Advertisement
E-Paper

লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে পরিবহণ ব্যবসায় ফেরার সুযোগ, বাসমালিকদের উৎসাহ দিতে উদ্যোগ পরিবহণ দফতরের

করোনার সংক্রমণের আগে কলকাতায় ৫৫টির বেশি মিনিবাস রুট ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩০-এর নীচে। যেখানে মিনিবাসের রুট রয়েছে, সেখানেও বাসের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১৬:৫১
Transport Department takes initiative to encourage bus owners to get back into the transport business after overcoming the shock of the lockdown

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

করোনা অতিমারির জেরে দেশ জুড়ে দীর্ঘ লকডাউন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়েছিল পরিবহণ ব্যবসা। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন বেসরকারি বাস এবং মিনিবাস মালিকেরা। যাত্রিহীন সড়ক, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ডিজ়েলের দাম এবং চালকদের রোজগারহীনতা—সব মিলিয়ে বহু মালিক বাধ্য হন তাঁদের বাস-ব্যবসা গুটিয়ে নিতে। এই অবস্থায় পরিবহণ ক্ষেত্র চাঙ্গা করতে এবং বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবায় নতুন প্রাণ আনতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি পরিবহণ দফতর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে বাসের পরিমাপ ও আসনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বাসে হুইল বেস ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে। এর ফলে বাসের গঠনগত দৈর্ঘ্য যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে যাত্রী পরিবহণের ক্ষমতাও।

বর্তমানে বাসের ক্ষেত্রে আসনসংখ্যা ন্যূনতম ২২ থেকে সর্বাধিক ৫৫ পর্যন্ত নির্ধারিত করা হয়েছে। অন্য দিকে, মিনিবাসে সর্বাধিক আসনসংখ্যা ৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে। এর আগে মিনিবাসে আসন সংখ্যা ২২-এ সীমাবদ্ধ ছিল। পরিবহণ দফতরের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে নতুন বাস কেনায় মালিকদের আগ্রহ বাড়বে, কারণ বড় বাসে বেশি যাত্রী তোলা সম্ভব, যা লাভজনক হবে ব্যবসার পক্ষে। সরকারি পরিবহণ পরিকাঠামোর বাইরে রাজ্যে দৈনন্দিন যাত্রী পরিবহণের একটি বড় অংশই নির্ভর করে বেসরকারি বাসের উপর। করোনা-পরবর্তী সময়ে সেই পরিকাঠামো ভেঙে পড়ায় চাপ বেড়েছিল সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থার উপরেও। ফলে পুজোর মরসুমের আগে এই সিদ্ধান্তকে পরিবহণ দফতরের কৌশলগত পদক্ষেপ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “অনেকেই পরিবহণ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমরা চাই তাঁরা যেন আবার ফিরে আসেন। তাঁদের সুবিধার্থেই নতুন গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। এর ফলে নতুন করে বিনিয়োগে উৎসাহ পাবেন বাসমালিকেরা।” রাজস্ব বৃদ্ধির দিক থেকেও এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশি যাত্রী বহনের ফলে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের আয়ও বাড়বে বলে আশাবাদী প্রশাসন। সব মিলিয়ে, পরিবহণ ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করতে পরিবহণ দফতরের এই উদ্যোগ রাজ্যবাসীর যাতায়াত এবং বাস মালিক, উভয়ের পক্ষেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের নেতা টিটু সাহা বলেন, ‘‘যাঁরা করোনা সংক্রমণের সময় বেসরকারি পরিবহণ ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের এই ব্যবসায় ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, পরবর্তীকালে নতুন বাসের দাম যেমন বে়ড়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাস চালানোর খরচ। সংযোগ পোর্টাল চালু হওয়ায় পুলিশের জরিমানার পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে নতুন করে এই ব্যবসায় আসার জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হচ্ছেন না।’’ করোনার সংক্রমণের আগে কলকাতায় ৫৫টির বেশি মিনিবাস রুট ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩০-এর নীচে। যেখানে মিনিবাসের রুট রয়েছে, সেখানেও বাসের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। মিনিবাস অপারেটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘নতুন এই নির্দেশের ফলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মিনিবাস ফের রাস্তায় ফিরতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগই ফিরবে না, কারণ ১৫ বছর বয়সের সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ মিনিবাসের। যদিও সরকার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আদালতে আবেদন করেছে, তা সত্ত্বেও কবে রায়দান হবে, তার জন্য তো আর দীর্ঘকাল অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। করোনা সংক্রমণের পর বাস চালানোর খরচ বাড়লেও বাসের ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি সরকার দেয়নি। তাই যদি ব্যবসায় লাভই না হয়, তবে কেন ব্যবসায়ীরা পরিবহণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবেন?’’

Transport Department West Bengal Transport Department Bus Services
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy