Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্যকর

চিকিৎসার ন্যায় মৌলিক পরিষেবার জোগানে রাজনৈতিক প্রচার বা রেষারেষি আসিবে কেন, সে প্রশ্ন উঠিবে।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:০১
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

কার্যত সকল রাজ্যবাসীর জন্য প্রসারিত হইল ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পটি। রাজ্য সরকারের দাবি, আবেদন করিলেই গ্রাহক হওয়া যাইবে, এবং পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ মিলিবে। বিধানসভা নির্বাচন সমাসন্ন, ফলে এই ঘোষণায় রাজনীতির গন্ধ পাওয়া বিচিত্র নহে। কেন্দ্রের ‘প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান যোজনা’ প্রিমিয়ামের ষাট শতাংশ দিয়া থাকে, রাজ্য সরকার ‘স্বাস্থ্যসাথী’-র সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম দিবে। চিকিৎসার ন্যায় মৌলিক পরিষেবার জোগানে রাজনৈতিক প্রচার বা রেষারেষি আসিবে কেন, সে প্রশ্ন উঠিবে। ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর কার্ডে প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন, সেই প্রশ্নও উঠিবে। কিন্তু সে সকল বিতর্ক সরাইয়া রাজ্যবাসীর প্রয়োজনকে নজরে রাখিয়া বলিতে হয়, ইহা সময়োপযোগী। সর্বজনীন চিকিৎসা বিমার প্রয়োজন অতিমারির সময়ে আরও তীব্র হইয়াছে। রোগীর সাধ্যের সহিত বেসরকারি হাসপাতালের দাবির দূরত্ব এতই বাড়িয়াছে যে, রোগী প্রাণের ঝুঁকি লইয়া হাসপাতাল এড়াইতেছেন। হাসপাতালের খরচ জুগাইবার চিন্তা রাজ্যবাসীকে কতটা বিপন্ন করিয়াছে, তাহার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলিয়াছে— ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি শুরু হইবার সঙ্গে সঙ্গেই ছয় লক্ষের অধিক আবেদন আসিয়াছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য।

স্বাস্থ্যবিমা বাস্তবিকই চিকিৎসাবঞ্চনা কমাইতে পারে, তাহা প্রমাণিত। ২০০৮ সালে দারিদ্রসীমার নীচে নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা শুরু হইয়াছিল। মূল্যায়নে দেখা গিয়াছে, তাহাতে দরিদ্রের ব্যয় কমিয়াছে, তাঁহারা হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ অধিক গ্রহণ করিয়াছেন। তদুপরি, রোগীর ব্যয়ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হইলে হাসপাতালগুলিও লাভবান হয়। তাহারা পরিষেবার পরিসর বাড়াইতে পারে। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসা পরিকাঠামোর উপস্থিতিতে অনেক তারতম্য রহিয়াছে। বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালের উপস্থিতি অনুন্নত জেলাগুলিতে কম। ইহার ফলে সেই সকল এলাকায় চিকিৎসার সুযোগ সীমিতই রহিয়া গিয়াছে। অতএব পরিকাঠামোর গোড়ায় গলদ থাকিলে বিমার বিস্তার করিয়া স্বাস্থ্যচিত্রে উন্নতি হইবে না। চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগও গুরুত্বপূর্ণ।

বিমার কিছু অন্য সমস্যাও আছে। আউটডোর পরিষেবা বিমার অধীনে নহে। অথচ, দরিদ্রকে তাঁহার চিকিৎসার খরচের বৃহত্তর অংশ মিটাইতে হয় আউটডোর পরিষেবার জন্য, কেবল হাসপাতালের খরচ জুগাইলে চলে না। বিমার অর্থ মিটাইতে সরকারের বিলম্ব হাসপাতালগুলিকে বিমা-বিমুখ করে। অনেকে বিমার অধীনে চিকিৎসা করিতে অস্বীকারও করে। এক শ্রেণির চিকিৎসক ও হাসপাতাল অকারণ অস্ত্রোপচার করিয়া রোগীর বিপন্নতা ও সরকারের ব্যয়, উভয়ই বাড়াইয়া থাকে। এই সকল বিষয়ে সতর্ক থাকিয়াই স্বাস্থ্যবিমার বিস্তার প্রয়োজন। বিনা পয়সায় হাসপাতালে চিকিৎসার সম্ভাবনা রাজ্যবাসীকে স্বস্তি দিবে, সন্দেহ নাই। বিভিন্ন আর্থসামাজিক শ্রেণির মানুষ একই পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত হইলে সেই পরিষেবার উন্নতি ঘটিয়া থাকে। স্বাস্থ্যসাথীর ক্ষেত্রেও তেমন হইতে পারে, তাহার সুযোগ যথেষ্ট। প্রয়োজন, পরিষেবার মানের উপর যথাযথ নজরদারি, তাহার উপযোগিতার মূল্যায়ন, কাহারা বিমার কতটা সুযোগ পাইতেছেন, তাহার নিয়মিত সমীক্ষা।

Swastho Sathi Mamata Banerjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy