Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Health

সুটকেসের সূত্র ধরেই বিলেত ফেরতের ‘রহস্যভেদ’

ওই আবাসনের লোকজন জানান, ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তরুণী ইংল্যান্ডে থাকেন। মাঝেমধ্যেই এ দেশে আসেন।

রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভিড় এসএসকেএমের বহির্বিভাগের সামনে। সংক্রমণের ভয়ে মুখ ঢেকেছেন অনেকেই। ছবি: সুদীপ ঘোষ

রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভিড় এসএসকেএমের বহির্বিভাগের সামনে। সংক্রমণের ভয়ে মুখ ঢেকেছেন অনেকেই। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৩:১৪
Share: Save:

আবাসনের একতলার ফ্ল্যাটের জানলায় রাখা হলুদ রঙের সুটকেস। সেটির গায়ে জ্বলজ্বল করছে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানের ট্যাগ। শুধুমাত্র এইটুকু দেখতে পেয়েই বিদেশ থেকে বাড়ি ফেরা এক তরুণীর হদিস করে ফেললেন তাঁর প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, তিনি প্রশাসনের নজর এড়িয়েই ইংল্যান্ড থেকে কলকাতায় নেমে সোজা নিজের বাড়িতে চলে আসেন। ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয় তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যে। সল্টলেকের করুণাময়ী আবাসনের ঘটনা।

ওই আবাসনের লোকজন জানান, ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তরুণী ইংল্যান্ডে থাকেন। মাঝেমধ্যেই এ দেশে আসেন। উড়ান সংস্থার ওই ট্যাগ দেখেই তাঁর প্রতিবেশী এক যুবকের সন্দেহ হয়েছিল, হয়তো ওই তরুণী-ই কলকাতায় ফিরেছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁর বাবা-মা বিষয়টি কেন চেপে গিয়েছেন প্রতিবেশীদের কাছে, তা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয় সকলের। এর পরে তাঁরা পুলিশের সাহায্য নেন।

বিধাননগরের এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক-এক জন সাধারণ নাগরিকও পুরোদস্তুর গোয়েন্দা হয়ে উঠছেন। কেউ খুকখুক করে সামান্য কাশলেও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে অন্য জনের মধ্যে। জানলার পাশে থাকা সুটকেসও তাই তৈরি করছে রহস্য কাহিনির উত্তেজনা।’’

শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিদেশ থেকে কেউ এলে তা জানানো উচিত।’’ কিন্তু, বিদেশ থেকে ফিরেও না জানিয়ে চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকার অভিযোগও উঠছে অনেকের বিরুদ্ধে। তাই অনেক জায়গাতেই অতি সতর্ক বাসিন্দারা। তার জেরেই ওই তরুণীর লন্ডন থেকে ফিরে চুপচাপ নিজের ফ্ল্যাটে ‘লুকিয়ে’ থাকার রহস্যভেদ করেছেন তাঁর প্রতিবেশীরাই।

হলুদ সুটকেসের খবরটা বৃহস্পতিবারই দ্রুত ওই আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা চেপে ধরেন তরুণীর বাবাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেন, তাঁর মেয়ে ১৮ মার্চ লন্ডন থেকে ফিরেছেন। তবে মেয়ে নিজেই নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন। বাইরে বেরোচ্ছেন না।

বাবার সেই কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে প্রতিবেশীদের! কারণ, কলকাতায় যে দুই যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে, তাঁরাও লন্ডন থেকেই ফিরেছিলেন। ফলে লন্ডন বা ইংল্যান্ড থেকে ফেরত মানুষ এখন সন্দেহের শীর্ষে।

তরুণী নিজে ঘরবন্দি থাকলেও একই ছাদের তলায় তাঁর বাবা-মা রয়েছেন। প্রতিবেশী সোমদেব দত্তের অভিযোগ, ‘‘ওই তরুণী লন্ডন থেকে ফেরার পরে তাঁর বাবা-মা প্রাতর্ভ্রমণে গিয়েছেন। বাজারে গিয়েছেন। তাঁদের বাড়িতে পরিচারিকা যাতায়াত করছেন, গাড়িচালক এসে গাড়ি ধুচ্ছেন। তাঁদের থেকেও তো আবাসনে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।’’ সোমদেব জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরে তিনি, সপরিবার স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন। তাঁর বাড়ির পরিচারিকাকেও ছুটি দিয়েছেন।

ওই আবাসনের আর এক বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক অরিন্দম সরকার জানান, তাঁরা পুলিশ এবং স্থানীয় পুর প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। পুলিশ হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে। যদিও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই তরুণী বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁর বাবা ফোনে বলেন, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে লন্ডন থেকে মুম্বই হয়ে আমার মেয়ে এসেছে। মুম্বই বিমানবন্দরে নামার পরে ২২ বার তাঁকে পরীক্ষা করা হয়েছে।

তা ছাড়াও নিজের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে ওকে ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে। ও কলকাতায় এসেই নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। আমরা শুক্রবার সকাল থেকে আর বেরোচ্ছি না।’’

পুলিশ জানাচ্ছে, করোনার এই আতঙ্কের সময়ে বিভিন্ন বাড়ির পরিচারিকারাও অনেক ক্ষেত্রে কারও বিদেশ থেকে ফেরার হদিস দিচ্ছেন। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনে এক বিমানসেবিকার অসুস্থতার খবর ছড়িয়েছে পরিচারিকা মারফতই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Kolkata Coronavirus London
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE