প্রতীকী চিত্র।
চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু পরের মাসেই। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা যখন প্রায় দোরগোড়ায়, তখন স্বাভাবিক ভাবেই পরীক্ষার্থীদের মনে চিন্তার মেঘ জমা হচ্ছে। তার মধ্যে প্রথম দিনই রয়েছে মাতৃভাষার পরীক্ষা। রাজ্যে অনেক পড়ুয়ারই মাতৃভাষা বাংলা। তবে মাতৃভাষা হলেও মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় নম্বর বিভাজন কেমন হবে এবং তার থেকে কী ভাবে ভাল ফল করা যাবে, তা অনেকেরই অজানা। এই প্রতিবেদনে সে বিষয়েই বিশদ জানিয়েছেন যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের বাংলার শিক্ষক প্রিয়তোষ বসু।
প্রশ্নের কাঠামো- মাধ্যমিকের বাংলার প্রশ্নপত্রের কাঠামো এখন ছাত্রছাত্রীদের বেশি নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অনুকূল। একটা সময় ছিল, যখন মাধ্যমিকে বাংলায় বিবরণধর্মী প্রশ্নের আধিক্য ছিল। ফলে বেশি নম্বর পাওয়া যথেষ্ট কঠিন ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পাঠক্রম এবং তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রশ্নের পরিবর্তিত ধরন মাধ্যমিকের বাংলায় পড়ুয়াদের নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে। এখন অঙ্ক এবং বিজ্ঞানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাতেও পরীক্ষার্থীরা ভাল নম্বর পায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ ভাবে সাহায্য করে বহু বিকল্পভিত্তিক এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি, যেখানে মোট ৩৬ নম্বর থাকে।
এ ছাড়া, কবিতা এবং গল্প থেকে একটি করে তিন নম্বরের প্রশ্ন থাকে, সাধারণত সেগুলিতে (১+২)-এই অংশ বিভাজন থাকে। কবিতা ও গল্প থেকে রচনাধর্মী পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন থাকে একটি করে। সেগুলিতে অংশ বিভাজন থাকতে পারে, না-ও পারে। প্রবন্ধ থেকেও একটি পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন থাকে, আর নাটক থেকে থাকে একটি চার নম্বরের প্রশ্ন। সহায়ক পাঠ ‘কোনি’ থেকে দু’টি পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। বঙ্গানুবাদে থাকে চার নম্বর। সাধারণত এখানে চারটি বাক্যের বাংলা অনুবাদ করতে হয়। নির্মিতি অংশে প্রতিবেদন বা সংলাপ-এ থাকে পাঁচ, আর প্রবন্ধ রচনায় থাকে ১০ নম্বর। ৯০ নম্বরের এই লিখিত পরীক্ষা ছাড়া বাকি ১০ নম্বর থাকে প্রকল্পে, যেটি স্কুলের তত্ত্বাবধানে পড়ুয়ারা করে থাকে।
সময় মেপে পরীক্ষা- প্রশ্নপত্রেই নির্দেশ দেওয়া থাকে প্রশ্নের ক্রম অনুযায়ী উত্তর করার জন্য। এতে সুবিধা হল, পরীক্ষার্থীরা প্রথমেই এমসিকিউ এবং এসএকিউ-এর উত্তরগুলি করে নিতে পারবে। ফলে এখান থেকে যে সময়টা উদ্বৃত্ত হবে, তা পরে কাজে লাগাতে পারবে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের চলন হল কম নম্বর থেকে বেশি নম্বরের প্রশ্নের দিকে। স্বাভাবিক ভাবেই নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে উত্তর দিলে উদ্বৃত্ত সময় সম্পর্কে ছাত্রদের একটা ধারণা তৈরি হবে, যে সময়টা তারা ব্যয় করতে পারবে রচনাধর্মী প্রশ্ন এবং প্রবন্ধ রচনায়। যদি নির্দিষ্ট ক্রমে উত্তর দেওয়া সম্ভব না-ও হয় সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা একটি প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই এক জায়গায় করবে, তাতে মূল্যায়নের সুবিধা হয়।
যে ভাবে পড়বে- অবশ্যই পড়তে হবে খুঁটিয়ে। যে হেতু এমসিকিউ এবং এসএকিউ থাকে অনেক, তাই মূল পাঠ্যবই পড়াই একমাত্র সমাধান। পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা উক্তিগুলি চিহ্নিত করে রাখতে হবে। পরীক্ষার আগে সেগুলিতেই বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। ব্যাকরণের ক্ষেত্রে বিষয়ের তত্ত্বগত দিক জানার সঙ্গে সঙ্গেই তা যথেষ্ট পরিমাণে অনুশীলন করতে হবে। অবসর সময়ে গল্প, কবিতা কিংবা প্রবন্ধগুলিকে মনে করার চেষ্টা করতে হবে, বিষয়বস্তুগুলিকে চরিত্র বা ঘটনাক্রম অনুসারে মনের মধ্যে সাজাতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য সহায়ক পাঠ ‘কোনি’ উপন্যাসের ক্ষেত্রেও। এই শেষ সময়ে অতিরিক্ত কঠিন প্রশ্নের দিকে না ঝুঁকে মাধ্যমিকের মান অনুসারে অনুশীলনে মন দিতে হবে। প্রস্তুতির জন্য কয়েকটি মক টেস্ট দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত টেস্ট পেপারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এমসিকিউ, এসএকিউ, বিশেষ ভাবে ব্যাকরণের জন্য বোর্ডের টেস্ট পেপারের অন্তত দশটি প্রশ্নপত্র সমাধান করা উচিত।
উল্লিখিত বিষয়গুলি মাথায় রেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে নিশ্চিত ভাবে বাংলাতেও ভাল নম্বর তোলা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy