Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের নতুন নাম ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’

ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের এক আবাসনের এ২/৯ নম্বর ফ্ল্যাটে বসেই বছরে পর বছর বাংলা সাহিত্যে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

স্মরণে: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

স্মরণে: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ লিখতে বসে যেতেন। পুজোর লেখার চাপ থাকলে লিখতে লিখতে কখন যে বেলা গড়িয়ে আড়াইটে-তিনটে বেজে যেত, সে খেয়ালই থাকত না। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলেছিলেন সেই অভ্যাস। চেষ্টা করতেন, রাতে যতটা কম লেখা যায়। অভ্যাস বদলেছিল বটে, কিন্তু লেখনী ছিল অনর্গল। আমৃত্যু।

ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের এক আবাসনের এ২/৯ নম্বর ফ্ল্যাটে বসেই বছরে পর বছর বাংলা সাহিত্যে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এ বার সেই লেখনীর স্মৃতিকে মর্যাদা দিতেই ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের নাম ‘কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। ইতিমধ্যেই মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে সেই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে পাশ হতে চলেছে। যা নিয়ে আপ্লুত সাহিত্য জগৎ। পুরসভার এই সিদ্ধান্তে খুশি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘ভীষণই ভাল সিদ্ধান্ত। সুনীলের নামে রাস্তার নামকরণ হওয়া উচিতই ছিল। সেটা অবশেষে হওয়ায় খুব ভাল লাগছে।’’

প্রসঙ্গত, কোনও রাস্তার নতুন করে নামকরণের ক্ষেত্রে পুরসভার একটি ‘রোড রিনেমিং কমিটি’ রয়েছে। সেই কমিটির তরফেই বিষয়টি বিবেচনা করা হয় ও সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কখনও সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকদের আবেদনের ভিত্তিতে, কখনও আবার কোনও রাস্তার গুরুত্ব বিবেচনা করে রাস্তার নতুন নাম দেওয়া হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এ ক্ষেত্রে পুরসভা নিজে থেকে এই নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরসভার ‘রোড রিনেমিং কমিটি’-র চেয়ারম্যান কবি জয় গোস্বামী বলেন, ‘‘বাংলা সাহিত্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অবদানকে সম্মান জানাতেই ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের নাম কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, সেই সঙ্গে আরও দু’টি এলাকা কুলিয়া ট্যাংরা ফার্স্ট লেন ও আজাদ হিন্দ বাগের নাম বদলে হচ্ছে যথাক্রমে ‘কাকাসাহেব যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল সরণি’ ও ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ বাগ’।

প্রয়াত কথাসাহিত্যিকের পারিবারিক সূত্র বলছে, ১৯৭৭ সাল থেকে ওই বাড়িতে থাকা শুরু করেন সুনীলবাবু। তাঁর স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে ঢাকুরিয়া ব্রিজের ও দিকে থাকতাম। ১৯৭৭ সালের পর থেকে এই ফ্ল্যাটেই থাকি। এখানে বসেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লিখত ও। মাঝেমধ্যে লেখার জন্য শান্তিনিকেতন চলে যেত অবশ্য। কিন্তু সব থেকে বেশি লিখেছে এই ফ্ল্যাটে বসেই। ফলে পুরসভার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শুনে আনন্দই লাগছে।’’ কখন, কী ভাবে লিখতেন তা নিয়েও স্মৃতিচারণা করেছেন স্বাতীদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকেলের দিকে ঠিক আর লিখতে চাইত না। কিন্তু চাপ থাকলে তো লিখতেই হত। অফিস থেকে ফিরে এসে লিখতে বসে যেত। এ ভাবেই বরাবর লিখত সুনীল।’’

সেই লেখনী অবশেষে থেমেছিল ২০১২ সালে। তত দিনে অবশ্য বাংলা সাহিত্যে ছড়িয়ে পড়েছে অফুরান সুনীল-আলো। যে আলোর উদ্ভাসেই নতুন নাম পেতে চলেছে ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স—‘কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sunil Gangopadhyay KMC Mandeville Gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE