প্রতীকী ছবি
বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টো। কানাড়া ব্যাঙ্কের গড়িয়াহাট শাখার ম্যানেজারকে ঘিরে গ্রাহকদের ভিড়। তাঁদের খোয়া যাওয়া টাকা কত দিনে ফিরে পাবেন, জানতে এসেছেন অনেকে। সেই সময়ে হঠাৎ ঘাম মুছতে মুছতে ম্যানেজারের ঘরে ঢুকলেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধ। কাঁধে ব্যাগ। ব্যাগের ভিতরে রাখা একগুচ্ছ কাগজ বার করে তিনি ম্যানেজারকে বললেন, ‘‘আমি কত দিন আগে আপনাদের সতর্ক করেছিলাম, বলুন? তিন বছর। এফআইআর-ও করেছিলাম। তাতেও কেউ সতর্ক হননি। তখন সতর্ক হলে আজ হয়তো এতগুলো মানুষের টাকা এই ভাবে এটিএম থেকে লোপাট হত না!’’
ব্যাঙ্ক-কে কি সতর্ক করেছিলেন রামেন্দু ঘোষ মজুমদার নামে ওই বৃদ্ধ? অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার রামেন্দুবাবু থাকেন আনন্দপুরের রেলবিহারে। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ সালে। তখন তিনি এই নিয়ে থানা-পুলিশ করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, কোনও কাজ হয়নি।
কী ভাবে প্রতারণা হয়েছিল?
রামেন্দুবাবু জানান, ২০১৫ সালের ৯ অক্টোবর কানাড়া ব্যাঙ্কের গড়িয়াহাট শাখার এটিএম থেকে ১০ হাজার টাকা তুলেছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এর কিছু দিন পরে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১০,০০০ টাকা কেউ তুলে নেয়, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বালিগঞ্জ শাখার এটিএম থেকে। রামেন্দুবাবুর কাছে কোনও এসএমএস অ্যালার্ট আসেনি। মাস তিনেক পরে তিনি যখন ব্যাঙ্কে পাসবই আপডেট করতে যান, তখন দেখেন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা উধাও। রামেন্দুবাবু তাঁর ব্যাগে রাখা পাসবই বার করে দেখান, ২০১৫-র ৯ অক্টোবর তিনি ১০ হাজার টাকা তুলেছিলেন এবং তার কিছু দিন পরেই আরও ১০ হাজার টাকা কোনও দুষ্কৃতী তুলে ফেলেছে বালিগঞ্জের সেই ব্যাঙ্ক থেকে। তাঁর দাবি, এখন যে পদ্ধতিতে কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলেছে দুষ্কৃতীরা, সেই একই পদ্ধতিতে তাঁরও টাকা তোলা হয়েছিল বছর তিন আগেই। রামেন্দুবাবু বলেন, ‘‘গড়িয়াহাট থানা, আনন্দপুর থানা, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। তখনই যদি আমার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করত, তা হলে হয়তো অনেক আগেই সতর্ক হয়ে যেত এই ব্যাঙ্ক।’’
কিন্তু কেন তখন রামেন্দুবাবুর অভিযোগে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি? কানাড়া ব্যাঙ্কের গড়িয়াহাট শাখার ম্যানেজার সুকুমার দফাদার বলেন, ‘‘রামেন্দুবাবু অভিযোগ করেছিলেন ঘটনার ৯০ দিন পরে। তত দিনে আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ মুছে গিয়েছে। তাই ফুটেজ দেখার কোনও সুযোগ ছিল না।’’ রামেন্দুবাবুর পাল্টা যুক্তি, ‘‘কাজের চাপে পাসবই প্রতি মাসে আপডেট করা হয় না। আর তা ছাড়া, তখন টাকা তোলার এসএমএস অ্যালার্ট-ই বা কেন আসেনি?’’ তবে এখন যাঁরা টাকা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করছেন, তার সঙ্গে রামেন্দুবাবুর অভিযোগও জুড়ে দিয়েছেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলেন, ‘‘ওঁর অভিযোগও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। উনিও যেন টাকা ফেরত পান, তার চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy