসলে পুতুল থেকে সাইকেল—টুপুসের সব খেলনাই পরির পছন্দের। তা নিয়ে অবশ্য একরত্তি মেয়ের আপত্তি নেই। খেলনা নিয়ে খেলা করে দু’জনে। কখনও টুপুস নিজে হাতেই পোষ্যকে খাইয়ে দেয় ‘ডগ ফুড’। দু’জনেই একে অপরকে চোখে হারায়।

খাওয়াদাওয়াও স্বাভাবিক হয়েছে পরির। দিনে নুন ছাড়া সেদ্ধ ভাত, আনাজ-মাংস আর রাতে খায় দুধ-রুটি। যদিও পরির বেশি পছন্দ ডিমসেদ্ধ। তবে আইসক্রিম পেলে অবশ্য নালে-ঝোলে এক করে ফেলে তিন বছর বয়সে মুম্বই থেকে বরাহনগরে আসা মুম্বি।

Labrador Fire Dog
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy