Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

করোনার সঙ্গে লড়তে একজোট পঁচিশ বছর আগের সহপাঠীরা

কী ভাবে করোনা মিলিয়ে দিল তাঁদের?

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫১
Share: Save:

দীর্ঘ ২৫ বছর আগে, ১৯৯৫ সালে একসঙ্গে একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁরা। তার পরে কালের নিয়মে দূরে দূরে চলে গিয়েছেন সকলে। বর্তমানে চল্লিশোর্ধ্ব সেই সহপাঠীদের কেউ কর্মসূত্রে এ রাজ্যে, কেউ আবার ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে থাকেন। কিন্তু করোনা অতিমারি পরিস্থিতি ফের পাশাপাশি এনে দাঁড় করিয়েছে বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৫ সালের ব্যাচের সেই সব ‘কিশোর’কে। প্রাক্তন সহপাঠীদের পরিবারের কোনও সদস্য অথবা স্কুলশিক্ষকদের কেউ আক্রান্ত হলে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা। এ জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে মাস্ক, পাল্স অক্সিমিটার— কিনে রেখেছেন সবই।

কী ভাবে করোনা মিলিয়ে দিল তাঁদের? ওই ব্যাচেরই এক ছাত্র অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “১৯৯৫ সালে পাশ করার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ক্লাসের সবাইকে নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। সেই গ্রুপের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আমাদের।

কিন্তু করোনা অতিমারির সময়ে আমরাই ঠিক করি, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের কিছু করা দরকার। ‘মিশন ৯৫’ নাম দিয়ে তাই কাজ শুরু করি।”

ওই গ্রুপের আর এক সদস্য সপ্তর্ষি পাল জানান, তাঁদের স্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে ১৬০ জনের মতো ছাত্র পাশ করেছিলেন। তাঁদের সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করে এর পরে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাঁদের পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে একে অপরের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন। সপ্তর্ষি বলেন, “স্কুলের মাস্টারমশাইদেরও ভুলিনি। তাঁদেরও ফোনে জানিয়েছি যে, এই পরিস্থিতিতে কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজন হলেই যেন ফোন করে আমাদের ডেকে নেন তাঁরা।” তবে শুধু নিজেদের পরিবারই নয়, প্রয়োজনে পাড়া-প্রতিবেশীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেও যে তাঁরা দ্বিধা করছেন না, সেই কথা জানালেন ওই গ্রুপের আর এক সদস্য সুজয় দাস। তাঁর কথায়, “পাড়ায় কারও বা পরিচিতদের মধ্যে কোনও করোনা রোগীর সাহায্যের দরকার হলেও আমরা সাধ্যমতো পাশে দাঁড়াচ্ছি। তবে ব্যাচের ছেলেরা, তাঁদের পরিবার ও আমাদের স্কুলশিক্ষকদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।”

সুজয় জানান, কোভিড যুদ্ধে একে অপরকে ভরসা দিতে ইতিমধ্যেই অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, পিপিই কিট, গ্লাভস কিনে রেখেছেন তাঁরা। বরাহনগর, শ্যামবাজার ও সিঁথির বাসিন্দা তিন বন্ধুর বাড়িতে সেগুলি মজুত করা আছে। যখনই যাঁর প্রয়োজন হবে, ওই সমস্ত কোভিড সরঞ্জাম নিয়ে পাশে হাজির হয়ে যাবেন তাঁরা। সপ্তর্ষি বলেন, “অনেকেরই তো এখন করোনার চিকিৎসা বাড়িতে হচ্ছে। আর বাড়িতে চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার খুবই জরুরি। তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার বেশি করে মজুত করেছি।” কলকাতা শহরে থাকা বন্ধুরা তুলনামূলক ভাবে এই কাজে বেশি সক্রিয় হলেও পিছিয়ে নেই শহরতলি বা বিদেশে থাকা বন্ধুরাও। প্রয়োজনমতো টাকা পাঠিয়ে সাহায্য করছেন তাঁরা। গ্রুপের সকলের থেকে তোলা হয়েছে চাঁদাও।

১৯৯৫ সালের মাধ্যমিক পাশ ছাত্রদের এ হেন উদ্যোগে খুশি স্কুলের শিক্ষকরাও। ওই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, “বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেওয়ার পরে ওই ছেলেরাই ছিল আমার প্রথম ব্যাচ। ওদের সকলের নাম হয়তো এখন আর মনে নেই। কিন্তু ওরা যখন ফোনে ওদের কাজের কথা জানায়, তখন ভরসা পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, যাক বাবা, করোনা-কালে বিপদ হলে পুত্রসম ছাত্রগুলিকে তো পাশে পাব!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Schoolmates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE