বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান নিয়ে আবার মুখ খুললেন ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামায়াত’ নামেই যা পরিচিত)-র প্রধান শফিকুর রহমান। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম ভারতের আনুকূল্যে দেশ স্বাধীন না হোক। আমরা চেয়েছিলাম ভোটের অধিকার আনতে পাকিস্তানিদের বাধ্য করা হোক।” জামায়াত প্রধানের বক্তব্য, এটি তাঁদের নীতিগত অবস্থান ছিল। এর পরেও যদি কাজ না হত, তবে প্রয়োজনে গেরিলাযুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করার পক্ষপাতী ছিল জামায়াত।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জমানায় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। পরে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াত শিবিরের অভিযোগ, এখনও সে দেশের নির্বাচন কমিশন ‘রাজনৈতিক দল’ হিসাবে তাঁদের স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেয়নি। সম্প্রতি এক কর্মসূচিতে ‘পচা অতীত’ পিছনে ফেলে আসার কথা বলতে শোনা গিয়েছে জামায়াত প্রধানকে। ‘প্রথম আলো’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্যেরও ব্যাখ্যা দেন শফিকুর। ‘পচা অতীত’ বলতে কি একাত্তরের (মুক্তিযুদ্ধের) কথা বোঝাতে চেয়েছেন তিনি? তা নিয়ে জামায়াত প্রধানের বক্তব্য, “একাত্তরে আমি যদি কোনও অপরাধ করি, সেটাও পচা অতীত। একাত্তরের পর যারা অপরাধ করেছে, সেগুলিও পচা অতীত।”
আরও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য নেওয়ায় আপত্তির নৈতিক অবস্থান কী কারণে, তা-ও ‘প্রথম আলো’কে জানান তিনি। শফিকুলের কথায়, “আমরা কারও দয়া-অনুকম্পায় যদি (স্বাধীন) করি, তা হলে এক বিপদ ঘাড় থেকে সরবে, এর চেয়ে বড় বিপদ আমাদের ঘাড়ে চাপবে।” তবে একাত্তরের ওই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনী যে বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞ এবং বীভৎসতা চালিয়েছিল, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জামায়াত প্রধান।
বস্তুত, বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনৈতিক সখ্য রয়েছে। একসঙ্গে সরকারও গড়েছে অতীতে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের নির্বাচনের দাবি ঘিরে দুই সংগঠনের মধ্যে ভিন্ন মত দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলির বিশ্লেষণে দুই দলের মধ্যে কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে। তবে শফিকুরের মতে, কোনও দূরত্ব তৈরি হয়নি। তাঁর বক্তব্য, প্রতিটি দলেরই নিজস্ব কর্মসূচি এবং নীতি থাকে।