Advertisement
E-Paper

কী করে বলি কাশ্মীরিরা হিন্দুবিদ্বেষী! ওঁরা তো আমার সঙ্গে ক্ষীরভবানী মন্দিরেও যান: ভাস্বর

মঙ্গলবারের ঘটনায় আসলে গোটাটা ঘেঁটে দেওয়া হল। শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হল সাধারণ সরল কাশ্মীরিদের। রোজগার বন্ধের বন্দোবস্ত করল এক শ্রেণির সুবিধাবাদীরা, যাতে ফের সেখান থেকে কিছু যুবককে তুলে আতঙ্কবাদে জড়িয়ে দেওয়া যায়।

ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:১৭
ভাস্বরের চোখে দেখা কাশ্মীর।

ভাস্বরের চোখে দেখা কাশ্মীর। গ্রাফিক-আনন্দবাজার অনলাইন।

কাশ্মীরের বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি। জেনেছি, ক’দিন আগেও ওখানে হোটেলে ঘর পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার গাইড বন্ধু জানিয়েছিলেন, হাজার টাকার ঘরের জন্য চার হাজার পর্যন্ত ভাড়া দিতে রাজি ছিলেন পর্যটকেরা। সেই ঘরগুলি এখন ফাঁকা হয়ে যাবে। পালাচ্ছেন সকলে। গোটা শ্রীনগর ‘শাট ডাউন’।

গত নভেম্বরে কাশ্মীর ঘুরতে গিয়েছিলাম বন্ধুর বিয়েতে, কী নিশ্চিন্তে কাটিয়েছিলাম ক’টা দিন! হেঁটে হেঁটে গোটা শহরটা দেখছিলাম। কোনও শহরকে চিনতে হলে হেঁটে দেখাই ভাল। ওখানে তো কেউ অভিনেতা হিসেবে আমাকে চেনেন না। তাঁরা নিজেরাই এগিয়ে এসে কথা বলছেন। কলকাতা থেকে এসেছি শুনে সাধারণ মানুষ তাঁদের বাড়িতে খেয়ে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁরা এতটাই অতিথিবৎসল।

কাশ্মীর আমার দ্বিতীয় বাড়ি। কারণ, আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুনে কিংবা দেখে বহু সাধারণ মানুষ সেখানে বেড়াতে গিয়েছেন। জায়গাটা এতটাই নিরাপদ। মঙ্গলবারের ঘটনায় আসলে গোটাটা ঘেঁটে দেওয়া হল। শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হল সাধারণ সরল কাশ্মীরিদের। রোজগার বন্ধের বন্দোবস্ত করা হল, যাতে ফের সেখান থেকে বেকার যুবকদের মগজধোলাই করা যায়। ছড়ানো যায় আতঙ্ক।

এপ্রিল-মে মাসে এখানে ভিড় জমে পর্যটকদের। এই মুহূর্তে ডাল লেক সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় এক লক্ষের বেশি পর্যটক। খবরটা শোনার পর থেকে আমার রাগ হচ্ছে, আবার ওখানকার বন্ধু ও তাঁদের পরিবার নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা পূর্বপরিকল্পিত। ইতিমধ্যেই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন। ঘটনার অভিঘাতে ভেঙে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আমার কিছু বন্ধু আমার কাছে আক্ষেপ করেছেন, তাঁরা আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না। স্থানীয়েরা বলাবলি করছেন একে তো হিন্দু মারল, তার উপর পর্যটক। আমাদের শিরদাঁড়া ভেঙে দিল। এর ফলে বার্তা গেল কাশ্মীরিরা ‘হিন্দুবিরোধী’। এটা অসত্য।

ভাস্বরের কাশ্মীর ভ্রমণের ছবি।

ভাস্বরের কাশ্মীর ভ্রমণের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

আমি জানি, ওঁরা তা নন। আমার কাশ্মীরি বন্ধুরা আমার সঙ্গে ক্ষীরভবানী মন্দিরে, শঙ্করাচার্যের মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছেন। তাঁরা হিন্দুবিদ্বেষী বলি কী ভাবে?

তবে সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। পহেলগাঁও সীমান্ত থেকে অনেকটা দূরে। আমি নিজে চড়ুইভাতি করে এসেছি। সেখানকার স্থানীয়দের সঙ্গে জোট করেই হয়তো জঙ্গিরা আশ্রয় পেয়েছে। না হলে এ ভাবে গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে পারত কি? কোনও না কোনও স্থানীয়ের মদত থাকতেই পারে।

অথচ, শ্রীনগরে আটকে থাকা পর্যটকদের বিমানবন্দর কিংবা রেলস্টেশনে স্থানীয়েরাই পৌঁছে দিচ্ছেন, বিনামূল্যে। আমরা কিন্তু সে সব কথা জানতে পারছি না। ওঁরা আশঙ্কায় রয়েছেন, ফের ওই হিন্দু-মুসলিম বিভাজনটা হয়ে গেল! এতে ওঁদেরই ক্ষতি হল আখেরে।

কাশ্মীরি বন্ধুদের সঙ্গে অভিনেতা।

কাশ্মীরি বন্ধুদের সঙ্গে অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীত।

এ বার যে ঘটনাটা ঘটল তাতে তো আমিও দু’বার ভাবব, ফের কাশ্মীর যাব কি না! ভয় কাজ করবে, যদি কিছু ঘটে যায়, যদি কেউ গুলি করে দেয়! ভয় করছে আমারও। সত্যি বলছি, ইচ্ছে ছিল দুর্গাপুজোয় আবার কাশ্মীর যাব। জানি না, পারব কি না!

কেন্দ্রের উপর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমার মনে হয় এ বার সময় এসেছে। কাশ্মীর থেকে উগ্রপন্থীদের সমূলে উৎপাটিত করা উচিত। যে বা যারা কাশ্মীরের ক্ষতি করছে, তাদের বড়সড় ক্ষতি করা উচিত। দেখিয়ে দেওয়া উচিত আমরা কী করতে পারি!

তবে এ সবের বাইরে, এত কিছুর পরও চাই, কাশ্মীরে সুস্থ জীবন ফিরে আসুক।

Bhaswar Chatterjee Kashmir Attack Tollywood Actor Pahalgam Incident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy