প্রতীকী ছবি।
সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। কিন্তু তারই মধ্যে নতুন নতুন তত্ত্ব উঠে আসছে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস নিয়ে। কিছু দিন আগে যেটি অভ্রান্ত বলে মনে হচ্ছিল, পরে সেটাই ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। এক দিকে, ভাইরাসটির সংক্রমিত করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা। অন্য দিকে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর নতুন তত্ত্বও গবেষণার ক্ষেত্রে ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, আপাতত তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী-গবেষক মহলে।
তাঁরা উদাহরণ দিয়ে জানাচ্ছেন, শুরুতে বলা হয়েছিল, আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি বয়স্কদের। পরবর্তীকালে দেখা যায়, আক্রান্তদের তালিকায় সব বয়সিরাই রয়েছেন। ভারতে তো আক্রান্ত ও মৃত, এই দুইয়ের ক্ষেত্রেই কর্মক্ষম জনসংখ্যার হার বেশি। এক সময়ে এ-ও বলা হয়েছিল, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে, এমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
প্রতিদিন এ রকম আরও অনেক নতুন তত্ত্ব উঠে আসছে সার্স-কোভ-২-এর সংক্রমণ নিয়ে। অনেক সময়ে যা পরস্পর বিরোধীও বটে। ফলে তাতে গবেষণায় সুনির্দিষ্ট দিগনির্দেশ পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী-গবেষক মহলে। যদিও তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, যেহেতু সার্স-কোভ-২ একদম নতুন ভাইরাস, তাই তার গবেষণায় এ রকম হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ভাইরাসটির দ্রুত হারে সংক্রমণের ক্ষমতাই পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
ইমিউনোলজিস্ট ইন্দিরা নাথ জানাচ্ছেন, ভাইরাসটি সম্পর্কে যে হেতু এখনও নিশ্চিত ভাবে অনেক কিছুই বলা যাচ্ছে না, তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা উঠে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকার এক সময়ে একটি কথা বলছে, আবার রাজ্য সরকার অন্য কথা বলছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি থাকছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির আচরণ নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন। ফলে কোনটি ঠিক-কোনটি ভুল, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’’ ‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’-র জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী প্রিয়া বালসুব্রহ্মণ্যম আবার বলছেন, ‘‘এই বছর তো বটেই, ভাইরাসটি সম্পর্কে কোনও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আগামী দু’-তিন বছরও লেগে যেতে পারে। তেমন হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অনেক রোগের ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। যে ভাবে ভাইরাসটি সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে, তাতেই বিভ্রান্তি আরও বাড়ছে।’’
আরও পড়ুন: সন্দেহ করোনা, মৃতের দেহ পড়ে রইল আট ঘণ্টা
তবে যত নতুন তত্ত্বই উঠে আসুক না কেন, যতই সেটা গবেষণার ক্ষেত্রে ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়াক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোনও উপায় নেই বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানী-গবেষকদের বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে ভারতে তো বটেই, সারা বিশ্বে সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যা, দুই-ই আরও বাড়বে। কোথায় গিয়ে তা থামবে, তা বলা মুশকিল। এখানেই সরকারের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেটি হল, সঠিক তথ্য যাতে জনসাধারণের কাছে পৌঁছয়, তা সুনিশ্চিত করা এবং ভুল তথ্যের প্রচার আটকানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয়টির উপরে গুরুত্ব দিয়েছে।
বিজ্ঞানী-গবেষকদের মতে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস যে অদৃষ্টপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সেখানে সারা বিশ্বেই প্রতিষেধক বা ওষুধ খোঁজার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতাও অনেক সময়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্যের জন্ম দিচ্ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘প্রতিষেধক, ওষুধের খোঁজ চলছে বটে। কিন্তু এমনও হতে পারে যে এখনই এই দুইয়ের কোনওটিই পাওয়া গেল না। কারণ, অনেক রোগেরই প্রতিষেধক বা ওষুধ এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে যাবতীয় বিভ্রান্তির মধ্যেই মাস্ক পরা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও দূরত্ব-বিধি মানা,— এই নিয়মগুলি পালন করতে হবে। গবেষণা তো চলবেই।’’
‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামাণন লক্ষ্মীনারায়ণের কথায়, ‘‘সমস্ত নতুন ভাইরাসের ক্ষেত্রেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন তথ্য জানা গিয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯-কে হারাতে গেলে সেটাই একমাত্র পথ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy